somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোটগল্প - কবিতায় হ্যালো ...

৩১ শে মে, ২০১৩ রাত ১০:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ কবিতা লিখা হবে । উপাদান হিসেবে লাগবে --

(১) ঝনঝনে রুপোলী জোছনা ( এই জোছনা যখন ঝড়ে পড়ে তখন ঝনঝন শব্দ হয় )

(২)কালো কালির বলপেন

(৩) ধবধবে সাদা এক দিস্তা কাগজ

(৪) ফ্লাক্স ভরা চা ( দুধ চা , কৌটার ) এবং

(৫) মোবাইলে ঈশিতাকে কানেক্ট করা


১ নাম্বার শর্ত পূরণ হয়েছে । আজ দুনিয়া উপচানো জোছনা । এই জোছনায় নির্দ্বিধায় বিদ্যুৎ বিভাগ নাকে সরিষা ক্ষেত বুনে ঘুম দিতে পারে । আজ রাতে বিদ্যুতের প্রয়োজন নেই । আজ প্রয়োজন নীরবতার ।

পকেটে টাকা না থাকা সর্তেও দুই এবং তিন নাম্বার শর্তও পূরণ হয়ে গেছে । গলির শেষ মাথায়‘ তারিক জেনারেল স্টোর ‘ থেকে কাগজ বলপেন জোগাড় হয়েছে । তারিক মামা বাকিতে দিয়েছেন ।সেইসাথে চাপাতা আর একটা ডেনিশের কৌটাও দিয়েছেন । ফ্লাক্স ভরা চাইয়ের মুখে লাগাম পড়িয়ে টেবিলের উপর রাখলাম ।

এখন রইল বাকি এক । পাঁচ নাম্বার পয়েন্ট । সেই পাঁচ এখন পুরো পরিকল্পনা ভেস্তে দিচ্ছে । ঈশিতাকে মোবাইলে পাওয়া যাচ্ছে না । তার ফোন সুইচ অফ। এইটাই স্বাভাবিক । তার এখন এইচএসসি পরীক্ষা চলছে । এই সময়ে আকিব নিজেই তাকে ফোন সুইচ অফ করে বেশুমার পড়াশুনা করতে বলেছে । ফোন খোলা পেলেই কেবল কথা বলতে ইচ্ছা করে । মনে হয় জাস্ট ২ মিনিট । ফোন করে শুধুমাত্র জিজ্ঞাস করবো - ঈশ , কেমন আছো তাড়াতাড়ি বোলো
ঈশিতা বলবে – ঈশ ভালো আছে ।
আমি বলবো – কি করছো তাড়াতাড়ি বোলো
ঈশ বলবে – জারন বিজারন পড়ছি । আর তখনই তার এক্সামের কথা মনে হবে । সে খট করে ফোন কেটে দিবে। মামলা ডিসমিস ।

কিন্তু সমস্যা হল এতো সহজে মামলা ডিসমিস হয় না । মামলা হাত পা গজিয়ে ‘ ট্রান্সফর্মার ‘ মুভির মতো দানব হয়ে উঠে ।
- ঈশ কি করো তাড়াতাড়ি বোলো ?
- ঈশ অস্থির , সে পায়চারী করছিলাম । তুমি এতো দেরীতে ফোন দিলা কেন ?

ব্যাস – মামলা হাত ছাড়া হয়ে গেল মাননীয় আদালত । এইবার কথা চলতে থাকবে । ফিসফিসে কথা গুটিসুটি হয়ে পথ পাড়ি দেয় । একসময় সে পূর্ব দিক থেকে লাল একটাসূর্যকে টেনে বসিয়ে দেয় আর’কে মিশন রোডের খোলা মাঠে ।

কিন্তু না । এইভাবে সূর্য টানাটানি করলে এই মেয়ের আর জিন্দিগিতে এইচএসসি পাশ করা হবে না । একরাতে আম দিয়ে ডাল খেয়ে তাদের সন্তান বলবে --
বাবা – সব দোষ তোমার !
আকিব আমের আঁঠি চুষতে চুষতে বলবে – ‘ আমি আবার কি করলাম ! ‘
তাদের সন্তান বলবে - আমার মাকে কেন তুমি পরীক্ষায় ফোন দিয়েছিলে ? মা সারারাত ফোনে কথা বলতো তাই এক্সামের আগে পড়াশুনা করতে পারে নাই । এইচএসসিতে মারলো গোল্ডেন ডাব্বা । তুমি কি জানো জুনায়েদের মা ঐ যে ঐ বদরাগী মহিলাটা DU থেকে বোটানিতে এম এ ! আর তোমার জন্য আম্মা আজ আন্ডার ইন্টার ! ভাবা যায় ? সব দোষ তোমার !

