somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

একটি বাচ্চার আত্মকাহিনী

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার নাম যাহরা তাবাসুম রোজা। আমার আর কোনো ভাই বোন নেই। আমিই বাবা-মার প্রথম সন্তান। এখন আমার বয়স দুই বছর। আমি একা একা হাঁটতে পারি। টুকটাক প্রায় সব কথাই বলতে পারি। আমাকে সবাই খুব আদর করে। অপরিচিত মানুষজনরাও আমাকে আদর করে। কোথাও গেলে সবাই আমাকে কোলে নিয়ে আদর করে, চুমু খায়, কেউ কেউ মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করে দেয়। এত এত আদর ভালোবাসায়- আমি অতিষ্ঠ। আমার বাবা চাকরী করেন। মা সারাদিন বাসায়ই থাকে। মা'র ভালোবাসাটা অনেকটা অত্যাচারের পর্যায়ে পড়ে। তবে আমার রাজীব চাচুর ভালোবাসাটা অত্যাচার পর্যায়ে পড়ে না। তিনি সবার থেকে আলাদা। তার প্রতি আমার সব সময়ই এক আকাশ শুভ কামনা আছে, থাকবে।

আমি সকাল ১১ টায় ঘুম থেকে উঠি। সকালে দেরী করে উঠার কারণ হলো- আমি অনেক রাতে ঘুমাতে যাই। যাই হোক, আমি সকালে ঘুম থেকে উঠে দাঁত ব্রাশ করি। তারপর মা আমাকে ডিম সিদ্ধ খাওয়ান। দিনের পর দিন ডিম খেতে খেতে- ডিমের প্রতি এখন আমার ঘৃন্না ধরে গেছে। মা আমাকে জোর করে ধরে ডিম খাওয়ান। আমার বমি এসে পড়ে, মাঝে মাঝে বমি করে দেই, তারপরও আমার রেহাই নেই। ডিম খেয়ে আমি নীচে নেমে আমার সবচেয়ে প্রিয় রাজীব চাচুকে ঘুম থেকে ডেকে তুলি। চাচুই উঠো...চাচুই উঠো, এই রাজীব চাচুই উঠো। রাজীব চাচুই ঘুম থেকে উঠে- আমাকে কোলে তুলে নেয়। চাচুও আমার মতন অনেক রাতে ঘুমায়। সম্প্রতি চাচু বিয়ে করেছে। চাচুর বউকে আমি মেজ মা বলে ডাকি। মেজ মা অনেক ভালো মানুষ।

প্রতিদিন দুপুর সাড়ে বারোটায় মা আমাকে গোছল করায়। গোছল করার আগে আমার সারা গায়ে অনেক কিছু মাখে এবং গোছল শেষ করার পর আবার আমার গায়ে নানান ররকম লোশন ক্রীম ট্রীম মাখে। এত ক্রীম- আমার খুবই বিরক্ত লাগে। তারপর মা আমাকে খিচুরী খাওয়ায়। আমি খিচুরী বলতে পারি না। আমি বলি- হপ্পা। নানান রকম সবজি দিয়ে হপ্পা বানানো হয়। হপ্পার মধ্যে মিষ্টি কুমড়া থাকবেই। মিষ্টি কুমড়া বাচ্চাদের জন্য অনেক উপকারী। আপনারাই বলেন- দিনের পর দিন হপ্পা কারো ভালো লাগতে পারে? কিন্তু এই হপ্পা আমাকে প্রতিদিন দুইবেলা খেতে হয়। কি কষ্ট !! কি কষ্ট!! হপ্পা শেষ করে আমার মা আমাকে গান শুনিয়ে শুনিয়ে ঘুম পাড়ায়। মার গান শুনতে শুনতে- আমি গভীর ঘুমে তলিয়ে যাই। আহ কি আনন্দময় ঘুম। এই ঘুমের মধ্যে আমি অদ্ভুত সব স্বপ্ন দেখি। কিন্তু দুঃখের কথা হলো- স্বপ্নের কথা গুলো কাউকে বলতে পারি না।

