somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

" না " ভোটের অধিকার চাই

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত ২৭ সেপ্টেম্বর - শুক্রবার, প্রায় চার বছর ধরে ঝুলে থাকার পর ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট একটি যুগান্তকারী রায় দিয়েছে। ওই রায়ের মাধ্যমে নির্বাচনে প্রার্থী প্রত্যাখ্যান করার ভোটারদের ক্ষমতাকে প্রতিষ্ঠিত করে ‘না ভোট’কে ব্যালট এবং ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) যুক্ত করে আগামী নির্বাচন থেকে এ রায় কার্যকর করতে বলা হয়েছে। ইতিপূর্বে ২০০৯ সালে পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টি (পিইউসিএল) নামের এক এনজিওর জনস্বার্থে করা মামলাটি দিল্লি হাইকোর্ট সুপ্রিম কোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চে পাঠায়। অবশেষে ভারতের প্রধান বিচারপতি পি সত্যসিভামের নেতৃত্বে বিচারপতি প্রকাশ দেসাই ও বিচারপতি রঞ্জন গোরাই এই রায় দেয়। রায় প্রদানকালে বেঞ্চ বলেছে, একটি নির্বাচনী এলাকার ভোটারদের অধিকার রয়েছে তাঁর এলাকার কোনো প্রার্থী পছন্দ না হলে ‘না ভোটের’ মাধ্যমে সবাইকে প্রত্যাখ্যান করার। একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনকে ব্যালট পেপারে অথবা ইভিএমের শেষের অংশে ও বোতামে রাখতে হবে ‘ওপরের কাউকে নয়’ ভোটারদের জন্য বিকল্প।
এ রায় দিতে গিয়ে বেঞ্চ বলেছে, ‘নেতিবাচক ভোট নির্বাচনে বিশুদ্ধতা এবং নতুন উদ্দীপনা জোগাবে।’ আদালত পর্যবেক্ষণে বলেছে, এ ধরনের ভোটের ব্যবস্থা প্রায় ১৩টি দেশে বিদ্যমান। এমনকি ভারতীয় পার্লামেন্টেও বিদ্যমান। পার্লামেন্টের সদস্যরা যেকোনো ভোটে অনুপস্থিত বোতামে টিপে ভোট দিতে পারলে ভোটাররা পারবেন না কেন। কোর্টের রায়ে নির্বাচন কমিশনকে তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর করতে বলা হয়েছে, যাতে আসন্ন রাজ্যসভার নির্বাচন এবং পরবর্তী সময়ে লোকসভার নির্বাচনে এ ব্যবহার প্রয়োগ করা যায়।
ভারতীয় এই রায় এখন ‘রিপ্রেজেনটেটিভ অব পিপলস অ্যাক্ট’ (আরপিএ)-এ আইন হিসেবে সংযোজিত হবে। আইন হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের কার্যকরী আদেশে ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের রায় কার্যকর হবে।

