somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাংস্কৃতিক আন্দোলন বলে কিছু নেই - সবই রাজনৈতিক আন্দোলন

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মানুষ প্রকৃতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে গিয়ে প্রকৃতিকে পরিবর্তন করে , সাথে নিজেকেও । এটা মার্কস অথবা এঙ্গেলসের একটি বক্তব্য , এখন আমার ঠিক মনে নেই । ছাত্র জীবনে পরেছিলাম । এখানে এই বক্তব্যটা উল্লেখ করার কারন সাংস্কৃতিক আন্দোলন নিয়ে একজনের একটা লেখা দেখলাম ফেসবুকে কিন্তু মন্তব্য করার জন্য এখন আর লেখাটা খুজে পাচ্ছি না । লেখক বলতে চেয়েছেন সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মাধ্যমে মানুষের মন মানসিকতার পরিবর্তন হলেই সমাজ পরিবর্তন হয়ে যাবে । সেই আন্দোলনে উনি দৈনিক পত্রিকা প্রথম আলো কে পাথেয় মনে করেন । সেই জন্যই আমার নিজ মতামত দেয়ার প্রয়োজন মনে করছি । আর একটি কারন হচ্ছে ছাত্র জীবনে প্রগতিশীল আন্দোলন করতে গিয়ে নাওয়া, খাওয়া, পরীক্ষা, জীবনের ক্যারিয়ার ইত্যাদি পর্যন্ত বিসর্জন দিয়ে সাংস্কৃতিক আন্দোলন ও রাজনৈতিক আন্দোলন বিষয়ে আলোচনা করতে করতে মুখে ফেনা তোলা সহ দিনের পর দিন নষ্ট করেছি ( অভিবাবকদের ভাষায় নষ্ট ) ।
সামান্যতম রাজনৈতিক অর্থনীতি সম্পর্কে যাদের জ্ঞান আছে তারা মাত্রই জানেন যে সংস্কৃতি হচ্ছে অর্থনীতির একটি প্রতিফলিত রুপ । সাংস্কৃতি মানুষের মানসিকতাকে নিয়ন্ত্রন করে । অর্থনীতি নিয়ন্ত্রিত হয় রাজনীতি দ্বারা । চাহিদা বেশি হলে এবং জোগান কম হলে পন্যের দাম বাড়বে ইত্যাদি সাধারন কিছু নিয়ম ছাড়া অর্থনীতির পুরটাই রাজনৈতিক অর্থনীতি । রাষ্ট্র চাইলে অর্থনীতিকে ব্যক্তি মালিকানা থেকে সামাজিক মালিকানায় ( রাষ্ট্রীয় মালিকানায় ) পরিবর্তন করতে পারে । আবার সামাজিক মালিকানা থেকে ব্যক্তি মালিকনায় আনতে পারে । উৎপাদনের উপায়ের এই মালিকানার উপর নির্ভর করেই গড়ে উঠে উৎপাদন ব্যবস্থা ( Mood of Production ) । এই উৎপাদন ব্যবস্থার প্রতিফলিত রূপ হচ্ছে সংস্কৃতি । আমি তাই জানি । এই উৎপাদন ব্যবস্থার উপর দাড়িয়ে মানুষ দৈনন্দিন যে সমস্ত কার্যকলাপ করে থাকে তাহাই সংস্কৃতি । অর্থাৎ মানুষ দৈনন্দিন জীবন সংগ্রামে যে আচার আচরন, কথা বার্তা , চাল চলন , পোশাক পরিচ্ছদ , নীতি নৈতিকতা প্রদর্শন করে তাহাই সাংস্কৃতি এবং কবি সাহিত্যিকরা লেখনির মাধ্যমে মানুষের এই দৈনন্দিন কার্যকলাপকেই তুলে ধরে । কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থা ও শিল্প উৎপাদন ব্যবস্থা যেমন এক রকম নয় তেমন দুই ব্যবস্থার সাংস্কৃতিও এক নয় । আমরা এখন কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থা থেকে শিল্প উৎপাদন ব্যবস্থায় উত্তরন পর্বে রয়েছি । এই উত্তরন পর্বে সাংস্কৃতির পরিবর্তনটাও খুব স্বাভাবিক ব্যপার । সামন্ত সাংস্কৃতিক চর্চায় যারা অভ্যস্ত তাদের পুঁজিবাদী সংস্কৃতির উত্তরন পর্বে খাপ খাওয়াতে সমস্যা হচ্ছে । আবার ইউরোপ আমেরিকার পুঁজিবাদ এর পর্যায়ে যেতে আমাদের অনেক সময় লাগবে বিধায় তাদের সংস্কৃতির সাথে মিল খুজতে যাওয়া বা অনুসরন