বা হাত টা নেই। বা ‘পা’টাও ভালো না। খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটতে হয়।তবু তার বসে থাকার উপায় নেই। বসে থাকলে রানী দের দিন চলে না। হুম সে রানী বটে।নামেই সে রানী। এই বুড়ো বয়সেও তাকে ভিক্ষা করে পেট চালাতে হয়।
দশ বছর ভিক্ষা করে তার নিজের এবং এক মাত্র নাতনী কমলার পেট সে চালিয়েছে।কিন্তু এখন আর তার পা চলে না।কমলাও হয়েছে তার যৌবন কালের মতই সুন্দরী। তাইতো কমলা কে কাজে পাঠানোও অনেক ভয়। তাই কমলা ঘরে বসে বসে এক দুটো নকশী কাথার কাজ করে।কিন্তু এভাবে দিনে তিন বেলা ভাত পাওয়া যায় না।তাইতো রানী তার ভিক্ষার টাকা থেকে তিল তিল করে গড়া সঞ্চয় দিয়ে তার গাঁয়ের বাজারে একটা চা এর স্টল দিতে চেয়েছিলো।কিন্তু সেখানেও বাজারের মানুষদের সে কি আপুত্তি।মেয়ে মানুষ দোকান করবে? বাজারে পুরুষ মানুষের সাথে কথা বলবে, সমাজে পচন ধরে যাবে না?
বুড়ি রানীর আর বাজারে চায়ের স্টল দেওয়া হয়নি।তাই বলে রানী থেমে থাকে নি।তাকে তো বাঁচতে হবে, নাকি? তাই সে ঠিক করলো, তার ভাঙা বাড়ির টার ঠিক সামনেই একটা তিন রাস্তার মোড়। সেখান দিয়ে অনেক মানুষের চলাফেরা। বুড়ি, কমলা আর এক গরীব চাষার সহায়তায় সেই রাস্তার ধারেই একটা মাচা তৈরি করে সেখানে তার একমাত্র জীবিকার দাড় খুলে বসলো।
বয়স তো কম হয়নি। তাই খুব ভালো চা বুড়ি বানাতে পারে না।ভুল করে কখনো চায়ে চিনি দেয় না, কখনো বা বেশি দিয়ে ফেলে। তবু তার দোকান চলে যায়। রাস্তা দিয়ে যাওয়া আসার সময় পথিক রা চা খাওয়ার ছলে বসে জিরিয়ে নেয়।
বুড়ি রানীর এখন একটাই চিন্তা অথবা বলা যায় একটা স্বপ্ন, কমলার একটা ভালো বিয়ে দেওয়া।কমলা সুন্দরী হলে কি হবে, ভিক্ষুকের নাতনী কে কেউ বিয়ে করতে চায় না।তাছাড়া বিয়ে দিতে হলে ছেলে পক্ষ কে যৌতুক দিতে হবে। সে টাকা সে পাবে কোথায়? অথচ কমলার বাড়ন্ত শরীর...
একদিন বিকেল বেলা ভ্যানে করে এক নব দম্পতী তার চায়ের দোকানে এসে বসলো।দেখেই বুঝা যায় তারা শহর থেকে গ্রাম দেখতে এসেছে।এই যে শুনছেন, আমাদের দুইটা চা দিতে পারবেন?
রানীর আজ খুব জ্বর। গা কেপে কেঁপে উঠছে।তবু তাকে চা বানাতে হবে।আজকে ঘরে খাবার মত তেমন কিছু নেই।সন্ধ্যা পর্যন্ত যদি কিছু চা বিক্রি হয় তবেই না দুটো ডাল ভাত কপালে জুটবে।
কাঁপা কাঁপা হাতে চা বানিয়ে নিয়ে এসেছে।কিন্তু একটা মাত্র হাত চা টা বাড়িয়ে দেওয়ার সময় হাত টা কেপে উঠায় চায়ের কাপটা নতুন বউয়ের শাড়িতে পরে গেলো।আর অমনি শহুরে ভদ্রতার মুখোশের আড়াল থেকে ভিতরের পশু টা খানিকটা গর্জে নিলো।
রানী বকাঝকা কানে নিলো না।কারন এই রকম গালাগালি শুনে সে অভ্যস্ত। বুড়ি বরং নিঃশব্দে হেসে বলল, মাফ করে দেন, শরীর টা একটু খারাপ তো... আমি পঙ্গু বুড়ি মানুষ...
