ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী দশম সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সময় ফুরিয়েছে।
Published : 02 Dec 2013, 04:34 PM
আগামী ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় ভোটে প্রার্থী হতে সোমবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত ছিল মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ সময়।
আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন দলের নেতারা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকার রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট মনোনয়নপত্র জমা দেয়নি।
রাজনৈতিক সমঝোতার জন্য তফসিল স্থগিতে বিএনপি এবং আরো সময় চেয়ে জাতীয় পার্টির আবেদনের ওপরও মনোনয়নপত্র জমার সময় বাড়ানোর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি নির্বাচন কমিশন।
ইসির উপ সচিব (নির্বাচন পরিচালনা) মিহির সারওয়ার মোর্শেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নতুন কোনো নির্দেশনা আমরা পাইনি। বিকাল ৫টায় এবারের মনোনয়ন দাখিলের সময় শেষ হল।”
সিইসি রোববার জানিয়েছিলেন, জমা দেয়ার সময় বাড়ানো হবে না। তবে বিরোধী দল নির্বাচনে এলে তফসিলের বিষয়টি ভিন্ন ‘আঙ্গিকে’ দেখবেন তারা।
তবে মনোনয়নপত্র জমার সময় শেষ হওয়ার আধা ঘণ্টা আগে বিকালে সাড়ে ৪টায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের কক্ষে চার নির্বাচন কমিশনার বৈঠকে বসেছেন।
বৈঠকে যাওয়ার পথে সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসায় একজন নির্বাচন কমিশনার বলেন, “সিইসি কী জন্য ডেকেছেন, তা বলেননি। বৈঠক শেষে বিস্তারিত জানতে পারবেন।”
এর আগে বিকালে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক নিল ওয়াকার সিইসির সঙ্গে বৈঠক করেন। ঘণ্টাখানেক বৈঠক শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি তিনি।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৫ ও ৬ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র বাছাই হবে, প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৩ ডিসেম্বর।
বিএনপি এই তফসিল প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, নির্দলীয় সরকার গঠন না করে ‘একতরফা নির্বাচন’ হলে তা প্রতিহত করা হবে।
নির্দলীয় সরকারের দাবিতে দেশব্যাপী টানা অবরোধ চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দল। সংঘাত-সহিংসতায় প্রাণহানির মধ্যে বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনী কার্যালয়েও হামলা হয়েছে।
এর মধ্যেই ৩০০ আসনে ৬৪ জেলায় রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহীরা মনোনয়নপত্র জমা দেন।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে গোপালগঞ্জ-৩ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেন স্থানীয় নেতারা। তিনি বর্তমানে ওই আসনের সংসদ সদস্য। রংপুর-৬ আসনেও তার পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
সিলেট-১ আসনে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এবং সিলেট-৬ আসনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ মনোনয়নপত্র জমা দেন।
কিশোরগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ-৬ আসনে রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিল্লুর রহমানের ছেলে নাজমুল হাসান পাপন মনোনয়নপত্র দাখিল করেন।
চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি) আসনের মনোনয়নপত্র জমা দেন আওয়ামী লীগের নুরুল ইসলাম বিএসসি। ওই আসনে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুও।
ঢাকা মহানগরের ১৮ সংসদীয় আসনে মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে ৬১টি।
ঢাকা বিভাগীয় নির্বাচন কমিশনার এএন শামসুদ্দিন আজাদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, “১৮টি আসনের জন্য মোট ৯৫টি মনোনয়নপত্র নেয়া হয়েছিল। এর মধ্যে জমা পড়েছে ৬১ টি।”
চট্টগ্রামে নুরুল ইসলামের সঙ্গে মহিউদ্দিন
সোমবার মনোনয়ন জমা ও গ্রহণের শেষদিন সকাল থেকেই চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে আওয়ামী লীগ, জাসদ, জাতীয় পার্টিসহ স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সমর্থকদের নিয়ে এসে মনোনয়ন জমা দেন।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে নগর সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছিরকে সঙ্গে নিয়ে চট্টগ্রাম-৯ আসনের মনোনয়নপত্র জমা দেন বর্তমান সাংসদ নুরুল ইসলাম বিএসসি।
বিভাগীয় কমিশনারের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন চট্টগ্রাম-১১ (হালিশহর-পতেঙ্গা) আসনের আওয়ামী লীগের বর্তমান সাংসদ এম এ লতিফ। একই আসনে জমা দিয়েছেন মহাজোটের শরিক জাসদের নগর সভাপতি জসিম উদ্দিন বাবুলও।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে সমর্থকদের নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শামসুল হক চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনে প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে প্রার্থী ফজলে করিম চৌধুরী।
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে আওয়ামী লীগের সমর্থন পাওয়া মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর পাশাপাশি জাতীয় পার্টির মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীও মনোনয়নপত্র জমা দেন।
চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপে) আসনে আওয়ামী লীগের মাহফুজুর রহমান মিতার সঙ্গে মনোনয়নপত্র জমা দেন তাদের জোট শরিক জাসদের নুরুল আক্তারও।
চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে আওয়ামী লীগ নেতা পেয়ারুল ইসলাম মনোনয়নপত্র জমা দেন। তবে তিনি দল থেকে সমর্থন পাননি। একই আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারীও।
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে আওয়ামী লীগের হয়ে মনোয়নপত্র জমা দিয়েছেন আবু রেজা নদভী। এছাড়া চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড-কাট্টলী) আসনে মনোনয়ন জমা দেন আওয়ামী লীগের দিদারুল আলম।
সিলেটে মুহিত-নাহিদের মনোনয়পত্র জমা
সিলেটে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সোমবার মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন সিলেটের জেলা প্রশাসক ও রিটানিং কর্মকর্তা শহীদুল ইসলামের কাছে।
মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “বিরোধী দল এখনো নির্বাচনে আসতে পারে।”
বিরোধী দল ছাড়া নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে কি না- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “শুধু একটাই নয়, আরো তো বিরোধী দল আছে।”
এর আগে বিয়ানীবাজারে সহকারী রিটানিং কর্মকর্তার কাছে সিলেট-৬ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এ আসনে আরো মনোনয়ন জমা দিয়েছেন জাতীয় পার্টিল সেলিম উদ্দিন।
সিলেট-৪ আসনে ফারুক আহমদ নামে এক স্বতন্ত্র প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
পার্বত্য এলাকায় জেএসএস (এমএন লারমা)-ইউপিডিএফও প্রার্থী
পার্বত্য খাগড়াছড়ি আসনে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পাটি ছাড়াও জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) ও ইউপিডিএফ নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
রির্টানিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক মো. মাসুদ করিমের কাছে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা ও জাতীয় পাটি (এ) সোলায়মান আলম শেঠ,।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) গ্রুপের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুধাসিন্দু খীসা, ইউপিডিএফের কেন্দ্রীয় সভাপতি প্রসিত বিকাশ খীসাও এই আসনে প্রার্থী হয়েছেন।
বান্দরবানে বর্তমান সাংসদ ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বীর বাহাদুরসহ আটজন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রসন্ন কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সাংবাদিক কামরুজ্জামান,ছোটন কান্তি তঞ্চঙ্গ্যাও মনোনয়নপত্র জমা দেন।
কিশোরগঞ্জে আশরাফ-পাপন-তৌফিকের মনোনয়ন পত্র দাখিল
কিশোরগঞ্জ-১(সদর-হোসেনপুর) সংসদীয় আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।
দুপুরে কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক এম এম আলমের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন সৈয়দ আশরাফের প্রতিনিধি জেলা পরিষদের প্রশাসক মো. জিল্লুর রহমান।
আশরাফ সকালে কিশোরগঞ্জ গেলেও মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় উপস্থিত ছিলেন না।
এছাড়া কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) সংসদীয় আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সোহরাব উদ্দিন।
কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিটামইন-অষ্টগ্রাম) আসনে প্রতিনিধির মাধ্যমে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন রাষ্ট্রপতির ছেলে রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক।
ভৈরবে কিশোরগঞ্জ-৬ (ভৈরব-কুলিয়ারচর)আসনে রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিল্লুর রহমানের ছেলে ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দেন আওয়ামী লীগের নেতারা।
দীপু মনি,মহীউদ্দীন আলমগীরের মনোনয়নপত্র জমা
চাঁদপুরের পাঁচটি আসনে আওয়ামী লীগের পাঁচজন প্রার্থী, জাতীয় পার্টির দুজন ও বিএনপির বহিষ্কৃত এক প্রার্থী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
চাঁদপুর-৩ আসনে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ইকবাল বিন বাশার মনোনয়নপত্র জমা দেন।
এর আগে রোববার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে চাঁদপুর-৫ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী রফিকুল ইসলাম ও চাঁদপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী (মায়া)মনোনয়নপত্র জমা দেন।
চাঁদপুর-৪ আসনে জাতীয় পার্টির মো. মাইনুল ইসলাম (মানু) ও চাঁদপুর-২ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এমরান হোসেন মিয়া মনোনয়নপত্র জমা দেন।
শাহজাহান ও নাছিমের মনোনয়নপত্র জমা
মাদারীপুর-২ আসনে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খান ও মাদারীপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
সোমবার বেলা ১২ টার দিকে মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রির্টানিং অফিসার এস এ রফিকুল ইসলামের কাছে মাদারীপুর-২ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান।
একই সময় সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী রির্টানিং অফিসার ঝুমুল বালার কাছে মাদারীপুর-৩ আসনে নাছিমও মনোনয়নপত্র জমা দেন।