বিরোধী দলের অবরোধের মধ্যে রাজধানীর শাহবাগে বাসে ছোড়া পেট্রোল বোমায় মারা গেছেন এক তরুণ, অগ্নিদগ্ধ হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন ১৭ জন।
Published : 28 Nov 2013, 10:41 PM
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এই নাশকতার পর রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান মাদারীপুরের শিবচরের নাহিদ মোড়ল (১৮)।
দেহের ৫৩ ভাগ পুড়ে যাওয়া নাহিদের মৃত্যুর কথা রাত সোয়া ১১টার দিকে জানিয়েছেন হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল। একই বাসে থাকা তার মামাত ভাই রবিনের দেহের ৫৯ ভাগ পুড়েছে।
ওই বাসের অগ্নিদগ্ধ যাত্রীদের মধ্যে মধ্যে ব্যাংক কর্মকর্তা, সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষার্থী, আইনজীবী, সাংবাদিক, পুলিশ সদস্যও রয়েছেন, যারা সবাই হাসপাতালে ভর্তি।
এর মধ্যে ওই বাসের চালক মো. মাহবুব হোসেন (২৭) এবং আইনজীবী খোদেজা নাসরিনের (৪৫) অবস্থা গুরুতর বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
হরতাল-অবরোধে গাড়িতে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যার জন্য বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের দায়ী করে আসছে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা।
অন্যদিকে শাহবাগের ঘটনার পর এক বিবৃতিতে এজন্য সরকারের ‘এজেন্টদের’ দায়ী করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
নাহিদ মাদারীপুরের শিবচরের মোড়লকান্দি গ্রামের সোহরাওয়ার্দী মোড়লের পাঁচ ছেলের মধ্যে তৃতীয়। তিনি মাদারীপুরের কুতুবপুর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র বলে জানিয়েছেন তার বড় ভাই রাসেল মোড়ল।
ভাইয়ের খবর পেয়ে হাসপাতালে আসা রাসেল সাংবাদিকদের বলেন, “সে শীতের জ্যাকেট কিনতে মামাত ভাই রবিনের সঙ্গে ঢাকায় এসেছিল।”
অবরোধের তৃতীয় দিন সন্ধ্যা ৬টার দিকে মৎস্য ভবনের সামনে মিরপুরগামী বিহঙ্গ পরিবহনের যাত্রীভর্তি বাসটিতে পেট্রোল বোমা ছোড়া হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে।
অগ্নিদগ্ধ বাসযাত্রী রূপালী ব্যাংকের কর্মকর্তা মাসুমা আক্তার (২৫) সাংবাদিকদের বলেন, বাসটি মিরপুরের দিকে যাচ্ছিল। মৎস্য ভবনের কাছে বাসটি আসামাত্র পেছনে আগুন দেখতে পান তারা।
বাসটি আগুন নিয়েই রমনা পার্কের অস্তাচল গেইট পর্যন্ত এসে সড়ক বিভাজকের ওপরে উঠে থেমে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে যাত্রীদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায় বলে শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এম এ জলিল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মারুফ হোসেন সরদার সাংবাদিকদের বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে ওই বাসে একটি শক্তিশালী পেট্রোল বোমা ছোড়া হয়েছিল, যা থেকে এই আগুনের ঘটনা ঘটে।”
অগ্নিদগ্ধ বাসযাত্রীদের মধ্যে দুজন ব্যাংক কর্মকর্তা। রূপালী ব্যাংকের মাসুমা ছাড়া অন্যজন হলেন ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের শফিকুল ইসলাম (৩৭)।
সরকারি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন মৃধা (৪০),আইনজীবী খোদেজা নাসরিন (৪৫),পুলিশ কনস্টেবল নুরুন্নবী (৪৫) দগ্ধ হন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র অহিদুর রহমান বাবু (২৫), একুশে টিভির মুক্তখবর অনুষ্ঠানের শিশু সাংবাদিক সুস্মিতা সেন (১৭) ও তার মা গীতা সেন (৪৫) আহতদের মধ্যে রয়েছেন।
আহত অন্যরা হলেন- বাসচালক মাহবুব,তার সহকারী হাফিজুল ইসলাম,কাঁচামাল ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন, শামীম, রিয়াদ, আব্দুর রাজ্জাক, রাহাজুল ও তালহা।
১৯ জনের বাইরেও ওই বাসের আরো কয়েকজন যাত্রী সামান্য আহত হন। তারা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন।
হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানিয়েছেন, আহতদের মধ্যে দেহের ৫৯ শতাংশ পুড়েছে এমন ব্যক্তিও রয়েছেন, সবচেয়ে কম আহত যিনি তার দেহেরও ১৫ শতাংশ পুড়েছে।
বার্ন ইউনিটের বাইরে অগ্নিদগ্ধ ১৯ জনের নামের তালিকা দেয়া ছিল। পরে একই নাম দুবার দেখা যায়। বিষয়টি জানানো হলে কর্মকর্তারা বলেন, প্রাথমিকভাবে নামে ভুল বা হিসাবে একটু হেরফের হতে পারে।
অবরোধে অগ্নিদগ্ধদের দেখতে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনে মহাসচিব ইকবাল আর্সলান হাসপাতালে যান।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “দগ্ধ অবস্থায় যাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, তাদের মধ্যে অবস্থাদৃষ্টে ৪ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক, যদিও দগ্ধ রোগীদের প্রাথমিকভাবে গুরুতর চিহ্নিত করা কঠিন।”
রাতে হাসপাতালে যান স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকুও। তিনি সাংবাদিকদের বলেন,“এ ধরনের কাজ যারা করে, তাদের মানুষ বলা যায় না, তারা জানোয়ার।”
এসব কাজে যারা জড়িত, তাদের বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে প্রতিমন্ত্রী আশ্বাস দেন।
প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে পুলিশের মহাপরির্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদও ছিলেন।
বিরোধী দলের অবরোধের মধ্যে সারদেশেই গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে, চলছে বোমা বিস্ফোরণও।
রাজধানীতে গাড়িতে অগ্নিসংযোগে দুদিন আগে আহত এক টেম্পুচালক বুধবার মধ্যরাতে মারা গেছেন। হাতবোমায় আহত এক নারীও ওই দিন মারা যান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
বুধবার চানখারপুলে হাতবোমায় নয়জন আহত হয়েছেন, টিকাটুলিতে গাড়িতে ছোড়া বোমায় আহত হন এক বাসচালক।