বিরোধী দলের দ্বিতীয় দফার অবরোধে বন্ধ রয়েছে দূরপাল্লার বাস চলাচল।
Published : 30 Nov 2013, 01:20 PM
ট্রেন চললেও বিভিন্ন স্থানে অবরোধকারীদের অবস্থানের কারণে সময়সূচি ধরে রাখতে পারছে না। লঞ্চ ও বিমান চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও যাত্রীর সংখ্যা কম।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে গত সপ্তাহে তিন দিন অবরোধের পর শনিবার সকাল ৬টা থেকে ৭২ ঘণ্টার জন্য একই কর্মসূচি শুরু করেছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দল।
গত অবরোধে সহিংসতায় ২০ জনের প্রাণহানির পর নতুন করে শুরু হওয়া কর্মসূচির প্রথম দিনে দুপুর পর্যন্ত ঝিনাইদহে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের এক কর্মী।
শনিবার অবরোধ শুরুর ঘণ্টা খানেক আগে নয়া পল্টনে বিএনপি কার্যালয় থেকে দলের যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে আটক করে পুলিশ।
এরপর দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর কোনো সড়কে অবরোধকারীদের তৎপরতা চোখে পড়েনি। তবে ‘নাশকতা প্রতিরোধে’ রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের অবস্থান দেখা গেছে।
কলাবাগান এলাকার অবস্থানকারী যুবলীগকর্মী ইউনুস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সড়কে যেন কেউ নাশকতা করতে না পারে এ জন্য আমরা সক্রিয় রয়েছি। কাউকে নাশকতা করতে দেখলে পুলিশে সোপর্দ করা হবে।”
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার আবদুস সালাম জানান, সকাল থেকে বিরোধী দলের কোনো মিছিল বা কোনো গোলযোগের খবর তিনি পাননি।
দূরপাল্লার বাস বন্ধ
রাজধানীর বাস টার্মিনালগুলোতে গিয়ে তা ফাঁকা দেখা যায়। সব বাস টার্মিনালে অলস বসে ছিল। সকাল থেকে রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকায় স্বল্পমাত্রায় গণপরিবহন চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে যাত্রীদের সংখ্যা ছিল অন্যান্য দিনের তুলনায় কিছুটা কম।
সায়েদাবাসে মাহমুদ নামের এক যুবক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অবরোধকারীদের মূল টার্গেট বাস। তাই বাসে চড়তে স্বস্তিবোধ করছি না। রিকসা বা ভ্যানগাড়ি পেলে ভালো হয়। না হয় হেঁটেই যাব।”
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের গাবতলী শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. আলাউদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, গাড়ি চলাচলে সংগঠনের কোনো বিধিনিষেধ নেই। রাস্তায় গাড়ি নামানোর বিষয়টি নির্ভর করছে মালিক ও শ্রমিকদের ইচ্ছার ওপর।
গাবতলীতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে কয়েকটি লোকাল বাস চলাচল করছে। বড় চেয়ার কোচগুলো সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে।
গাড়ি না পেয়ে আমিনবাজার থেকে গাবতলী পর্যন্ত হেঁটে এসেছেন জালাল মিয়া। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তার গন্তব্য মতিঝিল যেতে বাসে না উঠে উপায় নেই।
গাবতলীতে বাসের অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায় তাকে।
মহাখালী বাস মালিক সমিতির দপ্তর সম্পাদক মো. তরিকুল ইসলাম জানান, অবরোধে মাহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে দূর পাল্লার কোনো বাস ছাড়েনি।
ঢাকার বাইরে বিভিন্ন স্থানে মহাসড়কে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা মহাসড়কে অবস্থান নেয়। এতে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষও বাঁধে।
ট্রেনে সময়সূচিতে বিপর্যয়
অবরোধের সকালেই চট্টগ্রামের এ কে খান মোড় এলাকায় রেল লাইনে অবরোধকারীরা অবস্থান নিলে বন্দর নগরীর সঙ্গে ঢাকা ও সিলেটের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এর ফলে কয়েকটি ট্রেন আটকে যায়। তিন ঘণ্টা পর পুলিশ অবরোধকারীদের সরিয়ে দিলে ট্রেন চলাচল শুরু হয়।
গত অবরোধে ঈশ্বরদীতে ট্রেনে আগুন দেয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে লাইন উপড়ে ফেলায় দুর্ঘটনায় পড়ে বেশ কয়েকটি ট্রেন। তবে শনিবার দুপুর পর্যন্ত এই ধরনের কোনো ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
সকালে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনগুলো নির্ধরিত সময়ের চেয়ে দুই থেকে তিন ঘণ্টা দেরিতে কমলাপুর পৌঁছে।
কমলাপুর রেল স্টেশনের ব্যবস্থাপক মো. খায়রুল বশীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, উত্তরবঙ্গের ট্রেন একতা, রংপুর এক্সপ্রেস ঠিক সময়ে স্টেশনে আসেনি।
চট্টগ্রামের তূর্ণা নিশিথা সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছানোর কথা থাকলেও তা সাড়ে ৯টায় স্টেশনে আসে।
সকালেই এসব ট্রেন আবার ঢাকা ছাড়ার কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। বিকালের দিকে এসব ট্রেন ছাড়ার আসা করছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে সকালেই চট্টগ্রাম, চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে রেললাইন অবরোধের খবর পাওয়া গেছে।
কমলাপুর স্টেশনে চট্টগ্রামগামী যাত্রী নুরুল হাসনাত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, অবরোধের কারণে যাত্রীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক
এদিকে ঢাকার সদরঘাটে লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
সদর ঘাটে বিআইডিব্লিউটিসির ট্রাফিক পরিদর্শক মো. সোলায়মান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের উদ্দেশ্যে সকালে তিনটি লঞ্চ ছেড়ে গেছে। আর ৪৩টি লঞ্চ ভোরে সদরঘাটে ভিড়েছে।