নতুন বউয়ের চোখে একটু করুণা ফুটে উঠলেও, লোকটা চোখ দুটো খুঁজো করে চা এর বিলটা মিটিয়ে দিয়ে চলে গেলো।
হ্যা। রানী পঙ্গু।কিন্তু এই রানী একসময় সত্যিকারের রানীই ছিল বটে।কিন্তু সেই রানীর গল্প কেউ জানে না। জানতে চায় না। রানী মাঝে মাঝেই কল্পনায় ফিরে যায় সেই ভয়াবহ দিন গুলিতে।কিন্তু তার সেই অতীতের দিন গুলিতে সে বড় একা, অসহায়। সেখানে শুধু বিষাদ ছাড়া সে আর কাওকে খুজে পায় না। তবু সে ফিরে যায় বার বার।কারন শত বিষাদের মাঝেও সেখানে সে এক অন্য রানী কে সে দেখতে পায়।সে যে বিরঙ্গনাদের রানী!
সময় টা ১৯৭১... দেশের সর্বত্র খুব যুদ্ধ চলছে।রানীদের গ্রামে তখনো পাক বাহিনী প্রবেশ করে নি।তবে শান্তি কমিটি নামে একটা কমিটি গঠন হয়েছে গ্রামে। তারা পাকিস্তান বলে দিন রাত চেচায়।আর মাঝে মাঝে এর তার বাড়ি অকারনে খুজ খবর করে।রানীর বিয়ে হয়েছে প্রায় দুই বছর। স্বামী গ্রামের একটা প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক।রানী তিন মাসের গর্ভবতী। স্বামী কে নিয়ে তার সুখের সংসার।
হঠাৎ এক রাতে গ্রামে পাক বাহিনী ঢুকে পরে। গ্রামের প্রায় সব বাড়ি ঘর সেই শান্তি কমিটির লোকজনের সহায়তায় জ্বালিয়ে দেয়।শিশু, বৃদ্ধ, যুবক, নির্বিচারে শত শত লোক গুলি করে হত্যা করে।অন্ধকারে যে যেদিকে পারে ছুটে পালাতে চেষ্টা করে। কিন্তু খুব কম মানুষই মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পায়।সেই রাতে ছুটে পালানোর সময় কখন যে রানীর স্বামী তার হাত থেকে ছুটে যায় সে টের পায় না। রানী বাড়ির একটু দুরেই এক জঙ্গলের ভিতর পালিয়ে থাকে।সে তার স্বামীর কথা ভেবে নিঃশব্দে চোখের জল ফেলে।কারন সে জানে না তার স্বামী বেঁচে আছে কিনা। চারিদিকে শোকের মাতম উঠে। কান্না আর আর্তনাদে গ্রামের বাতাস ভারী হয়ে উঠে।
দিনের আলো ফুটে উঠেছে। পাক বাহিনী প্রাইমারী স্কুলে ক্যাম্প খুলে বসেছে। সেখানে গ্রামের বেঁচে যাওয়া, যুবক, বৃদ্ধ, যুবতী মেয়ে সবাইকে শান্তি কমিটির লোকজন খুজে খুজে ধরে নিয়ে আসে।
রানী পাতার আড়াল গলে খসে পরা সূর্যের এক খণ্ড আলো দেখে বুঝতে পারে ভোর হয়েছে।কিন্তু সে এখনো জানে না এই আলোতে তার জীবনের আঁধার কখনই কাটবে না। রানী স্বামীর খুঁজে জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আসে। সমস্ত গ্রাম যেন পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। চারিদিক কেমন থম থমে ভাব। কোন মানুষ জন নেই।
স্বামী কে খুঁজতে খুঁজতে হঠাৎ তার এক আপন চাচা শশুর কে সামনে পায়। হাউমাউ করে কেঁদে ফেলে রানী। তার স্বামীর খুজ জানে কিনা জানতে চাইলে তার চাচা জানায়, শাহেদ বেঁচে আছে। এবং মেলিটারী ক্যাম্পে খুব ভালো আছে। এবং সে রানী কে সেখানে নিয়ে যেতে এসেছে।রানীর জানি কেমন সন্দেহ হয়।কিন্তু তার আপন চাচা তো আর মিথ্যা বলবে না? রানী চাচার সাথে ক্যাম্পে যায়।
