somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গণতন্ত্র ও মানুষের ইজ্জত

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ একটি জাতীয় দৈনিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে ঢাকা বারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট ইকবাল হোসেনকে গ্রেফতারের সময়ের একটি ছবি ছাপা হয়। ছবিতে দেখা যায় বেচারা ইকবালের ঘাড়ে ও জামার কলার ধরে চূড়ান্ত অপমান অপদস্থ অবস্থায় ডিবি পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এরপরের ঘটনা আরো কতদূর গড়িয়েছে তা ছবি দেখে জানা সম্ভব হয় নি। তবে স্বাভাবিকভাবেই অনুমান করা যায় যে এ সময় গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ থেকে লাথি, কিল, ঘুষি এবং লেখার অযোগ্য ভাষা প্রয়োগও বাদ যাওয়ার কথা নয়। কারণ বিভিন্ন গণমাধ্যমের কল্যাণে আমরা ঘরে বসে প্রায়ই দেখি এমন ঘটনাগুলোর সময় কি কি ঘটে থাকে। এ ক্ষেত্রে ইকবাল হোসেনের ক্ষেত্রেও অনুরূপ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হওয়াটা খুবই মামুলি ব্যাপার। বিশেষ করে যখন ভোর রাতে প্রধান গেট বাদ দিয়ে পেছন পথ দিয়ে অভিযান চালানো হয়েছে। আর বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভীকে তো ঘুম থেকে তুলে লুঙ্গি পরিহিত অবস্থায় ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সামান্য ছড়িটা পর্যন্ত সাথে করে নিয়ে যেতে দেওয়া হয়নি যা ছাড়া বর্ষীয়ান এই নেতার হাঁটা চলা কঠিন হয়ে পড়ে। একইভাবে অনুরূপ ব্যবহার কিন্তু বিএনপি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায়ও এই পুলিশ নামক ব্যক্তিদেরকে দিয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে অনেক মন্ত্রী, নারী নেত্রী, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের হেনস্থা, অপমান-অপদস্থ, মারপিট করা হয়েছে। বর্তমানে সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে মাত্র।
এসব ঘটনা ঘটার সময় রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, এমপি, বিচারপতি, সংসদের হুইপ, স্পিকার, আইনজীবী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, ব্যবসায়ী- বিশেষ করে যারা সাবেক হয়ে যান তারা কেউই বাদ যান না। অথচ এই মানুষগুলোই আমাদের সমাজে সম্মানিত ব্যক্তি। সাধারণত তাদেরকে অপমান করার কথা আমরা ঘুণাক্ষরেও কল্পনা করতে পারি না। কিন্তু এরাই যখন গণতন্ত্রের বেঁধে দেওয়া নিময় অনুযায়ী বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দাবী-দাওয়া নিয়ে রাস্তায় নামেন তখন তারা এইরূপ যেনতেন ব্যবহার পেয়ে থাকেন। শ্রদ্ধার উপযুক্ত এই ব্যক্তিগণকে লাঠিপেটা, লাথি, কিল, ঘুষি, বুটের পায়ের পায়ের তলায় পিষাণো থেকে শুরু করে বিভিন্ন অশ্লীল গালাগালি করা হয়।

সম্মানিত ব্যক্তিদের প্রতি এই অযাচিত আচরণ কিন্তু এখন আর রাজপথে সীমাবদ্ধ থাকছে না। এর প্রতিক্রিয়া রাজপথ ছাড়াও ঘরে-বাইরে, অফিস- আদালতে ও সমাজের অন্যান্য অঙ্গন ছেয়ে গেছে। ফলে ধীরে ধীরে সমাজের মানুষের মধ্য থেকে একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা, ভক্তি, বিনয়, লজ্জা-শরমবোধ ইত্যাদি স্বাভাবিক মানবীয় গুণগুলো উধাও হয়ে গেছে। তাই সমাজে ছাত্র শিক্ষকের সামনে বেয়াদবি করে, সন্তান পিতা-মাতার অবাধ্য হয়, স্ত্রী স্বামীকে মান্য করে না, বড়কর্তা অধীনস্ত কর্মচারীদেরকে মনে করে দাসানুদাস আর শ্রমিকের চোখে মালিক হচ্ছেন অমানুষ, মালিক শ্রমিকদেরকে সঠিক মজুরি হতে বঞ্চিত করেন আর শ্রমিকরাও সুযোগ পেলেই কাজে ফাঁকি দেয়, মালিকের ক্ষতি করে, এমন কি সা¤প্রতিক স্ট্যান্ডার্ড গ্র“পের ন্যায় আগুন দিয়ে কারখানা জ্বালিয়ে দেওয়ার মত ঘটনা অহরহই ঘটে থাকে। অন্যদিকে সরকারের চোখে জনতা বিশ্বাসঘাতক, অকৃতজ্ঞ, বেঈমান আর জনতার কাছে সরকার শত্র“ -এই সম্পর্ক চলতে থাকে একে অপরের । কেউই কাউকে বিশ্বাস করে না।

আমাদের সমাজে আজকে এই যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে এর জন্য দায়ী কে? এক কথায় এর উত্তর হবে যে ব্যবস্থা আমাদেরকে যার যা ইচ্ছা করার স্বাধীনতা দিয়েছে, যার যা বলার অধিকার দিয়েছে সে জীবনব্যবস্থা, অর্থাৎ গণতন্ত্র। এই গণতন্ত্রের চর্চা মানবজীবনের দৈহিক ও আত্মার ভারসাম্য নষ্ট করে ফেলেছে। এই গণতন্ত্র আমাদেরকে জীবনের একমাত্র লক্ষ্য নির্ধারণ করে দিয়েছে অর্থ উপার্জন অতঃপর ভোগ। সেই উপার্জন বৈধ পথে না অবৈধ পথে তা বিবেচ্য বিষয় নয়। তাদের একটা অংশ অন্যায়ভাবে অর্থ উপার্জন করে বিশাল ধন-স¤পদের পাহাড় গড়ছে এবং এর ফলস্বরূপ বাকী সংখ্যাগরিষ্ঠ জনতা জীবন অতিবাহিত করছে বঞ্চিত, নিগৃহীত, নিষ্পেষিত ও নিঃস্ব হয়ে। তাদের শতকরা অনুপাতটা- ১: ৯৯. বাকি ৯৯ শতাংশ মানুষের মধ্যে থেকে কিছু মানুষ ফুঁসে উঠে বিক্ষোভ, অবরোধ, হরতাল, দাঙ্গা ইত্যাদি শুরু করে। এ সমস্ত কর্মকাণ্ড নিবৃত্ত করতে আবার রাষ্ট্র কর্তৃক শক্তি প্রয়োগ শুরু হয়। এই অবস্থায় মানুষের ন্যূনতম মান-সম্মান, ইজ্জত, আব্র“ অবশিষ্ট থাকে না। তখন এর আওতা থেকে কেউ রেহাই পায় না। কি নারী, কি পুরুষ, কি বয়োজেষ্ঠ-সবাই এই অসম্মানের মুখোমুখি হয়। কিন্তু তব্ওু এই গণতন্ত্রই যেন আমাদের ভালো করে পেয়ে বসেছে। এটাকে আমরা কিছুতেই ছাড়তে চাই না। এর সাথেই আষ্টে-পৃষ্ঠে আমরা ডুবতে চাই চূড়ান্তভাবে!
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×