‘সুষ্ঠু পরিবেশ’ নিশ্চিত না হলে জাতীয় পার্টি আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে না জানিয়ে নেতাকর্মীদের ‘সংকেতের জন্য’ তৈরি থাকতে বলেছেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
Published : 29 Nov 2013, 12:16 PM
শুক্রবার রাজধানীর গুলশানে একটি রেস্তোরাঁয় আয়োজিত দলীয় কর্মসূচিতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, “আমরা নির্বাচনের জন্য একশ ভাগ প্রস্তুত আছি। কিন্তু সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকলে নির্বাচন করা সম্ভব হবে না।”
সারা দেশে রাজনৈতিক সহিংসতার মধ্যে নির্বাচনে অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টি প্রার্থীদের ঝুঁকিতে ফেলতে পারে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
এরশাদ বলেন, “সন্ত্রাস হচ্ছে, বোমাবাজি হচ্ছে, মানুষ পুড়ছে। আমি আমার প্রার্থীকে আগুনের মুখে ফেলতে পারি না। তারা আমার সন্তানের মতো।”
নেতাকর্মী ও সম্ভাব্য প্রার্থীদের উদ্দেশে এরশাদ বলেন, “তোমরা আমার নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করবে। জাস্ট ওয়েট ফর মাই সিগন্যাল। আমি যখন বলব, তখনই তোমরা ভোট কেন্দ্রে যাবে।”
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের রাজনৈতিক ও প্রেস সচিব সুনীল শুভ রায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সারাদেশে মোট ১ হাজার ৪৯৮ জন প্রার্থী জাতীয় পার্টির মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। এর মধ্যে প্রাথমিকভাবে বাছাই করা হয়েছিল ৭২৮ জন প্রার্থীকে। এরপর দ্বিতীয় পর্যায়ে ২৯৯ জনকে চূড়ান্ত করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতির প্রতি ‘সম্মান দেখিয়ে’ তার আসন ভৈরবে জাতীয় পার্টি কোনো প্রার্থী রাখেনি বলে সুনীল জানান।
প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে এরশাদ বলেন,‘‘ ভীত হয়ো না। জাতীয় পার্টি নির্বাচন করলে নির্বাচন হবে, নয়তো হবে না। মানুষ দুই দলের কাউকে দেখতে চায় না। তারা আমাকে চায়, জাপাকে চায়, লাঙ্গলকে চায়।
“আমার ওপর ভরসা রাখ। নির্দেশ পাবে, মনোনয়ন দাখিল করবে। নির্দেশ পাবে, ভোট কেন্দ্রে যাবে।”
নির্বাচনকালীন সরকারে যোগ দেয়া জাতীয় পার্টির প্রধান সরকারের উদ্দেশে বলেন, “জনগণ যে ধরনের নির্বাচন চায় সেই পরিবেশ তৈরি করুন। জাতীয় পার্টি অবশ্যই অংশগ্রহণ করবে।”
সুষ্ঠু নির্বাচনের ‘পথ দেখালে’ সবাই নির্বাচনে আসবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
বিরোধী দলের অবরোধ কর্মসূচিতে নাশকতার সমালোচনা করে সাবেক এই রাষ্ট্রপতি বলেন, “এভাবে একটি জাতি বাঁচতে পারে না। ভবিষ্যত প্রজন্ম বাঁচতে পারে না। বোমাবাজি বন্ধ করুন, জ্বালাও পোড়াও বন্ধ করুন, হত্যা খুন প্রতিহত করুন। আমরা আছি।”
নির্বাচন কমিশন ৫ জানুয়ারি ভোটের তারিখ রেখে তফসিল ঘোষণার পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিলেও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনরত বিএনপি ও শরিকরা তফসিল বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছে।
নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক সহিংসতায় ৭১ ঘণ্টার হরতালে সারা দেশে অন্তত ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এরশাদ বলেন, “আমরা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম? প্রতিদিন মানুষ পুড়বে, বাস পুড়বে, রেল লাইন ওপড়ানো হবে... এই জন্য ৩০ লাখ শহীদ জীবন দিয়েছিলেন?”
বিরোধী দলকে নির্বাচনে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “বিগত নির্বাচনগুলোতে আপনার জয়ী হয়েছেন। এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে আপনাদেরও জয়ের সম্ভাবনা ছিল।
“এখনো সময় আছে। নির্বাচনে আসুন। কে সরকার প্রধান থাকল সেটা বড় নয়। বড় কথা হলো মানুষের ভালবাসা। মানুষের ভালবাসা জোয়ারের মতো। ভালবাসার কাছে ক্ষমতা, কারচুপি, ষড়যন্ত্র সব ভেসে যায়।”