গুরুতর অপবাদ ! সন্তানের কাছে এতো কঠিন অপবাদের মুখোমুখি আকিব হতে চায় না । এর চেয়ে রাতে ফোন না করলেই হল । আদালত খুশি । মামলা এনডিং ।

সমস্যা হয়েছে আজকে । আজ আকিবের কবিতা লিখতে ইচ্ছা করছে । ইচ্ছার পরিমান ভয়াবহ । তার ইচ্ছা পুরনের জন্য আজ জোছনা পুড়িয়ে দিচ্ছে লোকালয় । কঞ্জুস তারিক মামা বিনা মেঘে ঘূর্ণিঝড়ের মতো বাকিতে বলপেন কাগজ চাপাতা ডেনিশের কৌটা সাথে মোবাইলের কার্ড দিয়ে দিছে ! এখন শুধুমাত্র ঈশিতার জন্য সব সিস্টেম আটকা !

কথা হচ্ছে , কেন রে ভাই ... কবিতা লিখতে ঈশিতা লাগবে কেন ? সে কি তোমাকে লাইন বলে দিবে নাকি ছন্দ ধরে দিবে ?
না , ঈশ এর কোনটাই করবে না । ঈশিতা ফোনের অপরপ্রান্তে কিছুক্ষন পর ভারী নিঃশ্বাস ছেড়ে কেবলমাত্র জানান দিবে সে আছে । আকিবের পাশে ঈশ আছে । এইটুকুই ।
ঈশিতা ছাড়া আকিব কবিতা লিখতে অনেক চেষ্টা করেছে । নো ফয়দা ! আকিব পারে না । এইটা আইনেস্টাইন সাহেবের ভর – শক্তি সমীকরণের মতোই সত্য । ফোনের এক প্রান্তে অবশ্যই ঈশিতাকে থাকতেই হবে । তার ভারী নিঃশ্বাসে শব্দ আকিব এই প্রান্ত থেকে অনুভব করেই হবে আর এইভাবেই সাদা কাগজ ভর্তি কবিতা ফুটে উঠবে ।


রাত গভীর থেকে আরও গভীরে ডুকে যাচ্ছে । আকিব আর’কে মিশন রোডের খোলা মাঠে বসে আছে । তার ডান দিকে একটু দূরে মাঠের দক্ষিন পার্শে বসে আছে জ্বলজ্বলে চোখ নিয়ে এক কুকুর । সেও কি কাউকে আশা করছে , আকিবের মতো ?

ছাপ্পান বার ফোন ডায়াল করা হয়েছে । ঈশিতার ফোন সুইচ অফ । স্বাভাবিক , ছাপ্পান কোটি বার ফোন দিলেও ফোন সুইচ অফ পাওয়া যাবে । একসময় মোবাইলের চার্জ ই শেষ হয়ে যাবে । ঈশিতাকে কানেক্ট করা যাবে না ।

আকিব মাথার পিছনে হাত রেখে খোলা মাঠে শুয়ে পড়লো । ফ্যাক্সে চা আছে । খেতে ইচ্ছা করছে না । এমনকি এমন ঝনঝনিয়ে ঝড়ে পড়া জোছনাও ভালো লাগছে না । ঝনঝন শব্দ এখন মগজে আঘাত করছে । দ্রিম দ্রিম দ্রিম । যেন বলছে – ‘ ঈশ ফোন ধরো ... দ্রিম ... ঈশ ফোন ধরছো না কেন ... দ্রিম ... দ্রিম ... ঈশ ... ‘
বিরক্তি লাগছে চারিদিকে এতো বিরক্তি কেন ?


আকিব সাদা কাগজ কুটি কুটি করে ছিঁড়ছে । কুটি কুটি করা কাগজ গুলো সে জোছনার দিকে ছুড়ে দিবে । একটা ভয়াবহ সংঘর্ষ হোক । ভেঙ্গে পড়ুক ঐ চাঁদ ! চাঁদ ভাঙ্গার শব্দে ঈশিতার ঘুম ভেঙ্গে যাবে । সে ভয় পেয়ে ফোন সুইচ অন করবে , আকিবকে ফোন করবে । আকিবের এখন আর কবিতা লিখবার ইচ্ছা নেই । একবার মাত্র ঈশিতার একটুখানি কথা শুনতে পাবার ইচ্ছা । আকিব ছেঁড়া কাগজের টুকরো দু হাত ভরে নিল ।

ডান পাশে ঝিমানো কুকুরটা দেখলো - মাঠের মাঝখানে দাড়িয়ে এক যুবক আসমানের দিকে সাদা মুক্তোর মতো কিছু জিনিস ছুড়ে দিল । একটা যান্ত্রিক শব্দ তার কানে আসচ্ছে । ছোট ঐ যন্ত্র থেকে । যন্ত্রটাকে মোবাইল বলে । যন্ত্রটা জ্বলছে । নিভছে ।

হ্যালো ...



সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০১৩ রাত ১০:২৩
৭টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×