বিরোধীদলের দ্বিতীয় দফা অবরোধেও দেশের বিভিন্ন স্থানে রেলপথজুড়ে নাশকতা অব্যাহত রয়েছে।
Published : 01 Dec 2013, 08:05 AM
ফিসপ্লেট খুলে ফেলায় রাজশাহীর চারঘাটে ধূমকেতু এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হয়ে শনিবার গভীর রাত থেকে ঢাকা ও খুলনার সঙ্গে রাজশাহীর ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
ফিসপ্লেট খুলে ফেলায় খুলনা-গোয়ালন্দ পথে ট্রেন বন্ধ থাকে চার ঘণ্টা। দুর্ঘটনার জন্য অল্পের জন্য রক্ষা পায় গোয়ালন্দ ঘাটগামী নকশীকাঁথা ট্রেন।
নাটোরের নলডাঙ্গা স্টেশনে উত্তরা এক্সপ্রেসে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগানোর চেষ্টা করে অবরোধকারীরা।
চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলায় ফিসপ্লেট খুলে ফেলায় ‘মেঘনা এক্সপ্রেস’ পথে আটকে থাকে প্রায় দুই ঘণ্টা। চট্টগ্রামে অবরোধকারীদের বাধায় চট্টলা এক্সপ্রেস্কে ঘণ্টার বেশি সময় বিলম্বিত হয়।
রাজশাহী
রাজশাহী রেল পুলিশের ওসি আলমগীর হোসেন জানান, শনিবার মধ্যরাতে চারঘাট উপজেলার সারদা ও নন্দনগাছি স্টেশনের মাঝামাঝি এলাকায় চারঘাটের সলুয়া জোকুয়ার বিলের মধ্যে লাইনের ফিসপ্লেট ও নাট খুলে রেখে যায় অবরোধকারীরা।
দুই ঘণ্টা দেরিতে রাজশাহী থেকে ঢাকার উদ্যেশ্যে ছেড়ে যাওয়া ধূমকেতু এক্সপ্রেস শনিবার রাত দেড়টার দিকে ওই এলাকায় পৌঁছালে ইঞ্জিনসহ পাঁচটি বগি লাইনচ্যুত হয় বলে রাজশাহী স্টেশনের ব্যবস্থাপক রেজাউল করিম জানান।
এ ঘটনায় কেউ হতাহত না হলেও ঢাকা ও খুলনাসহ উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে রাজশাহীর রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
খবর পেয়ে পুলিশ রাতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। সকাল থেকে লাইনচ্যুত ইঞ্জিন ও বগিগুলো উদ্ধারে কাজ শুরু হয় বলে রেল পুলিশের ওসি জানান।
ব্যবস্থাপক রেজাউল করিম বলেন, লাইন মেরামত করে ট্রেন যোগাযোগ স্বাভাবিক হতে রোববার রাত হয়ে যেতে পারে।
তিনি জানান, শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে রাত পৌনে ১২টা পর্যন্ত অবরোধকারীরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনের পাশে অন্তত তিনবার গাছের গুঁড়ি ফেলে ট্রেন চলাচলে বিঘ্নিত ঘটায়। জিআরপি পুলিশ গিয়ে গাছের গুঁড়ি সরিয়ে ফেলে। এ কারণেই ধমকেতু দুই ঘণ্টা বিলম্বিত হয়।
গভীর রাতে ধূমকেতু লাইনচ্যুত হওয়ায় রাতভর নিরাপত্তাহীনতায় কাটাতে হয় যাত্রীদের।
শামিউল ইসলাম নামের এক যাত্রী রাতে টেলিফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই ঘটনা ন্যাক্কারজনক। যারা এ ধরনের কাজ করছে তারা আর যাই হোক দেশের মঙ্গল চায় না। এতো রাতে যাত্রীরা ট্রেন ছেড়ে কোথাও যেতেও পারছে না। সবাই আশঙ্কার মধ্যে রয়েছে।”
লাইন বন্ধ থাকায় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা রাজশাহীগামী পদ্মা এক্সপ্রেস নন্দনগাছি স্টেশনে আটকা পড়ে। পরে সকালে রাজশাহী থেকে ঢাকার উদ্যেশ্যে ছেড়ে যাওয়া সিল্কসিটির যাত্রীদের পদ্মায় করে ঢাকা পাঠানো হয়।
আর পদ্মার যাত্রীদের দুর্ঘটনা কবলিত ধূমকেতুর সচল বগিগুলোতে করে অন্য একটি ইঞ্জিন দিয়ে রাজশাহী স্টেশনে নেয়া হয়।
রাজবাড়ী
রেল লাইনের ফিসপ্লেট খুলে ফেলায় রাজবাড়ীতে অল্পের জন্য দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে গেছে নকশীকাঁথা ট্রেন।
