অবরোধের মধ্যে অব্যাহত নাশকতায় গাইবান্ধায় পদ্মরাগ এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হয়ে চার জন নিহত ও কমপক্ষে ৫০ জন আহত হয়েছেন।
Published : 04 Dec 2013, 07:30 AM
রেললাইনের ফিসপ্লেট খুলে ফেলায় চাঁদপুরে আন্তনগর মেঘনা এবং খুলনায় নকশীকাঁথা এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হয়েছে।
গাইবান্ধার রোনারপাড়া, খুলনার ফুলতলা এবং চাঁদপুর শাহতলীতে মঙ্গলবার রাত ১টা থেকে বুধবার সকাল ৬টার মধ্যে এসব নাশকতার ঘটনা ঘটে।
ফলে খুলনা ও চাঁদপুরের সঙ্গে সারা দেশের এবং উত্তরবঙ্গের লালমনিরহাট-শান্তাহার পথে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে বলে রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
বোনারপাড়া রেল স্টেশনের মাস্টার প্রসেন কুমার মণ্ডল জানান, লাইনচ্যুত পদ্মরাগ এক্সপ্রেসের তিনটি বগিতে বেশ কিছু যাত্রী আটকা পড়েন। সেখানেই বেশিরভাগ হতাহতের ঘটনা ঘটে।
নির্বাচন সামনে রেখে বিরোধীদলের হরতাল-অবরোধে গত কিছুদিন ধরেই বিভিন্ন স্থানে রেলপথে ব্যাপক নাশকতা ঘটানো হচ্ছে। ফিসপ্লেট খুলে বা লাইন উপড়ে ফেলার পাশাপাশি ট্রেনেও আগুন দেয়া হয়।
এসব ঘটনায় বহু যাত্রী আহত হলেও গাইবান্ধাতেই প্রথম নিহতের ঘটনা ঘটল।
আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
গাইবান্ধায় নিহত ৪
অবরোধের মধ্যে রেল লাইনের ফিসপ্লেট ও ক্লিপ খুলে ফেলায় বুধবার রাত দেড়টার দিকে গাইবান্ধার বোনারপাড়া ও মহিমাগঞ্জ রেল স্টেশনের মাঝামাঝি ভুরঙ্গী এলাকায় পদ্মরাগ এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হয়।
বোনারপাড়া স্টেশনের মাস্টার প্রসেন কুমার মণ্ডল জানান, লালমনিরহাট থেকে শান্তাহারগামী পদ্মরাগের ইঞ্জিনসহ তিনটি বগি লাইন থেকে বেরিয়ে যায়। লাইনচ্যুত একটি বগি দুমড়ে মুচড়ে যাওয়ায় হতাহতের ঘটনা ঘটে।
খবর পেয়ে বোনারপাড়া জংশন থেকে একটি উদ্ধারকারী ট্রেন এবং গাইবান্ধা, রংপুর ও বগুড়ার সোনাতোলা থেকে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কাজ শুরু করে।
গাইবান্ধা ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক কোব্বাত আলী জানান, তারা ট্রেন থেকে চারজনের লাশ উদ্ধার করেছেন। তাদের মধ্যে দুজন নারী ও দুজন পুরুষ। তবে তাদের পরিচয় এখনো জানা যায়নি।
বোনারপাড়া রেলওয়ে থানার ওসি মো. সাইদুর রহমান জানান, এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো অন্তত ৫০ জন। তাদের গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
ওসি বলেন, “দুর্বৃত্তরা রেল লাইনের ফিসপ্লেট ও ক্লিপ খুলে রেখে যাওয়ায় ট্রেনটি দুর্ঘটনায় পড়ে। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসাবে দুইজনকে আটক করেছি আমরা।”
আটক দুজন হলেন- গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার শ্রীপতিপুর ছয়ঘরিয়া গ্রামের হাফিজার রহমানের ছেলে সাদ্দাম মিয়া (২৬) ও একই গ্রামের তসলিম উদ্দিনের ছেলে দুদু মিয়া (৩২)।
তারা দুজনেই ইসলামী ছাত্র শিবিরের কর্মী বলে মহিমাগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ প্রধান জানান।
চাঁদপুরের শাহতলীতে রেললাইনের ফিসপ্লেট খুলে ফেলায় বুধবার ভোরে মেঘনা এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনসহ তিনটি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে।
চাঁদপুর রেলওয়ে থানার ওসি সুভাষ কান্তি দাস জানান, চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনটি বুধবার ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে শাহতলী-মধুরোড এলাকার মাঝামাঝি পাল্টিপাড়া এলাকায় পাঁচ শতাধিক যাত্রী নিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ে।
“ট্রেনটি ধীরে চলছিল বলে বড় ধরনের হতাহতের ঘটনা এড়ানো গেছে। তবে ঘটনার পর থেকেই চাঁদপুর-চট্টগ্রাম লাইনে রেল চলাচল বন্ধ রয়েছে।”
চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কামরুল ইসলাম বলেন, “নাশকতার উদ্দেশ্যে রেলের ফিসপ্লেট খুলা ফেলায় এ ঘটনা ঘটেছে।”
চট্টগ্রাম ও লাকসাম থেকে উদ্ধারকারী ট্রেন এসে লাইনচ্যুত বগি সরানোর পর আবার ট্রেন চলাচল শুরু হবে বলে চাঁদপুরের সহকারী মাস্টার মারুফ হোসেন জানান।
গভীর রাতে খুলনার ফুলতলা উপজেলার বেজেরডাঙ্গা স্টেশনের কাছে যুগ্নিপাশা এলাকায় রেললাইনের ফিসপ্লেট তুলে ফেলায় নকশীকাঁথা ট্রেনের পাঁচটি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে।
জিআরপি থানার ওসি একরাম আলী মোল্লা জানান, মঙ্গলবার রাত ২টার দিকে এ ঘটনার পর থেকে খুলনার সঙ্গে সরা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
তবে এ ঘটনায় কেউ আহত হননি বলে ফুলতলা থানার ওসি মো. ইলিয়াছ ফকির জানান।
লাইন বন্ধ থাকায় মোট ৭টি ট্রেন খুলনার আশেপাশে বিভিন্ন স্টেশনে আটকে আছে বলে জানিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
ওসি একরাম আলী মোল্লা জানান, যাত্রী ও কাঁচামাল নিয়ে নকশীকাঁথা রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ থেকে খুলনা যাচ্ছিল।
উদ্ধার ও লাইন মেরামত শেষে বিকেলের দিকে আবার ট্রেন চলাচল শুরু করা সম্ভব হবে বলে ধারণা করছেন তিনি।