আজ থেকে দুই বছর আগে, আমি যখন মার পেটে ছিলাম- তখন থেকেই আমার মা আমার যত্ন নেওয়া শুরু করে। মাকে ডাক্তার আংকেল বলেছেন- ডাবের পানি খেতে, ডাবের পানি খেলে বাচ্চার গায়ের রঙ পরিস্কার হয়। মাশাল্লাহ আমারা গায়ের রঙ সুন্দর হয়েছে। শুধু ডাবের পানি না, মা ডাক্তারের পরামর্শ মত সব সময় পুষ্টিকর খাবার খেত। আমার জন্ম হয় ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে। ভোর চার টায়। সেদিন খুব বৃষ্টি হচ্ছিল। সকালবেলা দিদা, রাজীব চাচুই আমাকে দেখতে আসে। দিদা আমাকে দেখেই খুশিতে কেঁদে ফেলেন। রাজীব চাচুই তার ক্যামেরা দিয়ে পটাপট আমার বেশ কিছু ছবি তুলে নেয়। ফ্লাশ ছাড়া ছবি তুলেছিল- যেন ফ্লাশের আলো আমার চোখে না লাগে। রাজীব চাচুই কাকে কাকে যেন মোবাইলে ম্যাসেজ দিয়ে আমার জন্মানোর কথা জানালো।

মাঝে মাঝে রাজীব চাচুই আমাকে কোলে করে রাস্তার পাশের চায়ের দোকানে নিয়ে যায়। আমাকে একটা চেয়ারে বসিয়ে রেখে, চাচুই আরাম করে চা খায়। মাঝে মাঝে আমাকেও দুই এক চুমুক খেতে দেয়। একদিন তো গরম চা খেয়ে আমার ঠোট আর জিব পুড়েই গিয়েছিল। হঠাত হঠাত রাজীব চাচুই আমাকে নিয়ে বিকেলবেলা হাঁটতে বের হয়। আমি একা একাই রাস্তার ফুটপাত ধরে হেটে যাই। আমার একটুও ভয় করে না। কারন আমি জানি, আমার পেছনে চাচুই আছে। আমি মাটিতে পড়ে যাওয়ার আগেই চাচুই আমাকে ধরে ফেলবে। চাচুর সাথে আমি একটা দোকানে প্রায়ই যাই। সে দোকানে অনেক রকম মাছ, পাখি আর খরগোশ আছে। একদিন আমি একটা খরগোশ কোলে নিয়েছিলাম। খরগোশ খুব তুলতুলে হয়।

দুনিয়ার সব মায়েরাই শিশুদের ঘুমপাড়ানি গান শুনিয়ে থাকেন। বিশ্বের প্রথম ঘুমপাড়ানি গানটি লেখা হয়েছিল অন্তত চার হাজার বছর আগে। কিছু কিছু গান আমার মুখস্ত হয়ে গেছে। রাতে আমার মা আমাকে গান গেয়ে ঘুম পাড়ায়। ‘ঘুমপাড়ানি মাসি-পিসি মোদের বাড়ি এসো বাটাভরা পান দেব গালভরে খেয়ো।’ আমার বাবা আমাকে মাঝে মাঝে এই গানটা গেয়ে শুনান- "আয়রে আমার কাছে আয় মামনি/ সবার আগে আমি দেখি তোকে/ দেখি কেমন খোপা বেঁধেছিস তুই/ কেমন কাজল দিলি কালো চোখে/ আয় খুকু আয়..আয় খুকু আয়।" বাবার মুখে এই গান টাই আমার খুব প্রিয়। এই গানটা বাবার মোবাইলেও আছে। রাজীব চাচুর গানের গলা খুবই বিচ্ছিরি। "বিদ্যে বোঝাই বাবু মশাই চড়ি শখের বোটে/ মাঝিরে কন, “বলতে পারিস সূর্য কেন ওঠে?/ চাঁদটা কেন বাড়ে কমে? জোয়ার কেন আসে?

আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যত্। তারাই আগামীতে বিশ্ব পরিচালনায় নেতৃত্ব দেবে, সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এজন্য তাদের যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে। এ কথা অনস্বীকার্য, আজকের শিশু জ্ঞান-বিজ্ঞান ও মুক্ত চিন্তা-চেতনায় সমৃদ্ধ হয়ে গড়ে উঠলে আগামী দিনের বিশ্বে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিশ্ব হয়ে উঠবে সুন্দর ও শান্তিময়। বিশ্বের সব শিশু নিরাপদে, স্নেহ-মমতায় বেড়ে উঠুক। বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৭ মার্চ শিশু দিবস পালন করা হয়। ১৯৯৬ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনটিকে শিশু দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এদিন সরকারি ছুটি থাকে। আমার চাচুর কাছ থেকে প্রতিদিন আমি অনেক কিছু শিখি। চাচু বলেছে- শিশুরাই দেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ।

আজ যে শিশু, পৃথিবীর আলোয় এসেছে
আমরা তার তরে একটি সাজানো বাগান চাই।
আজ যে শিশু, মায়ের হাসিতে ভেসেছে
আমরা চিরদিন সেই হাসি দেখতে চাই।

রেললাইনের পাশে নয়, অন্ধকার সিঁড়িতেও নয়
প্রতিটি শিশু মানুষ হোক আলোর ঝরনাধারায়।।
শিশুর আনন্দ মেলায় স্বর্গ নেমে আসুক।

হাসি আর গানে ভরে যাক, সব শিশুর অন্তর
প্রতিটি শিশু ফুলেল হোক সবার ভালোবাসায়।।
শিশুর আনন্দ মেলায় স্বর্গ নেমে আসুক।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:২৯
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কথাটা খুব দরকারী

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ৩১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:৩৪

কথাটা খুব দরকারী
কিনতে গিয়ে তরকারি
লোকটা ছিল সরকারি
বলল থাক দর ভারী।

টাকায় কিনে ডলার
ধরলে চেপে কলার
থাকে কিছু বলার?
স্বর থাকেনা গলার।

ধলা কালা দু'ভাই
ছিল তারা দুবাই
বলল চল ঘানা যাই
চাইলে মন, মানা নাই।

যে কথাটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

অতিরিক্ত বা অতি কম দুটোই সন্দেহের কারণ

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৩০

অনেক দিন গল্প করা হয়না। চলুন আজকে হালকা মেজাজের গল্প করি। সিরিয়াসলি নেয়ার কিছু নেই৷ জোসেফ স্টালিনের গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। তিনি দীর্ঘ ২৯ বছর সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধান নেতা ছিলেন। বলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সীমানা পিলার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৮



বৃটিশ কর্তৃক এদেশে ম্যাগনেটিক পিলার স্থাপনের রহস্য।
ম্যাগনেটিক পিলার নিয়ে অনেক গুজব ও জনশ্রুতি আছে, এই প্রাচীন ‘ম্যাগনেটিক পিলার' স্থাপন নিয়ে। কেউ কেউ এটিকে প্রাচীন মূল্যবান ‘ম্যাগনেটিক’ পিলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাথায় চাপা ভূত ভূত ভূতং এর দিনগুলি

লিখেছেন শায়মা, ৩১ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫


এই যে চারিদিকে এত শত কাজ কর্ম, ঝামেলা ঝক্কি, ক্লান্তি শ্রান্তি সব টপকে আমার মাথায় আজও চাপে নানান রকম ভূত। এক ভূত না নামতেই আরেক ভূত। ভূতেদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজের পাসওয়ার্ড অন্যকে দিবেন না ;)

লিখেছেন অপু তানভীর, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৭



কথায় আছে যে পাসওয়ার্ড এবং জাঙ্গিয়া অন্যকে দিতে নেই । মানুষ হিসাবে, বন্ধু হিসাবে প্রেমিক/প্রেমিকা হিসাবে অথবা আজ্ঞাবহ হওয়ার সুবাদে আমরা অন্যকে ব্যবহার করতে দিই বা দিতে বাধ্য হই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×