somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

২০০০০ স্বপ্ন নিভে গেল ............. :( :( :(

২৯ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আজ নিশ্চয়ই এই খবর টি কম-বেশি সবাই দেখেছেন।
দুটি দশ তলা একটি ছয় তলা ভবনে প্রায় ২০০০০ শ্রমিক কাজ করত। কাল থেকে অনির্দিষ্ট কাল ফ্যাক্টরি বন্ধ, অনেকেই বাক্স-পেঁটরা নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়েছেন, আবার অনেকেই ছবির এই মানুস টির মতো অঝোরে কাঁদছেন, কারন সবার সামনেই এক অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ ..... :( :( :(


সন্তানতুল্য শ্রমিকরাই নিঃস্ব করে দিল
এলাকার গরিব মানুষের জন্য কিছু করার স্বপ্ন নিয়ে প্রকৌশল পেশা ছেড়ে পোশাক ব্যবসায় নামেন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসাইন। নিয়ম মেনেই কারখানা গড়েন, এলাকার গরিবদেরই চাকরি দেন। ‘সন্তানের মতো’ শ্রমিকদের বেতন-ভাতার
বাইরেও দিতেন নানা সুবিধা। সেই শ্রমিকদের দেওয়া আগুনে সর্বস্বান্ত হলেন তিনি। স্রেফ গুজবের আগুনে কারখানাই পুড়ল না, ছাই হয়ে গেল মোশাররফের দীর্ঘদিনের স্বপ্নও।
কোনাবাড়ীর কারখানায় শ্রমিক ছিল ১৮ হাজার ৮০০ জনের মতো। এদেরসহ মোট ২২ কারখানার ৫০ হাজার শ্রমিকের জীবিকার জোগানদাতা স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোশাররফ হোসাইন কান্নাভেজা গলায় কালের কণ্ঠকে বললেন, ‘আমি শ্রমিকদের কখনোই শ্রমিক বা কর্মী বলতাম না। সহকর্মী বলতাম। তাদের বেশির ভাগই আমার এলাকা সিরাজগঞ্জের কাজীপাড়া এলাকার। নিজের সন্তানের মতোই ভালোবাসতাম ওদের। বেতন-ভাতার বাইরেও দিতাম নানা সুবিধা। বহিরাগত সোয়েটার কারখানার শ্রমিকদের ইন্ধন আর গুজবে সন্তানতুল্য শ্রমিকদের দেওয়া আগুনে আমি সর্বস্বান্ত হলাম। এই কষ্ট, এই ব্যথা বোঝানোর নয়। ওপরে আল্লাহ সবই দেখছেন।’
মোশাররফ হোসাইন বলেন, ‘আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি। ১০ কোটি, ৫০ কোটি বা ১০০ কোটি টাকার ক্ষতি হলে আমি তা মেনে নিতে পারতাম। আমার পুরো কম্পানিই ধ্বংস হয়ে গেছে। ছাই হয়ে গেছে আমার ৯০০ কোটি টাকার সম্পদ। আরো ২২টি কারখানা থাকলেও কোনাবাড়ীর কারখানাটিই ছিল সবগুলোর মূল কেন্দ্র। সব কারখানার জন্য আমদানি করা ফেব্রিকসও রাখা হতো কোনাবাড়ীর ওই কারখানা ভবনের গুদামে। আবার বিদেশে রপ্তানির জন্য অন্য কারখানায় তৈরি হওয়া পোশাকও আনা হতো কোনাবাড়ীর কারখানায়। সেই কারখানাটি অঙ্গার করে আমার ব্যবসাই পুরোপুরি পথে বসিয়ে দিল ওরা।’
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে মালিক বলেন, ‘আমার কারখানার আশপাশের সোয়েটার কারখানার শ্রমিকরা কিছুদিন ধরে আন্দোলন করছিল। ওই আন্দোলনে যোগ দেওয়ার জন্য তারা আমার শ্রমিকদের ডাকলেও যায়নি। ফলে বহিরাগত শ্রমিকরা আমার কারখানায় ঢিল মারত। এ অবস্থার মধ্যে আমার শ্রমিকদের ১৫ দিনের ছুটি দিয়ে দিই। দুই দিন আগে আমি কারখানাটি চালু করেছি। কারখানা চালুর দিন আমি নিজে গিয়ে শ্রমিকদের বলেছি, তোমরা মনোযোগ দিয়ে কাজ করো। সরকার যে মজুরি কাঠামো দিয়েছে, সেইমতো ডিসেম্বর থেকে তোমাদের বেতন-ভাতা বাড়াব। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে আশপাশের সোয়েটার কারখানার শ্রমিকরা আবারও আমার কারখানায় ঢিল ছুড়তে থাকে। তখন শিল্প পুলিশ আমার কারখানার ভেতরে ছিল। একপর্যায়ে বহিরাগত শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে উঠলে পুলিশ রাবার বুলেট ছোড়ে। তাতে আমার কারখানার এক শ্রমিক আহত হয়। তাকে প্রথমে থানায় ও পরে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়।’