ক্যাম্পের কাছে আসতেই দেখে স্কুলের মাঠের বড় কাঁঠাল গাছের সাথে কয়েকজন যুবক কে রক্তাক্ত অবস্থায় বেঁধে রাখা হয়েছে। কারো জ্ঞান আছে কিনা বুঝা যাচ্ছে না। ক্যাম্পের ভিতর থেকে কেমন থেমে থেমে আর্ত চিৎকার ভেসে আসছে।
রানী অবস্থা বুঝে ফেলে। ছিঃ তার আপন চাচা তার সাথে এতো বড় প্রতারণা করতে পারলো?ঘৃণায় তার বমি আসে।সে দৌড় দিয়ে পালাতে চায়। কিন্তু পারে না। তার চাচা ধরে ফেলে।ধরে টেনে টেনে ক্যাম্পের ভিতর নিয়ে যায়।কিন্তু ভিতরের অবস্থা দেখে রানী ভয়ে শিউড়ে উঠে। সেখানে প্রায় পঞ্চাশ জনের মত যুবতী মেয়ে সহ কিছু মধ্য বয়স্কও আছে। সবার দেহের কাপড় কেমন ছিন্ন ভিন্ন।প্রায় সবাই কেমন চুপচাপ। দুই একজন গোঙাচ্ছে। রানী ঠিক যেন বুঝতে পারে না এদের ঠিক কি ভাবে নির্যাতন করা হয়েছে।
সারাদিন ক্যাম্পের ভিতর শুধু আর্ত চিৎকার আর পাক বাহিনীদের উল্লাস।বিকেল পর্যন্ত বন্দী মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকে।
সন্ধ্যা বেলা। জানালার ফাক দিয়ে তাকাতেই রানী দেখে বেশ কিছু যুবককে বেঁধে নদীর পাড়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। খেয়াল করে দেখে সেখানে তার স্বামী সাহেদেও আছে। তার মন খুব বিচলিত হয়ে উঠে। শাহেদ শাহেদ বলে চিৎকার করে। কিন্তু একটু পরেই আচমকা গুলির শব্দে রানীর চিৎকার ঢাকা পরে যায়।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে এখন রাত।স্বামী শোকে কাতর রানী কে এক পাকি সৈনিক অন্য একটি রুমে নিয়ে যায়। শুরু হয় তার উপর নির্যাতন।তার কাপড় টেনে শিয়াল কুকুরের মত রানীর শরীরে হামলে পরে। রানী কত আকুতি মিনতি জানায়, তার গর্ভে একটা সন্তান আছে বলেও সে রেহাই পায়না। পাকি জারজ টা তাকে এইভাবে পর পর তিন রাত নির্যাতনের পর ছেড়ে দেয়।
ছিন্ন ভিন্ন দেহ নিয়ে বেড়িয়ে যাওয়ার সময় দেখে তার আপন চাচা তাকে দেখে নির্লজ্জের মত হাসতেছে।
তিন দিন পর সূর্যের আলোয় রানীর চোখ ধাধিয়ে যায়। দুর্বল শরীর ঠিক ভাবে হাঁটতে পারে না।কোথায় সে যাবে কি করবে কিছুই যেন বুঝে উঠতে পারে না।
ঘৃণা আর লজ্জায় রানী নদীর দিকে ছুটে যায় আত্মহত্যা করতে।কিন্তু সেখানে শত শত লাশের ভিড়ে একটি লাশ তার নজরে আসে। তার স্বামী। শাহেদ। এতো এতো মৃত মানুষ দেখে সে ভুলে যায় যে সে জীবিত।ওইদিন সে নদীর পাড়েই স্তব্দ হয়ে বসে কাঁটিয়ে দেয়।
রাতের বেলা সে প্রচণ্ড গুলাগুলির আওয়াজ পায়।
সকাল হলেই সে আবার গ্রামে প্রবেশ করে। দুই একজন মানুষ এদিক সেদিক ভয়ে ভয়ে পথ চলতে দেখা যায়।এদিক সেদিক থেকে চাপা গুঞ্জন ভেসে আসে মুক্তি বাহিনীর কথা।
মুক্তি বাহিনীর কথা শুনে হঠাৎ রানী কেমন জানি বদলে যায়।কোথায় মুক্তি? এখন এসে কি লাভ? আমার যা কেড়ে নেওয়ার তাতো কেড়ে নিয়েছে। তারা কি পারবে আবার তা ফিরিয়ে দিতে? আবার সে চেতনা ফিরে পায়। মনে মনে সে এক কঠিন পণ করে বসে। খুব সাহসী হয়ে উঠে। কোথা হতে এতো সাহস পেলো সে জানে না। কিন্তু তাকে লড়তে হবে।যা হারাবার সে হারিয়েছে। কিন্তু আর কাওকে যেন হারাতে না হয় তার জন্য লড়তে হবে। কিন্তু কোথায় মুক্তি? কোথায় পাবো তাদের দেখা?