২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশের ইতিহাসে ভোটাররা প্রথমবারের মতো ‘না ভোট’ প্রয়োগ করেছিলো। ওই সময় জারী করা অধ্যাদেশের ধারা ৩১(৫) (বিবি)-তে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যাতে ব্যালট পেপারের সবশেষের প্রার্থীর স্থানে লেখা থাকবে ‘ওপরের কাউকে নয়’ এবং ভোটারদের সহজ পরিচিতির জন্য মার্কা রাখা হয় ‘ক্রস’ (X)। শুধু ওই ধারাতেই নয়, এ প্রক্রিয়ায় কোনো সংসদীয় এলাকায় ৫০ শতাংশের ওপরে ভোট প্রদান করা হলে পুনরায় নির্বাচন করার বিষয়টি নতুন ধারা ৪০এ-তে সংযুক্ত করা হয়েছিল।তখন সারা দেশে মোট প্রদত্ত ছয় কোটি ৯৭ লাখ ৫৯ হাজার ২১০ ভোটের মধ্যে তিন লাখ ৮২ হাজার ৪৩৭টি ‘না ভোট’ দেওয়া হয়েছিল। আরও উল্লেখ্য যে, ওই নির্বাচনে ৩৮টি দল অংশগ্রহণ করলেও মাত্র ছয়টি দল ‘না ভোটের’ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছিল। তার মানে এই যে, ‘না ভোট’ সপ্তম স্থানে ছিল।এই ধারা নিয়ে বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল এবং রাজনীতিবিদেরা মোটেও সন্তুষ্ট ছিলেন না।তাই শেখ হাসিনা সরকার এ বিষয়ের সংযোজন আইনে রূপান্তরিত করার সময় বাদ দেয় এবং বিএনপি অন্তত এই বিষয়ে সরকারের সাথে দ্বিমত করননি।
ওই সময়কার নির্বাচন কমিশনের যুক্তি হালের ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণের কাছাকাছি ছিল। নির্বাচন কমিশনের শক্ত যুক্তির ভেতরে ছিল ভোটারদের সম্পূর্ণভাবে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করার ক্ষমতা দেওয়া, রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রার্থিতা নির্বাচনে আরও সংবেদনশীল হওয়া এবং ভারতীয় সংবিধানের মতো আমাদের সংবিধানের ধারা ৩৯(১) ও (১) (ক) প্রদত্ত চিন্তা এবং মতামত প্রকাশের মতো মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত করা-বিষয়ক বিবেচনা। এবং নেতিবাচক কারণে ভোটকেন্দ্রে না যাওয়া অথবা ব্যালট পেপার নষ্ট করার মতো ক্রমবর্ধমান ধারাকে ইতিবাচক বিষয়ে পরিণত করা।
যা-ই হোক, ওই অধ্যাদেশের আওতায় ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ভোটারদের সামনে বিকল্প ব্যবস্থা উত্থাপন করা হয়েছিল। ওই সময়ে ‘না ভোট’ বা ‘ওপরের কাউকে নয়’ বিষয়টি সময়ের অভাবে যথেষ্টভাবে প্রচারিত হয়নি। তবু বহু তরুণ ভোটারের মধ্যে বিষয়টি যথেষ্ট চর্চিত হয়েছিল। ঢাকার একটি আসনে সবচেয়ে বেশি ‘না ভোট’ পড়েছিল, তবে তা পুনর্নির্বাচনের পর্যায়ে যায়নি। এই নতুনত্ব ভোটারদের মধ্যে ক্রমেই যথেষ্ট আলোড়ন সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়। অনেক ভোটার শুধু ‘না ভোট’ বা ‘ওপরের কাউকে নয়’ অধিকারের বিষয়টি যুক্ত করার কারণেই ভোটকেন্দ্রে গিয়েছিলেন। আজও অনেক ভোটার জানেন না, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের এই ধারাগুলো ফেব্রুয়ারি ২০০৯ সালে সংসদ কর্তৃক পাসকৃত আইনের ধারা ৩১-এর সংশোধনী (খ) ও (গ) দ্বারা বিলুপ্ত করা হয়, কাজেই ৪০ (এ)-এর কার্যকারিতা আর থাকল না।
সম্প্রতি ভারতের সূত্র ধরে আমাদের দেশেও ‘না ভোট’ পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য উচচ আদালতে রীট আবেদন করা হয়েছে ।
আমরা আশা করি, ভারতীয় বিচার বিভাগের মতোই আমাদের বিচার বিভাগও জনগনের মৌলিক অধিকার রক্ষার্থে নির্বাচন কমিশনকে শক্তি জোগাবে।
৬টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণা!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৭



নীচে, আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণাকে ( পেশগত দক্ষতা ও আভিজ্ঞতার সারমর্ম ) আমি হুবহু তুলে দিচ্ছি। পড়ে ইহার উপর মন্তব্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ড্রেনেই পাওয়া যাচ্ছে সংসারের তাবৎ জিনিস

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫০



ঢাকার ড্রেইনে বা খালে কী পাওয়া যায়? এবার ঢাকা সিটি কর্পোরেশন (উত্তর) একটি অভুতপূর্ব প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। তাতে ঢাকাবাসীদের রুচিবোধ অথবা পরিচ্ছন্নতাবোধ বড় বিষয় ছিল না। বড় বিষয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

মোজো ইদানীং কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে 'অখাদ্য' খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৮

আজ (১০ মে ২০২৪) রাত দুইটা দশ মিনিটে নিউ ইয়র্কের পথে আমাদের যাত্রা শুরু হবার কথা। এর আগেও পশ্চিমের দেশ আমেরিকা ও কানাডায় গিয়েছি, কিন্তু সে দু’বারে গিয়েছিলাম যথারীতি পশ্চিমের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×