somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যে কথাগুলো লিখে কোন লাভ নেই

২৯ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আসুন একটা কাজ করি।

একটা ম্যাচের কাঠি জ্বালিয়ে শরীরের এক জায়গায় একটু সময়ের জন্য লাগিয়ে দেই। দেখি, ক্যামন লাগে।

এমন কথা বললে আমাকে পাগল ভাবার যথেষ্ট কারণ আছে। এটা কি কোন কথা হতে পারে, দুনিয়ার এত কাজ থাকতে আমি নিজের গায়ে নিজে আগুন দেব কেন? তাহলে কি অন্যের গায়ে দেব?

এসব আগুন দেবার কথা আর বলতে পারছি না। কিন্তু একটি কথা ভাবছি, আমার মতই কিছু কমবয়েসী ছেলে-পেলে সামান্য কিছু টাকা-পয়সা নিয়ে রাস্তা-ঘাটে ককটেল ফোটাচ্ছে, যাত্রীভর্তি বাসে পেট্রোলবোমা মারছে।

গত পরশু এক ছেলে ককটেল মারার সময় ধরা পড়েছিল। ধরা পড়ার পর সে বলেছে, এক নেতার কাছ থেকে সে ২০০ টাকা নিয়েছে গাড়িতে ককটেল মারার জন্য। পত্রিকার এ খবরটি এসেছিল।



সময়: গতকাল বৃহষ্পতিবার, সন্ধ্যা।
স্থান: শাহবাগ, শিশুপার্কের সামনে।

একটি যাত্রীভর্তি বিহঙ্গ পরিবহনের বাস বেশ দ্রুত গতিতে ছুটে যাচ্ছিল। রাস্তার পাশ থেকে সে যেন একটি পেট্রোলবোমা মারল। গাড়িটি দাউ দাউ করে জ্বলতে শুরু করল মুহূর্তেই। দগ্ধ হল ১৯ জন। একজন মারা গেল। বাকি সবাই আশংকাজনক অবস্থায়।

এটা কি অবরোধ? অবরোধ সম্পর্কে জানতে গিয়ে পেলাম, অত্যাচারী শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যখন দেশের সর্বস্তরের মানুষ ক্ষেপে ওঠে, তখন তারা রাস্তায় নেমে আসে। লাখ-লাখ মানুষ মিলে অবরুদ্ধ করে রাখে অত্যাচারী শাসকগোষ্ঠীকে। থমকে যায় গোটা দেশ। কোথাও তো গাড়িতে পেট্রোলবোমা মারার অনুমতির কথা অবরোধে পেলাম না।

অবরোধ হতে হলে অবশ্যই সাধারণ জনতাকে রাস্তায় থাকতে হবে। কিন্তু, এখানে সাধারণ মানুষ কই? এখানে তো রাস্তায় নামে কিছু চোর-ছিচকে-নেশাখোর টাইপের দরিদ্র ছেলে, ওরা টাকা পেলে সবকিছুই করবে।
তাহলে এ বিষয়ে নিশ্চিত যে, এটা আসলে কোন অবরোধ না।

তাহলে এটা কি আন্দোলন? হরতাল? মহাত্মা গান্ধী আমাদেরকে শিখিয়ে গেছেন, একবিন্দু রক্তপাত না ঘটিয়ে কিভাবে দাবী আদায় করতে হয়। হরতাল হতে হলে অবশ্যই সাধারণ মানুষকে স্বেচ্ছায় দোকান-পাট বন্ধ রাখতে হবে। স্বেচ্ছায় রাস্তায় নামতে হবে। এখানেও কিন্তু গাড়িতে পেট্রোল মারার কোন অনুমতি নেই।

তাহলে? এটা আসলে কোন হরতালও না। তাহলে এটা কোন আন্দোলনও নয়। সোজা কথায়, এটা এক ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড। আমি যদি একজনকে খুন করি, দেশের আইন আমার বিচার করবে। কিন্তু হরতাল এমন একটা উপলক্ষ, যে উপলক্ষে আমি খুন করলেও দেশের আইন আমাকে কিচ্ছু করতে পারবে না।

হরতালে গাড়িতে আগুন লাগিয়ে বা অন্য কোন উপায়ে মানুষ মারা হচ্ছে খুন/হত্যা। আমরা সরাসরি ‘খুন’ কথাটি বলতে ভয় পাই। কিন্তু হচ্ছে আসলে তাই। এই খুনের জন্য খুনির কোন বিচার হয় না।


