somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হ্যাপি অ্যানিভার্সারী তিন্নি!

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


"জীবনেও প্রেম করবো না" এই প্রতিজ্ঞা করে ইউনিভার্সিটিতে (অনেকেই আজকাল ফ্যাশন করে "ভার্সিটি" বলে, সঠিক শব্দ উচ্চারণ করলে নাকি ক্ষ্যাত শোনায়!) পড়তে গিয়েছিলাম। ব্র‍্যাক ইউনিভার্সিটি। আর্কিটেক্ট ইঞ্জিনিয়্যারিং এবং কম্পিউটার সায়েন্স এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়্যারিং দুই ডিপার্টমেন্টেই চান্স পেয়ে গেলাম।
আমার আবার ছোট বেলা থেকেই শখ ছিল শিল্পী মেয়ে বিয়ে করার। চিত্র শিল্পী। যে সুন্দর সুন্দর ছবি এঁকে আমার ঘরের দেয়াল সা...জিয়ে ফেলবে! (পেইন্টিংয়ের যা দাম! এরচেয়ে ঘরের মানুষই ছবি আঁকুক!)
পাছে কোন ভবিষ্যত আর্কিটেক্ট 'ইঞ্জিনিয়্যারনির' প্রেমে পড়ে যাই, সেই ভয়েই সিএসই ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হয়ে গেলাম।
প্রথম সেমিস্টার ভালভাবে পার করে দিতে পেরেছিলাম। বিপত্তি ঘটলো দ্বিতীয় সেমিস্টারে। আমাদের এক সেমিস্টার সাভারে আবাসিক ভাবে কাঁটাতে হবে। বাধ্যতামূলক।
আমি এমনিতেও পরিবার থেকে দূরে থেকে পড়ালেখা করছি। আমার কাছে ঢাকাও যা, সাভারও তা, পরবর্তিতে আমেরিকাও তাই হলো। সে যাক, আমার সহপাঠি অন্যান্য ছেলে মেয়েরা একে নিল প্রেমে পড়ার সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে! সেই সাথে শেষ সুযোগ হিসেবেও। যেন সেমিস্টার শেষে সাভার থেকে ঢাকা ফিরে গেলেই আর প্রেম করা হবে না। এবং এই প্রেম করার উপরেই যেন তাদের জীবনমরণ নির্ভর করছে!
আমি ও আমার কয়েকটা বন্ধু মজা দেখতে লাগলাম। দেখছিলাম ছেলে মেয়েরা কি রকম হন্যে হয়ে নিজের জন্য জোড়া খুঁজে বেড়াচ্ছে! ছেলেদের আগ্রহতো ছিলই, আমি অবাক হতাম মেয়েদের আগ্রহ দেখে! এ ওকে প্রপোজ করছে। প্রথম প্রস্তাবে রাজী না হলে ভাবাভাবির টাইম নাই, অন্য কারও সাথে ট্রাই মারা শুরু! তিনটি মাস মাত্র সময়, একজন মেয়ের/ছেলের পিছনে কয়টা দিন ব্যয় করা যাবে? যদি সে না আসে? এর মাঝে যে আসার সুযোগ আছে, তাকে আসতে দেয়া হোক! কানা, খোঁড়া, ল্যাংরা, লুলা কিংবা চারিত্রিক দোষত্রুটি - সব মাফ! ওসব নিয়ে পড়ে ভাবা যাবে। আগে প্রেমতো শুরু হোক!
দেখতে দেখতে দুইমাস কেঁটে গেল। আমাদের বন্ধুদের মাঝে অনেকেই তাদের জোড়া খুঁজে পেয়েছে। যদিও এখনও সেসব জোড়া থেকে খুব কমই টিকে আছে! আমরা কয়েক বন্ধু আড্ডা মেরেই কাঁটিয়ে দিলাম এ দুইমাস। ঝামেলা বাঁধলো যখন ইন্টার-ডর্ম ফুটবল সিরিজ শুরু হলো। বেস্ট অব থ্রীর প্রথমটায় আমাদের ডর্ম গো হারা হারলো! আমাদের বিপক্ষ ডর্মের দলটি ছিল মহা শক্তিশালি! এই দল যে কোন সেমিস্টারকে চ্যালেঞ্জ করে জেতার ক্ষমতা রাখতো! ওদের তিনজন খেলোয়াড় ছিল যারা লীগে খেলেছে। সেই তুলনায় আমাদের দলে তেমন ভাল খেলোয়াড় ছিলনা। আমি নিজেও দলে খেলিনি। আগ্রহই ছিল না খেলার। তবে হ্যা, আমাদের গোলকিপার, যে কিনা দলের ক্যাপ্টেন, সে ছিল দূর্দান্ত! খুব সম্ভব আমাদের ইউনিভার্সিটিরই (অনেকের কাছে 'ভার্সিটির') সেরা গোলকিপার।
