তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আলোচনায় জাতিসংঘ মহাসচিবের দূত অস্কার ফার্নান্দেজ-তারানকো আগ্রহ দেখাননি বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা।
Published : 07 Dec 2013, 10:43 PM
শনিবার শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে তিনি এমন কথা বলেছেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা গওহর রিজভী।
রিজভী সাংবাদিকদের বলেন, “তিনি [ফার্নান্দেজ-তারানকো] বলেছেন কেয়ারটেকার সরকার নিয়ে আলোচনার দরকার নেই। কিন্তু নির্বাচনে সবার জন্য ইভেন প্লেয়িং ফিল্ড থাকতে হবে।”
রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনের আশা নিয়ে ঢাকা সফরে এসে প্রথম দিনই বেশ কয়েকটি বৈঠকে ব্যস্ত সময় কাটান জাতিসংঘ মহাসচিবের এই দূত। তার সঙ্গে বৈঠকের পর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনের আশাবাদ পাওয়া গেলেও মুখ খুলেনি বিএনপি।
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠকের আগে সকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করে নিজের কর্মসূচি শুরু করেন শুক্রবার রাতে ঢাকা আসা জাতিসংঘের এই বিশেষ দূত।
আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর বিকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ফার্নান্দেজ-তারানকো। পরে বিরোধী দলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার বাসায় বৈঠক করেন তিনি।
এর আগে দুপুরে সোনারগাঁও হোটেলে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে দেড় ঘণ্টার বৈঠকে সুনির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে আলোচনা না হলেও জাতিসংঘ মহাসচিবের দূতের এই সফর সফল হবে বলে আশাপ্রকাশ করেন দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।
বিকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচনের ঘোষিত তারিখ পেছানো যায় কি না তা জানতে চান জাতিসংঘের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল।
একই সঙ্গে নির্বাচনে সবার জন্য ‘সমপরিবেশ’ নিশ্চিত করার কথাও বলেন জাতিসংঘের এই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল।
সভাশেষে প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী সাংবাদিকদের বলেন, “খুবই ফ্রেন্ডলি আলোচনা হয়েছে। ফার্নান্দেজ-তারানকো সেক্রেটারি জেনারেলের বিশেষ বার্তা নিয়ে এসেছেন।”
বৈঠকের এক পর্যায়ে আসন্ন জাতীয় সংসদের বিষয়টি উঠে এসেছে উল্লেখ করে গওহর জানান, জাতিসংঘের মহাসচিব তার বার্তায় সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন।
“জাতিসংঘের মহাসচিব তার বার্তায় সংবিধান রিস্টোরের কথা বলেছেন এবং বলেছেন সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হতে পারে। কেয়ারটেকার সরকার নিয়ে আলোচনার দরকার নেই। কিন্তু নির্বাচনে সবার জন্য ইভেন প্লেয়িং ফিল্ড থাকতে হবে।”
বৈঠকে সবাইকে সব ধরনের সংঘাত পরিহার করে আলোচনার মাধ্যমে উদ্যোগ নিতেও আহ্বান জানিয়েছেন ফার্নান্দেজ-তারানকো।
পরে রাতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। অবশ্য বৈঠকে কি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে তা দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়নি।
বৈঠকের পর শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, “আলোচনার প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত এখনই কোনো কিছু বলা যাবে না। দুই-একদিনের মধ্যে আবার আলোচনা হবে। এরপর এ বিষয়ে জানানো হবে।”
খালেদার সঙ্গে ফার্নান্দেজ-তারানকোর বৈঠকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান, সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, সহসভাপতি শমসের মবিন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
প্রায় দুই ঘণ্টার ওই বৈঠকে ৪০ মিনিট তিনি খালেদা জিয়ার সঙ্গে একান্তে কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে প্রতিনিধি দলে ছিলেন দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা গওহর রিজভী, সাবেক রাষ্ট্রদূত শাহেদ রেজা, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ফারুক খান।
এদিকে সকালে মন্ত্রী ও সচিবের সঙ্গে বৈঠকে জাতিসংঘ মহাসচিবের দূত সবার অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের ওপর জোর দেন বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
নির্বাচনকে ঘিরে রাজপথে সংঘাত-সহিংসতার মধ্যে ফার্নান্দেজ-তারানকোর এই সফরকে দেখা হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মধ্যস্ততার শেষ উদ্যোগ হিসেবে।
গত মে মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলোচনা করে বান কি-মুনের দুটি চিঠিও তাদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব।
এরপরে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি না হওয়ায় প্রধান দুই নেত্রীকে চিঠি লেখেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন, যাতে সঙ্কট সমাধানে সংলাপের আহ্বান জানানো হয়।