somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এ কালের "মা" আর সেকালের "মা"

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মা' তো মা' ই । এর তো আর একাল আর সেকাল নেই। যুগ যুগ ধরে মা'রা তাদের সম্মানিত অবস্থান ধরে রেখেছেন আপন গুণাবলিতে, এবং চিরকাল তাদের অবস্থানে থাকবেন।

আমি যে বিষয়টা বলবো সেটা হচ্ছে, এখনকার মায়েদের তুলনায় আজ হতে ৩০-৪০ বছর আগের মায়েদের কি পরিমানে প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হতো তার একটি ছোট তুলনা। এখনও শহরের মায়েদের ও প্রতন্ত গ্রামের মায়েদের মাঝে এই পার্থক্য বিদ্যমান।

১) তখন ৫টি সন্তান স্বাভাবিক, ৭-৮টি সন্তান একটু বেশি আর ৩টি সন্তানকে কম মনে করা হতো।
আর এখন ২টি সন্তান স্বাভাবিক, ৩টি সন্তান একটু বেশি আর ১ট সন্তানকে কম মনে করা হয়।
তাই প্রত্যেকটি পার্থক্যকে তখনকার জন্য আমাদের তিন গুন করে হিসাব করতে হবে ।

২) প্রথমেই আসি সন্তান ধারনের সময়: এখনকার শিক্ষিত মেয়েদের ১৮-২০ বছরের আগে বিয়ে হয় না আর বিয়ের ২-৩ বছর আগে সাধারণত সন্তান নেয় না। এই দুই তিন বছরে নতুন বউ শশুড় বাড়ি সম্পর্কে একটি ধারনা পায়, স্বামীকে বুঝতে পারে সর্বোপরি একটি মানসিক প্রস্তুতি নিতে পারে।

তখনকার মায়েদের সাধারণত ১৫-১৭ বছরের মধ্যেই বিয়ে হয়ে যেতো আর বিয়ের বছর না ঘুরতেই কোলে আসতো প্রথম সন্তান। একেতো নতুন পরিবেশ, বয়স কম, তার উপর সন্তান লালন পালনে দায়িত্ব। তখন মায়েদের নিজস্ব স্বাদ-আল্লাধ কমই ছিলো।

৩) এখনকার শাশুড়িগন ছেলে বউ এর ভয়ে ভীত থাকেন। আর নতুন বউকে সাধারণত দেবর ননদ সহ পুরো পরিবারের রান্না করে খাওয়াবার দায়িত্ব থাকে না। আর বউ চাকরি করলে তো কথাই নাই।

তখনকার নতুন বউ এরা শাশুড়িকে যমের মত দেখতেন। বিয়ের প্রথম দিকেই বউ এর উপর সমস্ত কাজের দায়িত্ব দিয়ে নিজে শুধু ভুল ধরা দায়িত্বে থাকতেন।

৪) এখনকার মায়েরা একটি সন্তান থেকে আর এটির সন্তানের গ্যাভ সাধারণত ৪-৫ বছর নেয়। দ্বিতীয় সন্তান আসতে আসতে প্রথমটি বড় হয়ে যায়। নিজে নিজে কিছু করতে পারে।

আর তখন দ্বিতীয় সন্তান যখন আসতো তখন বড়টির বয়স দুই বছর। কোনটাকে সামলাবে, একটা এইদিকে কাঁদে তো আর একটা ঐদিকে ।

৫) এখনকার মায়েরা সন্তান পেটে আসার পরে থেকেই শুরু হয় সন্তানের যত্ন। নিয়মিত চেকআপ, পর্যাপ্ত রেস্ট, পুষ্টিকর খাবার, ভারি কাজ না করা, চার মাস থেকেই আইরন, ক্যালসিয়াম টেবলেট.....

তখন মায়েদের আইরন,ক্যালসিয়াম তো দূরে থাকুক পর্যাপ্ত খাবার আর নিয়মিত ঘুমটা পাওয়াই বেশি ছিলো। অনেক মায়ের উপর থেকে ভারি কাজগুলোও হালকা করা হতো না।

এই রকম অনেক তুলনাই করা যাবে কিন্তু আমার উদ্দেশ্য তা নয়, আমি শুধু "এখন এক ঘসাতেই দিয়াশলাইয়ে আগুন ধরাবার সময় কল্পনা করি আমাদের পূর্বপুরুষ এই একটু আগুন জ্বালাতে কত কষ্টই না করেছেন"

এখন আমার মা' এর একটি ঘটনা আপনাদের বলি, ঘটনাটা যখন আমার ছোট ভাই জুয়েল হয় তখন। বাবু হবার সময় সাধারণত মা নানির বাড়ি চলে যেতেন। নানির বাড়ি গেলই যে শান্তি তা নয় কারন নানি ছিলেন মা'র সৎ মা । তবুও শশুর বাড়ি থেকে কিছুটা আরাম ছিলো বিশেষ করে কাজের চাপ এতো ছিলো না।

বাবু হবার সময় হলে নানা লাকরি ঘরে মা'র আঁতুর ঘর বানিয়ে দিতেন। লাকরি ঘরটা ছিলো মূল ঘর থেকে কিছুটা দূরে, বাঁশ ঝাড় জঙ্গলের কাছে। ঘরের বেড়া ছিলো পাট শোলার। রাত্রি বেলে ঘরের কাছেই শিয়াল ডাকতো। মা সবসময় সজাগ থাকতেন, না জানি শোলার বেড়া ভেঙ্গে শিয়াল এসে তার আদরের বাচ্চাকে নিয়ে যায়।

আমরা থাকতাম মূল ঘরে, খালার সাথে। এই অবস্থায় একজন মা এক থাকতেন সেই ঘরে। সেই অবস্থায় শীতের রাতে কত প্রয়োজনই তো তার হতে পারে। একজন লোক সাথে থাকলে কত ভালোই না তার হতো!

মা তার পাশে গর্ত করে তাতে গরম কয়লা দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে রাখতেন আর জুয়েলের পাশে কুপি বাতি জ্বালিয়ে রাখতেন।(তখন কারেন্ট ছিলো না) মা কখনই গভীর ঘুম ঘুমাতেন না । কিছুখন পর পরই সারা ঘর দেখতেন সব ঠিক আছে কিনা ।

একদিন রাতে ঘুম ভেঙ্গে দেখেন বড় একটি কুকুর পাশে দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টিতে জুয়েলের দিকে তাকিয়ে আছে। দেখে তো মা'র বুকটা ছ্যাঁত করে উঠে। তাড়াতাড়ি জুয়েলকে কোলে নিয়ে হিস হিস করাতেই কুকুরটি বেড়া ঘেঁসে বাহিরে চলে যায়।

আমাদের মত সন্তানদের বড় করতে কত মা'ই যে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন.......

তাই বলি, এখনকার সন্তানরা তাদের মাকে যত ভালোবাসে তার চেয়ে কমপক্ষে তিন গুন বেশি ভালোবাসা উচিত ত্রিশ বছরে পুরাতন মায়েদের।

জন্ম দিয়েছো তুমি মাগো......
তাই তোমায় ভালোবাসি......

মাকে নিয়ে আমার আর একটি লিখা দেখতে পারেন এখানে
আমার সাহসী মা
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×