ঢাকা কলেজের ছাত্র ওহিদুর রহমান বাবু অবশেষে সকল যন্ত্রণা শেষ করে না ফেরার দেশে চলে গেলেন। আল্লাহ তাকে পরকালে চির শান্তিতে রাখুন।
"বাবু তুমি শান্তিতে থেকো।" রোকন টিভি স্ক্রলে এই খবরটা পড়ে মনে মনে এই দোয়া পড়ে চোখ মুছল। রোকন তার স্কুল ফ্রেন্ড। রোকন পারিপার্শ্বিক দারিদ্র্যতার জাঁতাকলে পরে স্কুলের গণ্ডী পেরুতে পারেনি। বাব মারা যান শৈশবে, সংসারের হাল ধরতে হয়েছে কৈশোরে। স্কুলে খুব কাছের বন্ধু ছীলো বাবু আর রোকন। জীবনের স্রোতস্বিনী নদীতে ভেসে ভেসে কোথায় হাড়িয়ে গেল দুজনে। হঠাৎ করে গত সপ্তাহে টিভিতে দেখল বাবুকে, শাহবাগে আগুনে পুড়ে বার্ন ইউনিটে মৃত্যুর সাথে লড়ছে।
রোকন একটা কেমিক্যালের দোকানে সেলসম্যান হিসেবে কাজ করে। সকাল বেলা দোকানে গেল, অনেক ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বাবুকে শেষ দেখা দেখতে যেতে পাড়লো না। মন খারাপ করে দোকানে গেল। দুপুরের দিকে দোকানে মালিকের এক পরিচিত লোক আসলো কিছু কেমিক্যাল কিনতে। রোকন অন্যমনস্ক হয়ে কাজ করছিলো। হঠাৎ কানে আসলো একটি কথা, "বস, টেনশন লন কেন? দলতো ক্ষমতায় আইলো বইলা। বড় ভাই কইছে পোষায়া দিবো। আপনি ম্যানেজ করে লন, সাপ্লাই কয়েকটা দিন বেশী লাগবো। বুঝেনইতো রোজ কত সাপ্লাই দিতে হয়, পাউডারটা আবার বেশী লাগতাছে। হে হে হে ........."
রোকনের কান ঝাঁঝাঁ করে উঠলো, মাথার ভেতরের নিউরনের গভীরে অজানা এক বিস্ফোরণ হয়ে গেল। হাতের কাছে থাকা সালফিউরিক এসিডের গ্যালনটা হাতে নিয়ে পুড়োটা ছূড়ে মারলো লোকটার দিকে, কিছুটা হয়তো মালিকের গায়েও লাগলো। রোকন তখন চিৎকার করছে, কি বলছে কান্না জড়ানো হাহাকারে তা জানা গেলো না। কিন্তু তার চীৎকার হয়তো সপ্ত আকাশ ভেদ করে বাবুর কাছে পৌছে দিতে চাইছে।
থানার আলো আঁধারিতে নিথর হয়ে রোকন বসে আছে। হঠাৎ পুরো থানা কাঁপিয়ে চিৎকার করে উঠলো, "বাবুরে বড় ভূল হইয়া গেছে। আসলটারে মারতে পাড়ি নাইরে। আমারে মাফ কইরা দিস। মন খারাপ করিসনা দোস্তো, আমিও আইতাছি তর কাছে........
(পুরো লেখাটি কাল্পনিক। ওহিদুর রহমান বাবু'র এই আগুনে পুড়ে এক সপ্তাহ যন্ত্রণা ভোগ করে প্রস্থান ব্যাক্তিগতভাবে আমার মানসিক জগতে বিশাল ধাক্কা দিয়েছে। দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আজ অভিশাপ দিচ্ছি সেইসব হায়েনাদের যারা এই নারকীয় হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী তাদের সবাইকে। গতকাল মাত্র বাবুর জায়গায় নিজেকে বসিয়ে লিখলাম আগুন দিনের দুঃস্বপ্ন (ছোট গল্প) )
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:৪১