প্রথম ম্যাচে হারার পরে সে এক সকালে আমাকে ধমকের স্বরে বলল, "তুই খেলছিস না কেন?"
আমি বললাম, "ভাল লাগে না।"
সে বলল, "আমি কিছু শুনতে চাই না! কালকে সকালে তোকে আমি মাঠে দেখতে চাই! না হলে তোর খবর আছে!"
আমি খবর এড়াতেই পরদিন মাঠে উপস্থিত। এবং দেখতে দেখতে আমরা সম্পূর্ণ নতুন দল নিয়ে দ্বিতীয় ম্যাচ খেললাম, এবং অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, আমরা জিতে গেলাম!
এত লম্বা ভূমিকা টানার পেছনে কারণ আছে। সেটিই এখন বলছি।
আমার এক চাচাতো বোনও আমার সাথে একই সেমিস্টারে ভর্তি হয়েছিল। সে নিজে ছিল সুন্দরী। তার দলের বান্ধবীগুলিও ছিল সুন্দরী!
আমি আমার চাচাতো বোনটির সাথে জীবনে তেমন কথা বলিনি। ফুটবল ম্যাচ জেতার পরে, আমরা খেলোয়াড়েরা তখন খুব ফূর্তিতে আছি! নিজেদের হিরো মনে হচ্ছে! এই সময়ে আমার বোনটি তার বান্ধবীর দল নিয়ে এসে আমাকে বলল, "জিতেছো, আমাদের খাওয়াবে না?"
আমি তখন মোটামুটি বড়লোক। টিউশ্যনি করি। সপ্তাহে দুইদিন পড়াই, মাস শেষে দুই হাজার টাকা পকেটে ঢুকাই। সাভারে চলে আসায় খরচের উপায় নেই। আমার আবার হাতে টাকা থাকলে মাথার হুঁশ থাকেনা। খরচ না করে ফেলা পর্যন্ত শান্তি পাইনা। আমার নিঃস্বতাতেই আনন্দ! হঠাৎ করে এতগুলো টাকা জমে গেছে আমার হাতে, এখন খরচ করার একটা সূবর্ণ সুযোগ এসেছে, কি করে হ্যালায় যেতে দেই! রাজী হয়ে গেলাম। বললাম, "দল বল নিয়ে চলে এসো সন্ধ্যায়। 'মূর্ছনায়।' (একটি ওপেন এয়ার মঞ্চ, যার একপাশ ফুলের গাছে ঢাকা, আড্ডা দিতে ভালই লাগে।) ঠিক আছে?"
সে তার দল নিয়ে এলো। আমি শুধু আমার রুমমেট দ্বৈপায়নকে নিয়ে এলাম। বাকি বন্ধুরা আসতে লজ্জা পেল! পরিচিত হলাম সবার সাথে। নতুন বন্ধুত্ব হলো। মেয়েরা একে একে তাদের নাম বলল। বিথি, তাসনুভা, নাজ, তিন্নি, অন্তরা, ফাতেমা। আমি আবার কারও নাম মনে রাখতে পারিনা। তাই আবার ভ্যারিফাই করলাম।
"তোমার নাম তিন্নি। তাই না?"
"হ্যা।"
মেয়েটি হাসলো। এত সুন্দরভাবে হাসতে আমি তখনও কাউকে দেখিনি! এখনও দেখিনি। ব্যস! আমার প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ হলো। "জীবনেও প্রেম করবো না" ভুলে চিন্তা করলাম, "এই মেয়ের কি প্রেমে পড়া যায়?"
আমার ইচ্ছে ছিল কোন আর্টিস্ট মেয়েকে বিয়ে করার। যে সুন্দর সুন্দর ছবি এঁকে আমার ঘর সাজাবে! ওকে দেখার পরে মনে হলো, মেয়ে "বেগুণ" হলেও সমস্যা নাই।
দিনটি ছিল ৬ ডিসেম্বর দুই হাজার চার। আমাদের প্রথম পরিচয়ের তারিখ। আজকে ঘুরে ফিরে আবার এসেছে ৬ ডিসেম্বর! এখনও সেই মেয়েটির সেই হাসি দেখলে অবাক হয়ে ভাবি, মানুষ কি করে এত সুন্দর করে হাসতে পারে! আল্লাহ তার মুখে এই হাসি চিরস্থায়ী করুন!
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখনো নদীপারে ঝড় বয়ে যায় || নতুন গান

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২০

এ গানের লিরিক আমাকে অনেক যন্ত্রণা দিয়েছে। ২৪ বা ২৫ এপ্রিল ২০২৪-এ সুর ও গানের প্রথম কয়েক লাইন তৈরি হয়ে যায়। এরপর ব্যস্ত হয়ে পড়ি অন্য একটা গান নিয়ে। সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×