আল্লাহ তায়ালা আমাদের সৃষ্টিকর্তা, তিনি সমগ্র জাহানের মালিক, অগণিত-অসংখ্য মাখলুকাতের প্রতিপালক। সে হিসাবে বিশ্ব জগতের ওপর আল্লাহর রহমত ও করুণা অসীম, অপার। আল্লাহর পরে জগদ্বাসীর প্রতি সর্বাধিক দয়ালু হলেন আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি জগদ্বাসীর জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত। বিশেষ করে মোমিনদের প্রতি অতিশয় দয়ালু, মেহেরবানÑ ‘বিল মোমিনিনা রাউফুর রাহিম।’( সূরা তাওবা : ১২৮)। তার উসিলায় আমরা আল্লাহর পরিচয় পেয়েছি। সৎপথ চিনেছি। ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, হালাল-হারাম ফরখ করার নির্দেশনা পেয়েছি। তার এত অনুগ্রহের মোকাবিলায় আমাদের পক্ষ থেকে করণীয় কী? আমরা তাকে কী দিতে পারি? আল্লাহ আমাদের সে পথ বাতলে দিয়েছেন। বলেছেনÑ নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাকুল সালাত পাঠায় নবীর ওপর। কাজেই হে ঈমানদাররা! তোমরাও তার ওপর যথাযোগ্য মর্যাদায় সালাত পাঠাও, আর সালাম জানাও। (সূরা আহজাব : ৫৬)।
এই নির্দেশের প্রতিটি অক্ষর ও বর্ণনাশৈলী নিয়ে চিন্তা করলে অবাক হতে হয়। নবীজির প্রতি দরুদ পাঠানোর এ কাজে আল্লাহ নিজে শরিক, সঙ্গে সমগ্র ফেরেশতাকুল। আর আমাদের নির্দেশ দেয়া হচ্ছে নবীজির প্রতি সেই সালাত ও সালাম পাঠানোর জন্য। আয়াতের শেষে ‘তাসলিমা’ শব্দটি তাগিদ বোঝানোর জন্য মাফউলে মুতলাক। তার মানে যথাযোগ্য সম্মান সহকারে।
‘ইবনে আব্বাস (রহ.) এর মতে, আল্লাহর পক্ষ থেকে সালাত মানে, আল্লাহ পাক নবীজির প্রতি অহরহ রহমত নাজিল করেন ও নবীজির প্রশংসা করেন। আর ফেরেশতাদের দরুদ মানে আল্লাহর দরবারে তারা দোয়া করেন ও মাগফিরাত কামনা করেন।’ মনীষী আবুল আলিয়া আরও পরিষ্কার করে বলেন, ‘আল্লাহর দরুদ মানে ফেরেশতাদের মাঝে নবীজির প্রশংসা করা আর ফেরেশতাদের দরুদ মানে হজরতের জন্য আল্লাহর দরবারে নবীজির জন্য তাদের দোয়া। মোমিনদের প্রতি সালাত পাঠানোর নির্দেশের তাৎপর্য হচ্ছে, তোমরা আল্লাহর রাসূলের প্রতি অফুরন্ত রহমত নাজিলের জন্য দোয়া কর আর সালাম জানাও মানে, ইসলামের নিয়ম অনুযায়ী নবীজির প্রতি শ্রদ্ধাভরে সালাম পাঠাও।’ (তাফসিরে কাশফুল আসরার সূরা আহজাবের ৫৬নং আয়াত দ্রষ্টব্য।
নবীজির প্রতি দরুদ পাঠ করলে আমাদের জন্য লাভ আছে অনেক। আমরা সবাই আল্লাহর দয়া চাই। কিন্তু সেই দয়া লাভের সহজ পথ খুঁজে পাই না। দেখুন, দরুদের বিনিময়ে সেই দয়া লাভের কী সুন্দর ও সহজ সুযোগ আছে। নবীজি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরুদ পড়ে আল্লাহ এর বিনিময়ে তার ওপর ১০ বার রহমত নাজেল করেন। (মুসলিম শরিফের বরাতে রিয়াদুস সালেহিন, হাদিস : ১৩৯৭)। অন্য রেওয়ায়েতে আছে, আল্লাহ তায়ালা নবীজির প্রতি একবার দরুদ পাঠের বিনিময়ে দরুদ পাঠকারীর প্রতি ৭০ বার রহমত নাজিল করেন। আল্লাহর নবীর প্রতি আনুগত্য ও অনুসরণের অনুভূতি তাৎপর্যময় হওয়ার জন্যই প্রয়োজন তাঁর প্রতি গভীর ভালোবাসা পোষণ করা, আর তাঁর ভালোবাসার দাবি হচ্ছে তাঁর তারিফ করা ও সকাল-সন্ধ্যা বেশি বেশি করে দরুদ শরিফ পড়া।
Click This Link