somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধর্ম ও রাজনীতি : ধর্মভিত্তিক রাজনীতি এবং নারী নেতৃত্ব প্রসঙ্গে

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অর্থনীতিতে সরাসরি অবদান রাখে না কিন্তু জীবন ও সমাজের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত- এমন অনুৎপাদনশীল কোনো বিষয় বা কর্ম যখন পেশাগত স্বীকৃতি পায়, তখন বুঝতে হবে সেগুলো আর তার আসল অবস্থায় নেই। মানবজাতির এমনই দুটি মৌলিক বিষয়- ধর্ম ও রাজনীতি। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, পৃথিবীতে আগমনকারী প্রথম মানুষটির জীবন থেকেই ধর্মের অস্তিত্ব লক্ষ্যণীয়। অপরদিকে রাজনীতি শুরু হয়েছে সমাজ বিকাশের পর। তবে প্রাতিষ্ঠানিক রাজনীতি ঠিক কবে থেকে শুরু হয়েছে সে ব্যাপারে ইতিহাস সঠিক কোনো তথ্য দিতে পারে না। আর ‘পেশাগত’ রাজনীতি শুরু হয়েছে ‘আধুনিক জাতি-রাষ্ট্র ধারণা’র উৎপত্তির পর। যে রাজনীতির সঙ্গে সাধারণত আমরা পরিচিত। বর্তমানে ধর্মও যেহেতু পেশাগত কাজ হিসেবে ব্যাপকতা পেয়েছে, তাই মানবজাতির পূর্ব-আধুনিক এমনকি প্রাগৈতিহাসিক ইতিহাস অনুসন্ধান ও চর্চা ছাড়া এ দু’টি বিষয় অর্থাৎ ধর্ম ও রাজনীতি বুঝা আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। এ কথাটি খুব ভালোভাবে স্মরণ রাখতে হবে, যদি আমরা ধর্ম ও রাজনীতি নিয়ে কথা বলতে চাই।

আধুনিক ‘জাতিরাষ্ট্র’ ধারণার উদ্ভব ও বিকাশের পর এর দ্বারা ধর্ম যেমন প্রভাবিত হতে শুরু করেছে, তেমনি মানবকল্যাণকামী রাজনীতিও তার নিজ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত হয়েছে। তাই উত্তরাধুনিক কালের বিশেষ কোনো স্থান-কাল-পাত্রের ধর্ম ও রাজনীতি দিয়ে মানবজীবনকে বুঝা ও বিশ্লেষণ করা যাবেই না। বরং ‘মানবজীবন’ দিয়ে ধর্ম ও রাজনীতিকে বুঝতে হবে। রাজতন্ত্র তো নয়ই, গণতন্ত্র এবং সমাজতন্ত্র দিয়েও মানুষের মৌলিক চাহিদা, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও গতি-প্রকৃতি ব্যাখ্যা করা যাবে না। কেননা পৃথিবীর সময় যতই গড়াচ্ছে, রাজনীতি ততই নোংরা থেকে নোংরাতর হচ্ছে। আমাদের যুবসমাজও বিষয়টা উপলব্ধি করে না এমন নয়। তার প্রমাণ- জীবন সম্পর্কে তাদের ‘একবুক’ হতাশা, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা; যদিও তারা প্রায় প্রত্যেকেই কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত। আর ধর্মও দিন দিন সমাজ ও রাজনীতির প্রভাববলয়ে চলে আসায় ধর্মের প্রকৃত সংজ্ঞা, আদর্শ, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে প্রচুর ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হচ্ছে। উল্লেখ্য যে, মানুষের ‘মৌলিক চাহিদা’ পূরণের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ প্রকৃত রাজনীতি থেকে দূরে সরে গিয়ে পাশ্চাত্য বুদ্ধিজীবীরা আধুনিক ‘রাষ্ট্র’ ও ‘জাতির’ যে ধারণা পেশ করেছেন, এসব ধারণার মধ্যেই বৈশ্বিক অপরাপর জাতি ও রাষ্ট্রসমূহের পারস্পরিক স্থায়ী দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও যুদ্ধের বীজ লুকায়িত। রাষ্ট্র এবং ধর্ম অথবা ধর্ম ও রাষ্ট্রের পরস্পরবিরোধী অবস্থানের উৎসও সেখানেই।

