somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রিজিভী আহমেদের লেখা চিরকুট এবং সাধারণের কিছু প্রশ্ন।

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাসে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ, পুরে মরছে সাধারণ মানুষ। রাস্তায় ককটেল নিক্ষেপ, মরছে সাধারণ মানুষ। পুলিশের সাথে ধাওয়া পালটা ধাওয়ায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাচ্ছে বিজিবি সদস্য-পুলিশ সদস্য সেইসাথে দু’একজন রাজনৈতিক দলের কর্মী। এই মানুষগুলোর সবচেয়ে বড় পরিচয় এরা সমাজের সবথেকে সুবিধা বঞ্চিত শ্রেণীর প্রতিনিধি। কেউই নেতা নন এমনকি পাতি নেতাও নয়। এতদিনের মৃত্যুর মিছিলে এমন একটি নামও যুক্ত হয়নি যাকে মানুষ কোন রাজনৈতিক দলের নেতা বলে জানে। অথচ মৃত্যুর মিছিলটি ক্রমাগত বড় হচ্ছে। কারা মরছে? সাধারণ শ্রমিক, কর্মচারী, গাড়ী চালক, হেল্পার। যারা নিত্য যুদ্ধ করে বেঁচে থাকে নিয়তির সাথে। যাদের ঘরে এক দিনের বাড়তি খাবারের সংস্থান থাকে না।

কারা তাদের হত্যা করছে এ প্রশ্নের উত্তরে, সরকারী দলের ভাষায় বিরোধী দলের ক্যাডার। আর বিরোধী দলের ভাষায় সরকারী এজেন্ট। যদি প্রথমটিকে সঠিক বলে ধরে নেই তাহলে প্রশ্ন সরকারের কাছে, এই সব হত্যাকারীদের ধরছেন না কেন? আমাদের জানমালের হেফাজতের দায়িত্ব নিয়ে যদি নিরাপত্তা বিধানে সক্ষমই না হবেন। ক্ষমতাই বা আকরে ধরে আছেন কোন অধিকারে, কোন নৈতিকতার জোরে?

যদি দ্বিতীয়টিকে সঠিক বলে ধরে নেই, তাহলে প্রশ্ন বিরোধী দলের কাছে। যদি জানেনই সরকারী এজেন্টরা এসব করছে, আপনারা সে সুযোগটি কেন করে দিচ্ছেন? আপনারা হরতাল অবরোধ ডেকে দরজায় খিল এঁটে বসে থাকবেন। কর্মীরা পর্যন্ত লাপাত্তা হয়ে যাবে। আর এরই সুযোগে অসুর শক্তি রাজপথে রাজত্ব কায়েম করবে দায় কেন নিবেন না?
মাননীয় বিরোধী দলের নেত্রী হয়ত তত্ত্বাবধায়ক প্রশ্নে মানুষের তথাকথিত ৯০ ভাগ জনসমর্থনকে মাথায় রেখে আপোষহীনতার আরেকটি উদাহরণ সৃষ্টিতে সংকল্পবদ্ধ। নব্বই ভাগ মানুষের তত্ত্বাবধায়ক সরকারে সমর্থন ব্যক্ত করা আর তা বাস্তবায়নের এই নির্মম পন্থাটি যে সমান সমর্থনযোগ্য নয় তা হয়ত তিনি মাথায়ই রাখেননি।

তা ছাড়া নব্বই ভাগ মানুষ যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার পক্ষে আপনার মতই আপোষহীন মনো ভাবাপন্ন হবে; তাহলে আপনার এই মহান আন্দোলন তো গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়ার কথা। কেন নিলনা? সে প্রশ্নটাও তো করুন।
সাধারণ মানুষের কি আজ আর বুঝতে বাকি আছে যে আপনাদের আন্দোলন মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নয় শুধুই ক্ষমতায় যাওয়ার লড়াই মাত্র। কাজেই আপনাদের সেই অনৈতিক স্বপ্ন পূরণের দায়িত্বটিই বা তারা কেন নিবেন?