‘জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে হরতাল পালন করেছে’- সারাদিন জুড়ে ভয়ঙ্কর ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর পর যখন রাজনৈতিক নেতারা এ কথা সংবাদ সম্মেলনে বুক ফুলিয়ে বলেন, তখন লজ্জায় অপমানে মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করে। মনে হয় না, এ পৃথিবীতে আর বেঁচে থাকি।

এ অবস্থার জন্য দায়ী কে? নিঃসন্দেহে ক্ষমতাসীন দল। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তারা যাচ্ছেতাই করে যাচ্ছে।ব্যাপক জনসমর্থন পেয়ে যে দলটি গতবার ক্ষমতায় এসেছিল, সে দলটির কাছে আমরা কেউই এমন আচরণ প্রত্যাশা করিনি।

কুড়িগ্রামে এক মহিলা গতকাল কাঁদছিলেন। গতকাল ছিল তার কিস্তির টাকা পরিশোধের দিন। যথারীতি কিস্তির টাকা নিতে লোক এল। কিন্তু টাকা হাতে ওই মহিলার স্বামী এল না। তার স্বামীর অটোরিক্সা কয়েকটি জানোয়ার পুড়িয়ে দিয়েছে।তার স্বামী হাসপাতালে ছিলেন।

এরকম ঘটে যাওয়া প্রতিটি ঘটনা এতই মর্মস্পর্শী যে, পড়লে চোখের জল ধরে রাখা কষ্টকর হয়ে যায়। যার যায় সেই বোঝে। আপনার আমার পক্ষে বোঝা তো সম্ভব নয়।


‘সারা দেশে রাজনৈতিক সহিংসতায় ১১ মাসে এ নিয়ে প্রাণ হারালেন ৩৪৭ জন। এর মধ্যে শুধু হরতাল এবং অবরোধ কর্মসূচিতেই মারা গেছেন ১৯৬ জন। ২৬ অক্টোবর থেকে গতকাল পর্যন্ত এক মাসে মারা গেছেন ৫৮ জন। হরতালের আগুন, পেট্রলবোমা ও ককটেল বিস্ফোরণে ১৫ শিশুসহ ১০৯ জন আহত হয়েছেন। হতাহতদের বেশির ভাগই সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ।’
(তথ্যসূত্র: প্রথম আলো)


রাস্তা-ঘাটে মানুষ আহত হচ্ছে, নিহত হচ্ছে। প্রশ্ন হল, কেন? মানুষগুলোর কি দোষ। রাজনৈতিক নেতাদেরকে তো কখনওই মরতে দেখি না। এমনকি রাস্তাতে নামতেও দেখি না। রাজনৈতিক কর্মীরাও তো মরেন না। মরে সাধারণ মানুষ। কেন?

ভুল।হ্যা, সাধারণ মানুষ তাদের ভুলের জন্যই মরে। কি ভুল? এই রাজনৈতিক দলগুলো আর তাদের নেতাদের অন্ধভাবে বিশ্বাস করার ভুল।রাজনৈতিক দলদুটোর মধ্যে একটি দল চায় যেকোন ভাবেই হোক, যত কাঠ-খড় পুড়িয়েই হোক, দেশ বিক্রি হলে হবে, প্রয়োজনে আরও একশটা টিকফা’র মত চুক্তি সই হবে- তবুও ক্ষমতায় থাকতে হবে। আরেকটি দল যেকোন ভাবেই হোক ক্ষমতা ফিরে পেতে চায়। দীর্ঘ সাত বছর তারা ক্ষমতার স্বাদ পায় নি। এবার ক্ষমতায় আসতে না পারলে হয়ত তাদের আর অস্তিত্বও থাকবে না।

কথা হচ্ছে, এগুলো আমরা সবাই বুঝি। কিন্তু ঘুরে-ফিরে আবার সেই নৌকা বা ধানের শীষে ভোট দেই। এর সাথে তো নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারার তুলনা করা যায়। নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারা নিঃসন্দেহে একটা ভুল। আর ভুল করলে তার মাশুল তো দিতেই হবে।রাস্তা-ঘাটে মরতেই হবে। দগ্ধ হতেই হবে। কিচ্ছুই করার নেই।