রাজবাড়ী রেল স্টেশনের মাস্টার হযরত আলী জানান, রোববার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কালুখালী স্টেশনের দুই কিলোমিটার পশ্চিমে তফাদিয়া এলাকায় অবরোধকারীরা রেল লাইনের ফিসপ্লেটের চারটি ‘জয়েন্ট নাট’ খুলে রেখে যায়।
‘ট্রলি কারে’ দায়িত্বরত রেলকর্মীরা বিষয়টি দেখতে পেয়ে কর্তৃপক্ষকে জানালে দ্রুত লাইন আটকে মেরামত করা হয়।
মেরামত শেষে দেড় ঘণ্টা পর খুলনা-গোয়ালন্দঘাট পথে আবার ট্রেন চলাচল শুরু হয় বলে স্টেশন মাস্টার জানান।
“গোয়ালন্দ ঘাটগামী ২৫ নম্বর আপ নকশীকাঁথা ট্রেনটি ওই সময়ে যাওয়ার কথা ছিল। আগে থেকে ফিসপ্লেট খোলা দেখতে পাওয়ায় কয়েকশ যাত্রীসহ ট্রেনটি দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায়।
হযরত আলী বলেন, রেলপথের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সার্বক্ষণিক একজন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
নাটোর
রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নাটোরের নলডাঙ্গা স্টেশনে উত্তরা এক্সপ্রেস ট্রেনে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেয়ার চেষ্টা করে অবরোধকারীরা।
তবে এ সময় পুলিশ ও জনতা ধাওয়া দিলে ‘দুর্বৃত্তরা’ পালিয়ে যায় বলে শান্তাহার রেল পুলিশের পরিদর্শক শরিফুল ইসলাম জানান।
তিনি বলেন, “আগুন লাগানোর সময় পুলিশ দেখে ফেলায় ট্রেনটি রক্ষা পেয়েছে। পরে ট্রেনটি নিরাপদে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে।”
চাঁদপুর
চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার নাউরীতে অবরোধকারীরা রেললাইনের ফিসপ্লেট খুলে ফেলায় চাঁদপুর থেকে চট্টগ্রামগামী ‘মেঘনা এক্সপ্রেস’ পথে আটকা পড়ে।
চাঁদপুরের স্টেশন মাস্টার মারুফ হোসেন জানান, ভোর সাড়ে ৬টার দিকে অবরোধকারীরা লাইনের ফিসপ্লেট খুলে ফেলে।
ফলে চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
মেরামত শেষে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আবার ট্রেন চলাচল শুরু হয় বলে জানান তিনি।
চট্টগ্রাম
বন্দরনগরীতে অবরোধ ও হরতালের মধ্যে রোববার সকালে বিএনপিকর্মীদের বাধায় চট্টগ্রামের সঙ্গে ঢাকা ও সিলেটের ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়।
সকাল পৌনে ১০টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর একে খান রেল গেইটে অবস্থান নিয়ে অবরোধকারীরা লাইনের পাশে আগুন ধরায় এবং হাতবোমা ফাটায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
চট্টগ্রাম রেল স্টেশনের ব্যবস্থাপক শামসুল আলম জানান, অবরোধ ও হরতালে বাধার কারণে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে ঢাকাগামী চট্টলা এক্সপ্রেস পাহাড়তলী স্টেশনে আটকা পড়ে।
পরে অবরোধকারীরা সরে গেলে ১১টার দিকে চট্টলা এক্সপ্রেস গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় বলে শামসুল আলম জানান।
জ্যেষ্ঠ নেতাদের বিরুদ্ধে নাশকতায় উস্কানির মামলা হওয়ায় শনিবার সকাল থেকে ৭২ ঘণ্টার এই অবরোধ করছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল।
এর আগে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে গত ২৬ নভেম্বর থেকে ৭১ ঘণ্টার অবরোধ করে বিরোধী দল, যাতে রেলপথজুড়ে ব্যাপক নাশকতা চালানো হয়।
ওই তিনদিনে বিভিন্ন স্থানে রেললাইন উপড়ে ফেলা এবং ট্রেনে আগুন দেয়ার ঘটনায় রেলওয়ের অন্তত ৬ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক জানিয়েছেন।