বুঝি সাধারণের এই বোধোদয়েরই মাসুল দিতে হচ্ছে এভাবে জীবন্ত অঙ্গার হয়ে। কেন সাধারণ মানুষ আপনার ডাকে ঘরে খিল এঁটে বসে থাকল না। কেন শ্রমিক জিবিকান্বষনে রাস্তায় বের হল। হ্যাঁ এটা তো ঘোরতর অন্যায়, দেশনেত্রীর হুকুম তামিল করা তাদের একান্তই কর্তব্য ছিল। বিচার তাদের হওয়াই উচিৎ। কিন্তু ম্যাডাম, সে ক্ষেত্রে আপনার কাপুরুষ নেতাদের বিচার কেন হবে না। আপনার নির্দেশ সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করে তারা যে অন্দরমহলে আশ্রয় নিয়েছেন।

গরিব মানুষ, নুন আনতে পান্তা ফুঁড়ায় তারা নেত্রীর হুকুম তামিল করবে না পেটের দায় মেটাবে? মাইলকে মাইল রেল লাইন উপরে ফেলে লাইন চ্যুত করা হচ্ছে রেল। নিশ্চয়ই আপনার অনুগতরা এসব করছে না। কিন্তু আপনি তো একটি বার বলেন না এ গুলো দেশের সম্পদ তোমরা এর ক্ষতিসাধন করনা বরং একে পাহারা দাও। দুষ্কৃতিকারীদের ধরে উত্তম মাধ্যম দিয়ে পুলিশে সোপর্দ কর। আপনি কি শ্মশানের দায়িত্ব নিতে চান?

আর তা ছাড়া আপনার পোষ্য যখন বলে দেশে রক্ত গঙ্গা বয়ে যাবে তিনি কি তাও সরকারী এজেন্টদের ভরসায় বলেন? নাকি সে কর্মযজ্ঞটি পালনের মহান দায়িত্বটি নিজেই গ্রহণ করবেন। আমরা তাহলে আরেকজন কসাই কাদেরের সন্ধান পেলাম। কি বলেন?

জনাব রিজিভী আহমেদের লেখা চিরকুটে একটি বিষয় স্পষ্ট হল যে, আপনারা মুখে যাই বলুন সত্যটি অনুধাবনে মোটেই অক্ষম নন। জনাব রিজভীর ভাষায়, “রাস্তায় কোন মুভমেন্ট নেই” নিশ্চয়ই কথাটি তিনি আপনার মহান নেতৃবৃন্দকে উদ্দেশ্য করেই লিখেছেন। তিনি যথার্থই অনুধাবনে সক্ষম হয়েছেন। তিনি আরও লিখেছেন, “সাধারণ মানুষকে জিম্মি করবেন” এটা হয়ত তিনি তার বিবেকের তাড়নাতেই লিখেছেন। মানুষ যখন, বিবেক তো নাড়া দেবেই। কিন্তু সে নাড়াটা কেন এত জোড়ে হয়না যাতে অসুর শক্তি পরাজিত হয়। আমাদের দুঃখটা এখানেই।

একদল বিশিষ্ট জন টেলিভিশন টক শোতে বলে বেড়াচ্ছেন আন্দোলন দেশ জুড়ে ছড়িয়ে গেছে। তারা এটাকে গন অভ্যুত্থান বলেও চালানোর চেষ্টা করছে। তাহলে তো মানবতা বিরোধী অপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধেও এদেশে গন অভ্যুত্থান সৃষ্টি হয়েছিল। আজ দেশের যে সব এলাকায় সংঘর্ষ হচ্ছে তখনো ঐ সব এলাকায় এমনই সংঘর্ষ হয়েছিল। একই প্যাটার্ন একই গোষ্ঠী কর্তৃক। তারাও কি তাহলে আমাদের মতই আজ জামায়াত আর বিএনপিকে আলাদা করতে ব্যর্থ হচ্ছে নাকি আমাদের বেকুব বলে ঠাওরে নিয়ে যা ইচ্ছে তাই গেলানোর চেষ্টা করছে? আপনার নেতাদের বলুন না থাইল্যান্ডের দিকে তাকাতে বা আরব বসন্তকে মনে করতে। গন অভ্যুত্থান যে কি সেটা অন্তত বুঝতে সক্ষম হবে।