‘ওই অবস্থায় বিশৃঙ্খলার আশঙ্কায় আমার কারখানার শ্রমিকদের ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। শ্রমিকরা বাড়ি চলে যায়। ওই সময় অন্য সোয়েটার কারখানার শ্রমিকরা হঠাৎ করেই পাশের মসজিদের মাইকে প্রচার চালায়, পুলিশের গুলিতে দুজন শ্রমিক মারা গেছে। এ খবর শুনে আমার কারখানার শ্রমিকরাও উত্তেজিত হয়ে ওঠে। এ সময় শিল্প পুলিশ কারখানার বাইরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনছিল। হঠাৎ করেই কিছু শ্রমিক কারখানায় ঢুকে মূল গেট ভেতর থেকে আটকে দেয়। ফলে পুলিশ আর তখন ভেতরে ঢুকতে পারেনি। শ্রমিকরা প্রথমেই কারখানার নিচে থাকা পোশাকভর্তি ১৮টি কাভার্ড ভ্যানে আগুন দেয়। মুহূর্তের মধ্যেই আমার পুরো কারখানা ভবনটিও আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিল তারা’, ক্রন্দনরত অবস্থায় বলতে থাকেন মোশাররফ হোসাইন।
কারখানার আগুনে যতটা দগ্ধ মালিক, এর চেয়েও বেশি ক্ষতের আশঙ্কা মোশাররফের সামনে। তিনি বলেন, ‘সরকার আমার কারখানা রক্ষা করতে পারল না। আগুনে যে আমার ৯০০ কোটি টাকার ক্ষতি হলো, এই টাকা তো ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া। এখন এই ঋণ পরিশোধ করব কিভাবে? ঋণের সুদই বা দেব কিভাবে? কারখানাটি বীমা করা হলেও এর সুবিধার পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতির তুলনায় নগণ্য। সরকারের কাছে অনুরোধ- ঋণের আসল মাফ না করলেও অন্তত সুদ মাফ করলে আমি কিছুটা রক্ষা পাব। না হলে আমার আর কোনো গতি থাকবে না।’
যে শ্রমিকদের আগুনে কারখানা ছাই হলো, সেই শ্রমিকদের কল্যাণে অনেক কিছুই করার চেষ্টা করেছেন মালিক ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসাইন। তিনি বলেন, কেনো শ্রমিকের স্বজন মারা গেলে তার দাফন-কাফনের খরচ কারখানা বহন করত। গরিব শ্রমিকদের সন্তানদের লেখাপড়ার ব্যবস্থাও ছিল। সব কারখানাতেই মেডিক্যাল সেন্টার আছে। সেখানে ডাক্তার, নার্স, ওষুধ- সবই বিনা মূল্যে দেওয়া হয়। গর্ভবতী শ্রমিকদের চিকিৎসার ব্যবস্থাও আছে। শ্রমিকদের জন্য সব কারখানায় সার্বক্ষণিক অ্যাম্বুল্যান্স মোতায়েন রাখা আছে। প্রতি ঈদেই শ্রমিকদের বোনাস দিই। মাসের প্রথম সপ্তাহেই বেতন দিই।
স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপ ইউরোপ-আমেরিকার বড় বড় ব্র্যান্ডগুলোতে পোশাক রপ্তানি করে জানিয়ে মোশাররফ হোসাইন বলেন, ‘গত বছরও আমার কারখানা থেকে ৩০ কোটি ডলারের বেশি রপ্তানি হয়েছে। শতভাগ কমপ্লায়েন্ট কারখানাগুলোতে কখনোই বেতন-ভাতা বা অন্য কোনো কারণে শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু কোনাবাড়ীতে একসঙ্গে দুটি বড় কারখানা ভবনের মূলটিই অকারণে ছাই করে দেওয়া হলো।


সৌজন্যঃ বাংলা নিউজ ২৪
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪৬
৮টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×