somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শরিয়া আইন নিয়ে কিছু কথা -- কেমন হবে আধুনিক কালের এই আইন?

০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আলোচনার শুরুতে বলে নেই, এই আলোচনার লক্ষ্য হচ্ছে ইদানিং ভারত ও বাঙলাদেশে আলোড়োন সৃষ্টি করা ধর্ষণের ঘটনায় ইসলামি আইনের কিছু কিছু বিধানের কার্যকারিতা নিয়ে। বাংলাদেশে ইসলামি আইন প্রবর্তন করতে যারা ইচ্ছুক, তারা ইদানিং কিছু কিছু ইসলামি বিধান চালুর পক্ষে সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে লেখালেখি করছেন, কিছু কিছু লেখা গণমাধ্যমেও আসছে।

সে সব কথা শুনতে ভালো লাগে। বড় ইচ্ছা হয় ইসলামি আইন বলবত হোক, আর ধর্ষণের মতা ব্যাপারগুলো কুর’আনের আইনেই চিরতরে সমাধান হয়ে যাক। কিন্তু সমস্যা হয়েছে অন্য যায়গায়। দুনিয়া এগিয়ে গেছে অনেক, সেই ১৪০০ বছর আগের টাইম-ফ্রেমে দুনিয়া আটকে নেই। তাই আজকে শরিয়া আইন চালু করলে হয়ত মেয়েরা বাঁচবে, কিন্তু আর কি কি হতে পারে, তার দিকে একটু নজর দেওয়া যাক।

শুরুতেই আসুন দেখে নেই নারীদের ব্যাপারে কোরান ও হাদিস কী বলছেঃ

সূরা আন নুর, আয়াত ৩১ (২৪: ৩১)
ইমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাজত করে। তারা যেন যা সাধারণত: প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষদেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নি-পুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদি, যৌনকামমুক্ত পুরুষ ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগন, তোমরা সবাই আল্লাহ্‌র সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।

সূরা আল আহযাব, আয়াত ৩৩ (৩৩:৩৩)
তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করবে—মূর্খতা যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না। নামায কায়েম করবে, যাকাত প্রদান করবে এবং আল্লাহ্‌ ও তাঁর রসুলের আনুগত্য করবে। হে নবী পরিবারের সদস্যবর্গ। আল্লাহ্‌ কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে পূর্ণরূপে পূত পবিত্র রাখতে।

সহিহ মুসলিম, বই ৭ হাদিস ৩১০৫:
আবু হুরায়রা বললেন: “রসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন যে নারী আল্লাহ ও আখেরাতে বিশ্বাস করে সে কখনই তার মাহরাম ছাড়া এক দিনের ভ্রমণে যাবে না।”

মালিকের মুয়াত্তা, হাদিস ৫৪.১৪.৩৭:
মালিক—সাইদ ইবনে আবি সাইদ আল মাকবুরি—আবু হুরায়রা থেকে। মালিক বললেন: আল্লাহ্‌র রসুল (সাঃ) বলেছেন: যে নারী আল্লাহ ও আখেরতে বিশ্বাস করে তার জন্যে তার পুরুষ মাহরাম ছাড়া একদিনের রাস্তা ভ্রমণ করা হালাল নয়।

আমাদের জানা মতে মুসলমান দেশগুলোর ভেতরে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া,পাকিস্তান, বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ মহিলা শ্রমিক বিভিন্ন কল-কারখানায় প্রতিদিন কাজ করতে যায়। এ না করলে তাদের সংসার চলবে না। যদি বাঙলাদেশের কথাই ধরা যায়, তা হলে বলা যায় যে নারী শ্রমিকরা যদি কাজ ত্যাগ করে, তা হলে এই দেশের রফতানি আয়ে নামবে এক বিশাল ধ্বস। আর যদি নারীরা মাহরাম ছাড়া বের না হন, তা হলে আমাদের বাসা-বাড়ীতে কাজের বুয়ার অভাব দেখা দিবে অতি অল্প দিনের ভেতরে।

এখন স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন আসে কী হবে ঐ সব মহিলা শ্রমিকদের, যদি শারিয়া আইন বলবত হয়? অনেক মহিলা শ্রমিক রাত্রের বেলাতেও ফ্যাক্টরিতে কাজ করে। তাদের কী হবে ইসলামী আইন চালু হলে?

শারিয়া আইনের ফলে এই সব মহিলা শ্রমিক ও তাদের পরিবার যে অনাহারে থাকবে, তা আর বোঝার অপেক্ষা থাকে না।

একটু চিন্তা করে দেখি, আমাদের দুই নেত্রী কেমন করে বিদেশে যেতে পারবেন কিংবা বিদেশি পুরুষ মেহমান বা রাষ্ট্রনায়কদের সাথে এক সাথে বসে আলাপ আলোচনা করবেন? সৌজন্য স্বরূপ পুরুষ রাষ্ট্রনায়কদের সাথে করমর্দনের কোনো কথাই উঠতে পারে না।

কিংবা ইসলামি দলের কাছে প্রশ্ন উনাদের পসন্দের পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো কি মাহরাম নিয়ে ঘরের বাইরে যেতেন, ছহিহ ইসলামি পর্দাসহ কি পার্লামেন্টে আসন গ্রহন করতেন? কিংবা সেই ইসলামি প্রজাতন্ত্র পাকিস্তানের এখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রাব্বানি খার কি পুরাপুরি ইসলামি কায়দায় ঘোরাফেরা করেন?