করারও কোন উপায় নাই । পুঁজিবাদী অর্থনীতির উত্তরন পর্বে নীতি নৈতিকতার পরিবর্তন হয় এবং সাথে সাথে রাষ্ট্রকেও তার আইন পরিবর্তন করতে হয় । বর্তমান সময়ে খ্যাদ্যে বিষাক্ত ফরমালিন ব্যবহার করাটা হচ্ছে মুনাফা বা অতি মুনাফার সংস্কৃতি । আমরা যে বিষ মেশাচ্ছে তাকে দোষারোপ করছি , আইনে এর কোঠর শাস্তি না থাকায় সে অতি মুনাফার এই সুযোগটি কাজে লাগাচ্ছে । আবার রাষ্ট্র যখন আইন তৈরি করবে তখন সেই আইনের পক্ষে একটি প্রয়োগিক সংস্কৃতি তৈরি হয় এবং তার দ্বারা অতি মুনাফার সংস্কৃতি পরাজিত হয় । মানুষ আইন চর্চা করে, তাকে লঙ্ঘন করে না শাস্তির ভয়ে । এটাও একটা সংস্কৃতি ।
বাংলাদেশের অর্থনীতি মুলত লুটেরা পুজি নির্ভর । লুটেরা পুজি যেহেতু রাতারতি তৈরি হয় , কাজেই এই পুজি বিনিয়োগে কোন নিয়ম কানুন মানতে হয় না । রাষ্ট্রীয় আইন এখনও বেশির ভাগ সামন্ত উৎপাদন ব্যবস্থার উপর ভিত্তি করে তৈরি । এই আইন যত ধীরে পরিবর্তিত হচ্ছে পুজি তার চেয়ে অনেক দ্রুত ব্যবহার হচ্ছে । আর বর্তমান রাজনৈতিক সংস্কৃতি হচ্ছে লুটেরা পুজির মদদ দাতা ও প্রতিনিধি । রাষ্ট্র এখনও পুজির ব্যবহারিক নিয়ন্ত্রন করার মত আইনি কাঠামো ও লোকবল নিয়োজিত করতে পারছে না । রাজনৈতিক শক্তি রাষ্ট্রকে লুটেরা পুজি তৈরির মেশিন হিসাবে ব্যবহার করছে বিধায় সেই স্বদিচ্ছাও নেই । লুটেরা পুজির অর্থনীতির উপর দাড়িয়ে যে সংস্কৃতি তারই ফলাফল স্পেকট্রাম গার্মেন্টস , তাজরিন ফ্যাশন , সর্বশেষ রানা প্লাজা । সবই অতি মুনাফা করার অর্থনৈতিক সংস্কৃতি ।
জনগণ যতই চিল্লাচেল্লি করুক না কেন এই সমস্ত ঘটনা একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক অর্থনীতির সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের ফলাফল এবং অবশ্যম্ভাবী পরিনতি ।
এখন সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মাধ্যমে যারা ( বিশেষত প্রথম আলো ) সমাজকে বদলাতে চান তারা এই বদলানোর কথা বলে আরও একটি অতি মুনাফার ব্যবসা ফেদে বসেছে । রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে অর্থনৈতিক কাঠামোর সুনির্দিষ্ট রূপরেখা অনুযায়ী অর্থনীতিকে পরিচালিত করতে পারলে এবং সেই অর্থনীতি বিকাশের সহায়ক আইন ও রাষ্ট্র কাঠামো গঠন করতে পারলে একটি সুন্দর সাংস্কৃতিক বিকাশ সমাজে প্রতিফলিত হবে – এটাই নিয়ম । ইতিহাস ঘাঁটলে তাই পাওয়া যায় ।
সাংস্কৃতিক আন্দোলন বা সাংস্কৃতিক বিপ্লব বলতে কিছু নেই । মানুষ যা করে তাই সংস্কৃতি । কৃষকের গামছা ব্যবহার , মাথায় মাতলা ব্যাবহার সবই প্রয়োজন থেকে । এই প্রয়োজনকেই ফ্যাশন বলা হয় । এখন মাতলা ব্যবহার হয়না বলে তা সংস্কৃতির ঐতিহ্য । অর্থনীতির বিকাশের প্রতিটি ধাপের সাথে সাথে তার সংস্কৃতিও বিকশিত হয় । জোর করে আলাদা ভাবে অর্থনীতির বিকাশকে পাশ কাটিয়ে সংস্কৃতির বিকাশ ঘটানো সম্ভব নয় । সেই চেষ্টাকে আমি অবজ্ঞা করবো না বরং সম্মান জানানোই উচিৎ কিন্তু লক্ষ্যটা যে মুনাফা করা । সেই জন্য আমি এটাকে সামাজিক সাংস্কৃতিক আন্দোলন না বলে পরিস্কার ব্যবসা বলতে চাই ।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×