আপনাদের দুই দলের নেতাদের কথা শুনে আমরা কিং কর্তব্য বিমুঢ় হয়ে যাই। যখন আপনার দলের নেতাদের এরেস্ট করা হয় তখন আপনার দলের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ সহ একদল বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী(!) তারস্বরে চেঁচিয়ে ওঠেন এটা অমানবিক বলে। অগ্রহণ যোগ্য বলে। তাদের কাছে সাধারণ মানুষের পোড়া গন্ধ বুঝি খুব উপভোগ্য তাই না? তাদের কাছে মানবতার চরম লঙ্ঘন মনে হয় কেবল নেতাদের জেলে পুড়লে আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের চেষ্টা করলে। আল্লাহ যে এদের কোন ধাতু দিয়ে সৃষ্টি করেছেন তা একমাত্র তিনিই জানেন।

এই যখন আপনার নেতৃবৃন্দের অবস্থা ঠিক তখনই সর্বজন শ্রদ্ধেয় মাননীয় যোগাযোগ মন্ত্রী মহোদয় বলেন,
‘সমঝোতা হলেই বিরোধী দলের নেতাদের মুক্তি’ মাননীয় মন্ত্রী কি তাহলে আমাদের এ বার্তাই দিলেন যে সমঝোতার জন্যই তাদের আটকে রাখা হয়েছে। তারা আসলে নির্দোষ! তাহলে এই যে মৃত্যু, এই যে আহাজারি, সাধারণের এই যে নিঃস্ব হয়ে যাওয়া এ সবই আপনাদের সমঝোতার জন্য দেয়া সাধারণের অর্ঘ্য!

অথচ এই আপনারাই বলেন সব জনগণের জন্য। দেশের সব ক্ষমতার মালিক জনগণ। মাননীয় নেতৃদ্বয় দয়া করে কি একবার বলবেন জনগণ বলতে আপনারা কাদেরকে বোঝান?

[email protected]
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

**অপূরণীয় যোগাযোগ*

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ২৮ শে মে, ২০২৪ ভোর ৫:১৯

তাদের সম্পর্কটা শুরু হয়েছিল ৬ বছর আগে, হঠাৎ করেই। প্রথমে ছিল শুধু বন্ধুত্ব, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তা গভীর হয়ে উঠেছিল। সে ডিভোর্সি ছিল, এবং তার জীবনের অনেক কষ্ট ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

তুমি অজ্ঞ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৫২


ভাবতে পারো
৮০ টুকরো হতে হয়;
ভাবতে পারো
জ্বলে পুড়ে মরতে হয়!
ভাবতে পারো
কতটুকু লোভ লালসা
থাকলে পরে
এমন হবে বলো দেখি;
ভাবতে পারো
কেমন জন্ম মৃত্যুর খেলা;
জানি আমি
তুমি কিছু ভাবতে পারবে না
কারণ তুমি অজ্ঞ
মৃত্যুর পরে একা... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্যামুয়েল ব্যাকেট এর ‘এন্ডগেম’ | Endgame By Samuel Beckett নিয়ে বাংলা ভাষায় আলোচনা

লিখেছেন জাহিদ অনিক, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৮



এন্ডগেম/ইন্ডগেইম/এন্ডগেইম- যে নামেই ডাকা হোক না কেনও, মূলত একটাই নাটক স্যামুয়েল ব্যাকেটের Endgame. একদম আক্ষরিক অনুবাদ করলে বাংলা অর্থ হয়- শেষ খেলা। এটি একটা এক অঙ্কের নাটক; অর্থাৎ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×