সত্যিই কি একেবারেই কিছু করার নেই? আছে। কিছু তো একটা অবশ্যই করার আছে। আমরা যদি আমাদের ভুলগুলো শুধরে নেই তাহলেই কিন্তু আর ভুলের মাশুল দিতে হবে না। আমরা যদি লোভী-পিশাচদেরকে আর ক্ষমতায় আসতে না দেই, তাহলেই আমাদের এভাবে প্রাণ হারাতে হবে না।আমরা যদি প্রত্যয়দীপ্ত হই, প্রয়োজনে ভোট দেবই না। কিন্তু অযোগ্য কাউকে ভোট দেব না। ভোটের আগের রাতে টাকা নিয়ে কাউকে ভোট দেব না। হয়ত কিছুটা কষ্ট হবে- কিন্তু এভাবে রাস্তা-ঘাটে আর প্রাণ হারাতে হবে না।

আসলে এমন চেতনা জন্মানোর মত মানসিক অবস্থাও আমাদের নেই। আমাদের ছেলেরা তো ২০০ টাকা নিয়ে বাসে ককটেল মারার জন্য বিক্রি হয়। ওই ছেলেকে যদি আমি ২০০০ টাকা দিয়ে বলি এক সপ্তাহ নেশা না করে থাকতে, ও পারবে না। তাই মাঝে মাঝে মনে হয়, আমরা এখনও গণতন্ত্রের উপযুক্ত হয়ে উঠিনি। আইন ভঙ্গ করে আমরা যে স্বর্গীয় শান্তি পাই, অন্য কোন কাজে করে বোধহয় আমরা সেই শান্তি পাই না। আমাদের জন্য বোধহয় গণনন্ত্র না।



তাহলে আর কি বাকি থাকল।
বাকি থাকল এটকাই। সে হল সামরিক শাসন, একনায়কতন্ত্র, সেনাবাহিনী হাতে দেশ ছেড়ে দেয়া।

ভাবতেও পারিনা, এই স্বাধীনদেশে যত্র-তত্র বন্দুক উঁচিয়ে বুটের গট্ গট্ শব্দ তুলে সেনাসদস্য হেটে বেড়াবে। ভাবতেও পারিনা, যা ইচ্ছে তাই বলতে পারব না, লিখতে পারব না, করতে পারব না। সব কিছুই অন্ধকারে ঢেকে যাবে।

কিন্তু এভাবে আর মানুষ মরবে না। অসহায় লোকজনের হাহাকার আর শুনতে ইচ্ছা করে না।

এ সহিংসতা বন্ধ হতেই হবে। তার জন্য যা হয় হোক, আমি মেনে নেব।।



(ই-মেইল: [email protected])
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৫৩
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সচীবদের সম্পর্কে এখন কিছুটা ধারণা পাচ্ছেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ২০ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৭



সামুর ব্লগারদের মাঝে ১ জন সচীব আছেন,(বর্তমানে কর্তব্যরত ) তিনি বর্তমানে লিখছেন; আধামৃত সামুতে তিনি বেশ পাঠক পচ্ছেন; উৎসাহের ব্যাপার! এরচেয়ে আরো উৎসাহের ব্যাপার যে, তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

নারীবাদ, ইসলাম এবং আইয়ামে জাহেলিয়া: ঐতিহাসিক ও আধুনিক প্রেক্ষাপট

লিখেছেন মি. বিকেল, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৪



আইয়ামে জাহিলিয়াত (আরবি: ‏جَاهِلِيَّة‎) একটি ইসলামিক ধারণা যা ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর আবির্ভাবের পূর্ববর্তী আরবের যুগকে বোঝায়। ঐতিহাসিকদের মতে, এই সময়কাল ৬ষ্ঠ থেকে ৭ম শতাব্দী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। VF 3 Mini: মাত্র 60 মিনিটে 27 হাজার বুকিং!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২১ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:০৪



আমার ব্যাক্তিগত গাড়ি নেই কিন্তু কর্মসূত্রে বেঞ্জ , ক্যাডিলাক ইত্যাদি ব্যাবহার করার সুযোগ পেয়েছি । তাতেই আমার সুখ । আজ এই গাড়িটির ছবি দেখেই ভাল লাগলো তাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×