somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্যাপক হিংসার ছক জামাতের

২৮ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দিল্লির চিন্তা বাড়িয়ে নতুন একটি রিপোর্ট বিদেশ মন্ত্রকের হাতে এসেছে। তাতে বলা হয়েছে, ভোটের আগে বাংলাদেশে হিংসা ও নাশকতার বন্যা বইয়ে দেওয়ার তোড়জোড় করছে জামাতে ইসলামি। এ জন্য একটি বিশাল তহবিল গড়া হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, শুধু জামাত-ই নয়, সন্ত্রাস-নাশকতার কাজে তাদের সঙ্গে রয়েছে বাংলাদেশের আনাচেকানাচে গোপনে বেড়ে ওঠা অন্তত ১০৮টি মৌলবাদী জঙ্গি সংগঠন। সাউথ ব্লকের দুশ্চিন্তা আরও বাড়িয়ে, রিপোর্টে এ কথাও বলা হচ্ছে, রাস্তায় লড়ার জন্য কিশোরদের নিয়ে বিশেষ একটি কর্মীবাহিনী গড়া হচ্ছে। এদের মধ্যে বাছাই করা একটি অংশকে ফিদায়েঁ হওয়ার মতো মানসিক প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশে নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক সঙ্কট তীব্র হয়ে ক্রমশ বাড়ছে হিংসার পরিবেশ। আদালত জামাতে ইসলামির রেজিস্ট্রেশন বাতিল করায় তারা নিজেদের প্রতীক নিয়ে ভোটে লড়তে পারবে না। যুদ্ধাপরাধের দায়ে তাদের বহু প্রথম সারির নেতা ফাঁসির আসামি। এর বদলা হিসেবেই তারা হিংসা ছাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে বলে রিপোর্টে বলা হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বক্তব্য, জামাতের পরিকল্পনা কার্যকর হলে এক ধাক্কায় অনুপ্রবেশ বেড়ে যাবে। সেই সঙ্গে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ হয়ে ভারতে সন্ত্রাস আমদানির ঘটনাও বেড়ে যেতে পারে। এর ফলে সব চেয়ে বেশি ধাক্কা লাগবে বাংলাদেশ-সংলগ্ন রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে।
মার্চ মাসে জামাতে ইসলামি যখন প্রথম একক ভাবে ঢাকায় সফল হরতাল করে, চমকে গিয়েছিলেন অনেকেই। তখনই তাদের সাংগঠনিক শক্তি এবং সংহত ক্যাডার বাহিনীর একটা আঁচ পাওয়া গিয়েছিল। জামাতের প্রধান রণকৌশল, পুলিশবাহিনীর ওপর হঠাৎ আক্রমণ ও মারধর করে গ্রেফতার হওয়ার আগেই ভিড়ে মিলিয়ে যাওয়া। সে জন্য টুপি-দাড়ি ছেড়ে জিনস ও টি শার্ট-এ অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে জামাতের ছাত্র শাখা ইসলামি ছাত্র শিবির। রিপোর্ট বলছে, নির্বাচনের আগে এই হামলা আরও বাড়বে। এক বিএনপি নেতাকে উদ্ধৃত করে রিপোর্টে বলা হয়েছে, একটি বাহিনীকে সন্ত্রাস ছড়ানোর বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। নাশকতার সময়ে পুলিশের গুলিতে মারা পড়া কর্মীদের পরিবারকে আর্থিক মদত দিতেও তৈরি জামাত নেতারা।
রিপোর্ট অনুযায়ী, সমগ্র পরিকল্পনাটি রূপায়ণের জন্য বাংলাদেশের শতাধিক বাণিজ্য সংস্থার মাধ্যমে বিপুল অর্থ সংগ্রহ করা হচ্ছে। এর মধ্যে যেমন রয়েছে বেশ কিছু ইসলামি ব্যাঙ্ক, রয়েছে বহু হাসপাতালও। এই হাসপাতালগুলি বকলমে জামাত পরিচালিত। জামাত নেতৃত্ব অবশ্য প্রকাশ্যে বলছে, রাজনৈতিক সভা সমাবেশ করার জন্যই তারা সদস্যদের থেকে চাঁদা তোলে। সেই চাঁদার অঙ্ক মাসে অন্তত দশ কোটি টাকা! তবে কোনও বিদেশি রাষ্ট্রের থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়টি জামাত অস্বীকার করে।
রিপোর্টে বলা হচ্ছে ১৯৮০ সাল থেকেই একটি সুবিশাল বাণিজ্যিক সাম্রাজ্য গড়ে তোলার কাজ শুরু করেছিল জামাতে ইসলামি। জামাতের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও কর্পোরেট সংস্থার সামাজিক দায়বদ্ধতা খাতের বাজেট পুরোটাই খরচ হয় মৌলবাদী সংগঠনগুলির ‘আদর্শগত’ প্রশিক্ষণের জন্য। এই অঙ্কটাও বেশ কয়েক কোটির।
রিপোর্ট কয়েকটি ঠিকানার একটি বিস্তারিত তালিকাও রয়েছে, যেখানে জামাত-সহ ইসলামি সংগঠনগুলির সশস্ত্র কর্মীরা গোপনে আশ্রয় নিচ্ছে। ঢাকা শহরের প্রায় ২৭০টি এমন ঠিকানার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে যাত্রাবাড়ি, মতিঝিল, ধানমন্ডি, মীরপুর ও চকবাজার থানার নানা এলাকা। জামাতের সঙ্গী মোট ১০৮টি ইসলামি সংগঠনের কথা বলা হয়েছে রিপোর্টে, যাদের মধ্যে রয়েছে আফগানি পরিষদ, ইসলামি বিপ্লব পরিষদ, ইসলামি জিহাদ গ্রুপ, জাগ্রত জনতা, মুজাহাদিন তায়েব, রোহিঙ্গিয়া ইসলামিক ফ্রন্ট, রোহিঙ্গিয়া প্যাট্রিয়টিক ফ্রন্ট ইত্যাদি। এদের অনেকগুলিই অত্যন্ত গোপনে সংগঠন বাড়াচ্ছে।