বর্তমান বিশ্বের প্রধান তিনটি ধর্ম বিশেষত ইসলাম ধর্মের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে আমরা দেখব, শুরুতে সেটি পেশাগত ছিল না। এমনকি রাষ্ট্র ও ক্ষমতার সঙ্গেও এর কোনো সম্পর্ক ছিল না। কারণ ইসলাম ধর্ম যেহেতু সর্বশেষ ও সর্বজনীন, তাই এটি সংকীর্ণ রাজনৈতিক পরিসরে আবদ্ধ থাকা বা কেবলই রাজনীতিনির্ভর হওয়ার অবকাশ নেই। সঙ্গত কারণেই এটি পুরোপুরি মানবিক। আর বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বিশ্বজনীন মানবতার প্রচার-প্রসার ও প্রয়োগে প্রচলিত রাজনীতি একান্তই অক্ষম, অপারগ, সংকীর্ণ; যেহেতু আধুনিক বিশ্ব কখনও কোনো একক জাতি বা রাষ্ট্রের অধীনে শাসিত হবে না, অন্তত ইমাম মাহদি (আঃ)-এর আগমনের পূর্বে। এমনকি কোনো একটা দেশ বা রাষ্ট্রও কোনো একক রাজনৈতিক দলের পক্ষে শাসন করা সম্ভব হবে না। তাই ধর্মকে রাজনীতি থেকে আলাদা করার বা ‘ধর্মভিত্তিক রাজনীতি’ নিষিদ্ধের পায়তারা ধর্মের জন্য অবমাননাকর বলে আমার মনে হয় না। বরঞ্চ সর্বদা সংঘাতমুখর কথিত ‘রাজনীতি’ থেকে ধর্মের দূরে থাকাই উত্তম। তবে তার আগে ‘রাজনীতিভিত্তিক ধর্মও’ নিষিদ্ধ করতে হবে। অর্থাৎ প্রচলিত রাজনৈতিক দলসমূহের ধর্মীয় অঙ্গসংগঠনগুলো বিলুপ্ত করতে হবে। তা না হলে ধর্ম তার প্রকৃত বৈশিষ্ট্য খুঁজে পাবে না। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি ও রাজনীতিভিত্তিক ধর্ম- উভয়ই স্রষ্টাপ্রদত্ত ধর্মের বিকৃতি ঘটায়।

উল্লেখ্য যে, ইসলাম ইসলাম করে বা প্রতিটি বিষয়ের সঙ্গে ইসলামের লেভেল পরিয়ে ইসলামিস্টরাই ইসলামকে আলাদা করে ফেলছে। যেমন ইসলামি কলেজ, ইসলামি দল, ইসলামি টিভি, ইসলামি অমুক-তমুক ইত্যাদি। আমার কথা হচ্ছে, প্রকৃতই যদি ইসলাম জীবনের সবকিছুকেই বেষ্টন করে রাখে, তাহলে ইসলামকে আলাদাভাবে এসবের সঙ্গে জুড়তে হবে কেন? কেউ চাইলেও তো এর বাইরে যাবার সুযোগ নেই, মুখে উচ্চারণ করুক বা না করুক। আমি কি আমার মুসলিম বাবাকে ইসলামি বাবা বলে ডাকব, মাকে ইসলামি মা? তা না হলে কি আমার ‘বাবা’ বা ‘মা’ ডাকটি ইসলামি হবে না? যত্তসব!

ধর্মের মধ্যে যে রাজনীতি নিহিত আছে তা আধুনিক জাতি-রাষ্ট্রের ধারণাপ্রসূত ‘দ্বান্দ্বিক’ রাজনীতি থেকে ভিন্ন। ম্যাকেয়াভেলি চরিত্রের প্রচলিত রাজনীতিকে ইসলাম সমর্থন করে না। অতএব এ রাজনীতিতে কেবল নারী নেতৃত্ব নয়, পুরুষ নেতৃত্বও হারাম। কিন্তু “ইসলামি” রাজনীতিতে পুরুষ নেতৃত্ব তো অবশ্যই, এমনকি ‘নারীনেতৃত্বের’ বিষয়টি সম্ভবত অন্যভাবে ভাবতে হবে। হযরত আয়েশা (রাঃ) একটি বিশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে একটি মুসলিম অংশের জনমতের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। জেহাদের ময়দানেও তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন। জ্ঞান ও মাসআলার জগতেও নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাছাড়া একজন ঘরকোণো নারীকেও মহান আল্লাহ তা’আলা কোরআন পাঠের অনুমতি দিয়েছেন, কোরআন নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করতে আদেশ করেছেন। এর মানে কি? যেহেতু কোরআন বিশ্বজনীন? আজকের রাজনীতি- দ্বান্দ্বিক দেশ-জাতি ও ব্যক্তিস্বার্থের সঙ্কীর্ণ গণ্ডিতে বন্দি। অথচ মানুষমাত্রই বিশ্বজনীন, তিনি নারী হোন কি পুরুষই হোন। বিশেষ করে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় প্রতিটি মানুষেরই দায়িত্ব-কর্তব্য বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত। তাহলে নারীদের এ দায়িত্ব পালনের পথ কি, ইসলাম কি বলে?

সংযোজন : তবে এ বিষয়ে অবশ্যই আমি কোনো সিদ্ধান্ত দেবার কেউ না। আমার এ লেখাসহ প্রতিটি লেখার ক্ষেত্রেই গঠনমূলক সমালোচনা প্রত্যাশা করি। সমালোচনার ভিত্তিতে ভুল চিহ্নিত হলে ভুল স্বীকার করতে আপত্তি নেই। প্রয়োজনে সংশোধন/পরিবর্তন/পরিমার্জন করা হবে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মোজো ইদানীং কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে 'অখাদ্য' খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৮

আজ (১০ মে ২০২৪) রাত দুইটা দশ মিনিটে নিউ ইয়র্কের পথে আমাদের যাত্রা শুরু হবার কথা। এর আগেও পশ্চিমের দেশ আমেরিকা ও কানাডায় গিয়েছি, কিন্তু সে দু’বারে গিয়েছিলাম যথারীতি পশ্চিমের... ...বাকিটুকু পড়ুন

জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০৮ : পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২৪


পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

বিশেষ ঘোষণা : এই পোস্টে ৪৪টি ছবি সংযুক্ত হয়েছে যার অল্প কিছু ছবি আমার বন্ধু ইশ্রাফীল তুলেছে, বাকিগুলি আমার তোলা। ৪৪টি ছবির সাইজ ছোট করে ১৮ মেগাবাইটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×