somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অরেগনের পথে – ২ বাংলাদেশ, (কমা) ইন্ডিয়া

০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


অরেগনের পিডিএক্স এয়ারপোর্টটি আয়তনে বেশ বড়, রাজধানী সালেম থেকে প্রায় ৫৮ মাইল দুরে অঙ্গরাজ্যের সবচাইতে ব্যাস্ততম নগরী পোর্টল্যান্ডে অবস্থিত। ঠিক কিছুদূর উত্তরে এগুলেই ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যের সীমানা।

অরেগন যুক্তরাষ্ট্রের নবম বৃহত্তম অঙ্গরাজ্য, আয়তনে বাংলাদেশের চাইতে বড়। কিন্তু জনসংখ্যা মাত্র চল্লিশ লক্ষ। অধিকাংশ অধিবাসীর আবাস পোর্টল্যান্ড, সালেম এবং ইউজিনের মতো অপেক্ষাকৃত বড় শহরগুলোতে। পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগর, পূর্বে আইডাহো, উত্তরে ওয়াশিংটন এবং দক্ষিণে ক্যালিফোর্নিয়া ও নেভাদা অঙ্গরাজ্য দ্বারা বেষ্টিত অরেগন ১৮৫৯ সালের ১৪ ই ফেব্রুয়ারী অ্যামেরিকার ৩৩ তম অঙ্গরাজ্য হিসেবে ইউনিয়নের সাথে যুক্ত হয়।



কাঁধে ব্যাক প্যাক ঝুলিয়ে, বেশকিছু দূর হাঁটলাম। আশেপাশের মানুষজনের অবয়ব কিছুটা ভিন্ন মনে হচ্ছিলো। উচ্চারণেও ভিন্নতা লক্ষ্য করলাম। নিউইয়র্কের মতো এখানে কৃষ্ণাঙ্গদের আধিক্য নেই। যাহোক ইউএস এয়ারওয়েজের জন্য নির্ধারিত জোনে গিয়ে ল্যাগেজ সংগ্রহ করলাম। অবশেষে দীর্ঘ ভ্রমণের ক্লান্তি এসে ভর করলো। প্রত্যাশিত ভাবে জানালার পাশে গিয়ে গদিতে আছড়ে পরলাম। তাছাড়া মোবাইলের অবস্থাও খুব একটা সুবিধার না। তাই দ্রুত রিচার্জের ব্যাবস্থা করলাম। বাহিরে বেশ বৃষ্টি, পাশে অপেক্ষারত তামিল তরুনীর ফাস্ট মুডে তামাক বিলাস।

কিছুক্ষণ পর পূর্ববর্তী পরিকল্পনা অনুযায়ী নাইম ভাইকে কল দিলাম। আপাতত গন্তব্য আমার কর্মস্থলের নিকটবর্তী হোটেল ম্যারিয়ট। নিদিষ্ট সময় পর নাইম ভাইয়ের ফিরতি কল। দ্রুত সবকিছু নিয়ে বাহিরে এসে দাঁড়ালাম। যাক সবকিছু ঠিকঠাক। নাইম ভাইয়ের সাথে প্রাথমিক আলাপচারিতায় দেশ, সমাজ, ধর্ম ও পেশাগত বিষয় নিয়ে অনেক কিছু আলোচনা হলো। বেশ সজ্জন মানুষ, দীর্ঘ একযুগেরও বেশী সময় যাবত ইন্টেলে কর্মরত। এক সময় দেশে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশকিছু কাল শিক্ষকতা করেছেন। উনার সাথে যাত্রাপথে আলাপচারিতার এক পর্যায়ে জানতে পারলাম ওই দিন অর্থাৎ শনিবার স্থানীয় বাংলাদেশীদের আয়োজনে কুরআন স্টাডি সাইকেলের আয়োজন করা হয়েছে। পাশাপাশি ওয়াকিবহাল হলাম প্রতি মাসেই এখানে এজাতীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে। তবে অংশগ্রহণকারীদের অধিকাংশ ইন্টেলে কর্মরত বাংলাদেশী প্রকৌশলী।

সবকিছু সেরে যখন হোটেলে পৌঁছলাম, তখন রাত প্রায় ১০ টা। বাহিরে তখনো বেশ বৃষ্টি! কিছুটা ফ্রেশ হয়ে ঘুমানোর প্রস্তুতিপর্বে লক্ষ্য করলাম টেবিল ল্যাম্পের ঠিক নিচে সোনালী অক্ষরগুলো বেশ চকচক করছে! একটিতে লিখা “হলি বাইবেল” অন্যটিতে “দ্যা বুক অফ মরমন!” হঠাৎ আশপাশ বেশ শুন্য মনে হলো। এক অভূতপূর্ব অনুভূতি গ্রাস করলো। দ্রুত লাইট বন্ধ করে পা থেকে মাথা পর্যন্ত কম্বল মুড়িয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। পরদিন ঠিক এগারোটায় ঘুম ভাঙ্গলো। চোখ মেলে দেখি কিতাব দুটো ঠিক আগের জায়গায় আছে।