আজকের দিনে আমরা এই বিশুদ্ধ ইসলামী আইনের ব্যবহার দেখতে পাচ্ছি তালিবানি শাসিত আফগানিস্তানে, উত্তর সুদানে ও নাইজেরিয়ার কিছু প্রদেশে। সেইগুলি যেহেতু আধুনিক কালের শরিয়া আইন, সেহেতু তার মাপকাঠিতে চলতে গেলে বাঙলাদেশ তো দূরের কথা, পাকিস্তান ইসলামি প্রজানন্ত্র পর্যন্ত অচল হয়ে পড়বে।

বেশ কিছু শিক্ষিত ইসলামী প্রায়শঃ বলে থাকেন যে, ইসলাম নাকি মহিলাদেরকে উচ্চশিক্ষার জন্য আহবান জানায়। ইসলামের লজ্জা ঢাকার জন্যই যে এই সব শিক্ষিত মুসলিম পুরুষেরা মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছেন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাঁদের মিথ্যার মুখোশ উন্মোচনের জন্যে আমরা দেখব কিছু শারিয়া আইন। কী বলছে শারিয়া মুসলিম নারীদের শিক্ষার ব্যাপারে?

শারিয়া সাফ সাফ বলছে যে মহিলাদের জন্য একমাত্র শিক্ষা হচ্ছে ধর্মীয়, তথা ইসলামী দীনিয়াত।

শারিয়া আইন এম ১০.৩ (উমদাত আল সালিক, পৃঃ ৫৩৮):
স্বামী তার স্ত্রীকে পবিত্র আইন শিক্ষার জন্য গৃহের বাইরে যাবার অনুমতি দিতে পারবে। সেটা এই কারণে যে যাতে করে স্ত্রী জিকির করতে পারে এবং আল্লাহ্‌র বন্দনা করতে পারে। এই সব ধর্মীয় শিক্ষা লাভের জন্য স্ত্রী প্রয়োজনে তার বান্ধবীর গৃহে অথবা শহরের অন্য স্থানে যেতে পারে। এ ছাড়া স্বামীর অনুমতি ছাড়া স্ত্রী কোন ক্রমেই তার মাহরাম (যে পুরুষের সাথে তার বিবাহ সম্ভব নয়, যেমন পিতা, ভ্রাতা, ছেলে…ইত্যাদি) ছাড়া গৃহের বাইরে পা রাখতে পারবে না। শুধু ব্যতিক্রম হবে হজ্জের ক্ষেত্রে, যেখানে এই ভ্রমণ বাধ্যতামূলক। এ ছাড়া অন্য কোন প্রকার ভ্রমণ স্ত্রীর জন্য সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং স্বামীও অনুমতি দিতে পারবে না। হানাফি আইন অনুযায়ী স্ত্রী স্বামী অথবা তার মাহরাম ছাড়া শহরের বাইরে যেতে পারবে যতক্ষণ না এই দূরত্ব ৭৭ কি: মিঃ (৪৮ মাইল) এর অধিক না হয়।

শারিয়া আইন এম ১০.৪ (ঐ বই, পৃঃ ৫৩৮):
স্ত্রীর ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞা।
স্বামীর কর্তব্য হবে স্ত্রীকে গৃহের বাইরে পা না দেবার আদেশ দেওয়া।
(কারণ হচ্ছে বাইহাকি এক হাদিসে দেখিয়েছেন যে নবী (সাঃ) বলেছেন: “যে মহিলা আল্লাহ্‌ ও কিয়ামতে বিশ্বাস করে সে পারবেনা কোন ব্যক্তিকে গৃহে ঢোকার যদি তার স্বামী সেই ব্যক্তির উপর নারাজ থাকে। আর স্বামী না চাইলে স্ত্রী গৃহের বাইরে যেতে পারবে না”।)
কিন্তু স্ত্রীর কোন আত্মীয় মারা গেলে স্বামী স্ত্রীকে অনুমতি দিতে পারে গৃহের বাইরে যাবার।

সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:০৪
১০টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামহীন দুটি গল্প

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৫

গল্প ১।
এখন আর দুপুরে দামী হোটেলে খাই না, দাম এবং খাদ্যমানের জন্য। মোটামুটি এক/দেড়শ টাকা প্লাস বয়দের কিছু টিপস (এটা আমার জন্য ফিক্সড হয়েছে ১০টাকা, ঈদ চাদে বেশি হয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×