ছিল ৪৮ ঘণ্টা, বাড়িয়ে করা হল ৬০ ঘণ্টা। অর্থাৎ মঙ্গল-বুধবারের পরে বিএনপি-জামাতে ইসলামির অবরোধে বৃহস্পতিবারও বিপর্যস্ত হতে চলেছে বাংলাদেশের জনজীবন। প্রথম দু’দিনে আন্দোলনের নামে রেললাইন ওপড়ানো, গাড়িতে আগুন ও বেপরোয়া বোমাবাজির বলি হয়েছেন ১৫ জন। এঁদের অধিকাংশই সাধারণ মানুষ, রাস্তায় বেরিয়েছিলেন একান্ত প্রয়োজনে।
অনেকেই ভেবেছিলেন, বুধবারটা কাটিয়ে দিলেই এ বারের মতো শান্তি। কিন্তু এ দিন দুপুরেই বিএনপি-র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভি অবরোধের মেয়াদ বাড়ানোর ঘোষণা করে বলেন, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশের বাধা দেওয়ার প্রতিবাদে এই সিদ্ধান্ত। দু’দিনের নাশকতা ও হিংসার ধরনে স্পষ্ট, বিএনপি বড় শরিক হলেও বাংলাদেশ জুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে জামাত ও তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামি ছাত্র শিবিরের কর্মীরা। সঙ্গে তাল দিয়েছেন বিএনপি কর্মীরা। আর তাদের আক্রোশের মূল নিশানায় ছিল রেল। এই দু’দিনে রেলপথের এত জায়গায় জঙ্গি কায়দায় নাশকতা চালানো হয়েছে, গোপনে রেললাইন উপড়ে ট্রেন উল্টে দেওয়া হয়েছে, ভাঙচুর করে ট্রেনের কামরায় আগুন দেওয়া হয়েছে অতীতে কোনও আন্দোলনে এমনটা ঘটেনি। এর ফলে ঢাকা থেকে প্রায় সব রুটের ট্রেন চলাচল বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অন্তত পাঁচটি দূরপাল্লার ট্রেনের ইঞ্জিন বা একাধিক কামরা লাইনচ্যুত হয়েছে। আহত হয়েছেন বহু মানুষ। রেলের এক কর্তার কথায়, ভারতের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় ‘বাংলাদেশ রেল’কে আধুনিক করে তোলার পথে বেশ কয়েক ধাপ এগিয়েছিল এই সরকার। এই জন্যই হয়তো নাশকতার প্রধান নিশানা করা হয়েছে রেলকে। এই কর্তা বলেন, দু’দিনে যে মাত্রার নাশকতা চালানো হয়েছে, তাতে শুধু যে কোটি কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে তা-ই নয়, রেল পরিষেবা স্বাভাবিক হতে বহু সময় লেগে যাবে। দুর্ভোগ পোয়াতে হবে সাধারণ মানুষকেই।