পরদিন সোমবার জয়েনিং ডেইট। সকাল নয়টায় রিপোর্ট করতে হবে। হোটেলের ঠিক পেছনেই অফিস। নির্ধারিত সময়ে অফিসে পোঁছেই সুপারভাইজারকে কল দিলাম। যাক ঝামেলা ছাড়াই সব কিছু ঠিকঠাক। সব শেষে জানতে চাইলাম, কিচেন আর রেস্ট রুমের অবস্থান। ইন্ডিয়ান সুপারভাইজার হেসে বললো শুধু কিচেন আর রেস্ট রুম না, তুমি চাইলে কাজ শেষে জিমও করতে পারো, আর শাওয়ার রুমেরও ব্যাবস্থা আছে। আর একই ল্যাবে মুসলিম সহকর্মী পাওয়ার কিছুটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করলাম, অন্তত আশেপাশে মসজিদ কিংবা হালাল খাবারের খোঁজে সহযোগিতা পাওয়া যাবে।

বাংলাদেশ, (কমা) ইন্ডিয়া
আমেরিকার এক অঙ্গ রাজ্য থেকে অন্য অঙ্গরাজ্যে বসবাস বা চাকুরীর উদ্দেশ্যে স্থানান্তরের প্রক্রিয়ার যেই বিরক্তি পোহাতে হয় ড্রাইভার’স লাইসেন্স পরিবর্তন সেগুলোর মধ্যে অন্যতম। এমনিতে নিউইয়র্ক এবং ক্যালিফোর্নিয়ার লাইসেন্স অন্যান্য অঙ্গরাজ্যে এলিট মর্যাদা পায়। তারপরেও আমাকে নিদিষ্ট ফি ও পরীক্ষা দিয়েই লাইসেন্স পরিবর্তন করতে হবে!
নিদিষ্ট দিনে প্রয়োজনীয় দস্তাবেজ সঙ্গে নিয়ে স্থানীয় ডিএমভি তে (ডিপার্টমেন্ট অফ মোটর ভিহিকিল’স ) হাজিরা দিলাম। লাইনে দাঁড়িয়ে ফরম পূরণ করে কাউন্টারে জমাদানের সময় দীর্ঘদেহী শ্বেতাঙ্গ ভদ্রলোক, ফরম দেখে আমার জন্মস্থান ও অরগ্যান ডোনার কিনা জিজ্ঞাসা করলেন অতঃপর এক্সাম রুমের দিকে অঙ্গুল দিয়ে ইশারা করলেন।
আধাঘণ্টা পর পরীক্ষা শেষে আবার কাউন্টারের সামনে এসে দাঁড়ালাম, আমার ঠিক পেছনে এক ভারতীয় মহিলা। এবার ভদ্রলোক পুনরায় আমাকে, আমার নাম ঠিকানা সহ যাবতীয় তথ্য শেষ বারের মতো চেক করতে বললেন। কম্পিউটারের স্ক্রিনের তথ্য দেখে আমি কিছুক্ষন চুপ করে রইলাম। আমার সুরত দেখে ভদ্রলোকের হাসি গায়েব। ঠিক কিছুক্ষণ আগেও আমাকে নলেজ টেস্টে উত্তীর্ণ হবার জন্য অভিনন্দিত করেছেন!

ঃ সো ইয়াং ম্যান, হ্যাভ ইউ গন থ্রু অল অফ ইওর ডিটেইলস ? ইজ ইট কারেক্ট দ্যো?

ঃ হহম, হোয়াট ড্যু ইও থিঙ্ক?

ঃ প্লীজ ডাবল চেক, আই ডোন ওয়ান ইও টু কাম হেয়ার অ্যাগেইন

ঃ ওয়েল, মেইক সেন্স। বাট উড ইও টেল মি, হোয়াই ডিড ইও পুট অ্যা কমা অ্যান্ড ইন্ডিয়া রাইট নেক্সট টু বাংলাদেশ? ডু ইও থিঙ্ক ইট’স অ্যা স্টেইট বিলংস টু ইন্ডিয়া? ডু ইও ওয়ান মি টু শো মাই প্যাসপোর্ট ?

ঃ ওহ সিরিয়াসলি, আই ডিড’ট নো দ্যাট! ল্যাট মি ফিক্স ইট

ঃ থাঙ্কস। রিমেম্বার নেক্সট টাইম, নিইদার ইন্ডিয়া নর পাকিস্থান। টেক কেয়ার।


আমার পেছনে দাঁড়ানো ভারতীয় মহিলা এতোক্ষণে রেগে অগ্নিমূর্তি। কিন্তু কিছুই করার নাই। কিছুক্ষন পর ভিশন টেস্ট ও নতুন লাইসেন্সের জন্য ছবি তুলে আমার পাঞ্ছড (ফুটো করা ইনভ্যালিড) নিউইয়র্কের লাইসেন্স নিয়ে আহত হৃদয়ে ডিএমভি অফিস থেকে বেরিয়ে আসলাম।
চলবে ...
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পথ হারিয়ে-খুঁজে ফিরি

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৩৩


মনটা ভালো নেই। কার সাথে কথা বলবো বুঝে পাচ্ছি না। বন্ধু সার্কেল কেও বিদেশে আবার কেও বা চাকুরির সুবাদে অনেক দুরে। ছাত্র থাকা কালে মন খারাপ বা সমস্যায় পড়লে... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×