বিএনপি ও জামাতে ইসলামির ডাকা অবরোধ কর্মসূচিতে
ঢাকার রাস্তায় চলছে বাস ভাঙচুর। বুধবার। ছবি: রয়টার্স।
এ দিন রাজধানী ঢাকার পরিস্থিতি অনেকটা শান্ত থাকলেও দেশের বাকি অঞ্চলে ব্যাপক হিংসা ও হানাহানির ঘটনা ঘটেছে। সাতক্ষীরায় জামাতের কর্মীরা বেপরোয়া গুণ্ডামি চালিয়েছে। গাজিপুরে ইউনিয়ন পরিষদের এক সদস্য খুন হয়েছেন। টহলদারি চালানো পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর গাড়ির ওপরও বোমা হামলা চালানো হয়েছে। চট্টগ্রামে অটোরিকশা জ্বালিয়ে দেওয়ায় পুড়ে মারা গিয়েছেন এক আরোহী। মাথায় বোমার আঘাতে ঢাকায় মারা গিয়েছেন ব্যাঙ্ককর্মী এক মহিলা। সব মিলিয়ে আলোচনার আবহাওয়া নষ্ট হয়ে অশান্তি ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশ জুড়ে। এ জন্য একে অপরকে দোষারোপ করছেন সরকার ও বিরোধীপক্ষ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ দিনও বিরোধীদের কাছে অন্তর্বর্তী সরকারে যোগ দেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেন, জামাতে ইসলামি এ বার নিজ দলের পরিচয়ে ভোটে অংশ নিতে পারবে না বলেই নির্বাচন ভেস্তে দেওয়ার ছুতো খুঁজছে বিএনপি।
গত এক মাস ধরে একের পরে এক হরতাল ও অবরোধে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম আকাশ ছুঁয়েছে। মাছ-মাংস বা শাক-সব্জিও বাজারে আসতে পারছে না। ঢাকার এক হোটেল ব্যবসায়ী শিবুকান্তি দাসের কথায়, বিরোধী জোট এ বার হরতাল না ডেকে অবরোধের কর্মসূচি ঘোষণা করায় সাধারণ মানুষ বেশি বিভ্রান্ত। অন্য বার হরতালের মধ্যেও বহু মানুষ ঢাকায় আসেন। কিন্তু এ বার রাজধানী ফাঁকা। অধিকাংশ হোটেলের ঘরও ফাঁকা।
















____
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসলামে পর্দা মানে মার্জিত ও নম্রতা: ভুল বোঝাবুঝি ও বিতর্ক

লিখেছেন মি. বিকেল, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১:১৩



বোরকা পরা বা পর্দা প্রথা শুধুমাত্র ইসলামে আছে এবং এদেরকে একঘরে করে দেওয়া উচিত বিবেচনা করা যাবে না। কারণ পর্দা বা হিজাব, নেকাব ও বোরকা পরার প্রথা শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×