মধ্য রাতে একটা মুক্তি বাহিনীর গ্রুপ গ্রামে প্রবেশ করে।দুই জন শান্তি কমিটির লোক এবং আসার পথে রাস্তায় চেক পোষ্টে থাকা চার জন সৈনিক তাদের হাতে নিহত হয়। তাদের প্রথম উদ্দেশ্য এই গ্রামে ঢুকার প্রধান রাস্তার মধ্যে নদীর উপর যে ব্রীজ আছে তা বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়া তাতে করে পাক বাহিনী বিচ্ছিন্ন হয়ে পরবে। এবং তারপর ক্যাম্পে আক্রমন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে। ব্রিজের কাছ পর্যন্ত যাওয়া টাই মুশকিল। সেখানে প্রায় তিরিশ জন সৈনিক মর্টার সেল সহ এক অভেদ্য অ্যামবুশ করে দিন রাত ব্রিজ পাহারা দিচ্ছে।
গুপনে খুজা খুজি করে মুক্তি বাহিনীর দেখা পেয়ে এই সময় রানী এক সাহসী সিদ্ধান্ত নেয়।তার প্ল্যান মুক্তি কমান্ডার কে জানায়।কমান্ডার বিপদের ঝুকি জেনেও এ ছাড়া আর কোন উপায় না দেখে রানী কে সমর্থন দেয়।
রানী দুই দিনে তার মত আরও বেশ কয়েকজন বিরঙ্গনা কে ধরে এনে তাদের কে তার মত করে প্রস্তুত করে। রানীরা ১০ জন। বিকেল বেলা গোসল করে যথা সম্ভব শরীর টাকে ফ্রেশ করে সেজে গুজে সন্ধার পর তারা ব্রিজের দিকে আসে।
ব্রিজের কাছে আসতেই দূর থেকে এক সৈনিক চিৎকার করে উঠে। রানী কিছুই বুঝতে পারে না। একটু পর এক সৈনিক তাদের দিকে আগিয়ে আসে। রানী সাহস করে সৈনিকের সামনে তার কাপড় টা হাঁটুর উপর তুলে একটু মুচকি হাসে। বাকি সবাই কে রানী পাশেই জঙ্গলের সামনে রেখে এসেছে। তাদের দেখে সৈনিক টা দাত বের করে হাসে।
জঙ্গলের ভিতরেই ঘাপটি মেরে সুযোগের অপেক্ষায় বসে আছে মুক্তি সেনারা। এগিয়ে আসা সৈনিক টা ফিরে গিয়ে আরও চার জন সৈনিক সাথে করে নিয়ে আসে। রানী তাদের ছলনায় ভুলিয়ে জঙ্গলের কাছে নিয়ে আসে।
রানী তাদের ইসারায় জঙ্গলের ভিতর প্রবেশ করতে বলে। সৈনিক রা কোন কথা বলে না। একটু ইতস্ত করে দাত বের করে হাসতে হাসতে জঙ্গলের ভিতর ঢুকে মেয়েদের উপর ঝাপিয়ে পরে। ঠিক সেই মুহূর্তে মুক্তি সেনারা নিঃশব্দে এসে কুকুর গুলি কে নিঃশব্দে হত্যা করে।
এইভাবে সাহসিকতার সাথে পর পর তিনবারে বিশ জন সৈনিক কে ভুলিয়ে নিয়ে এসে জঙ্গলের ভিতর হত্যা করা হয়। কিন্তু চতুর্থবার সৈনিকেরা ফিরে না আসায় ব্রিজের বাকি সৈনিকেরা বুঝে ফেলে। তারা রানী কে বন্দী করে এবং সৈনিকদের খুঁজতে ব্রিজে মাত্র দুই জন পাহারা রেকে আট জনে জঙ্গলে প্রবেশ করে। কিন্তু জঙ্গলে ফাঁদ পেতে থাকা বিশ জন গেরিলা মুক্তির সামনে তারা কুলিয়ে উঠতে পারে নি... প্রচণ্ড গুলাগুলি হয় জঙ্গলে। একটা গ্রেনেডের সেল রানীর বাম হাত ছিনিয়ে নেয়। পায়ে প্রচণ্ড আঘাত পায়। বাকি দশ জন মেয়ের মাঝে দুইজন মেয়ে এবং একজন মুক্তি শহীদ হয়।কিন্তু তারা সফল হয়।তারা আর একটি নতুন সূর্যের অপেক্ষায় দিন গুনে।
হ্যা, এই সেই রানী।এবং এই তার জীবনের না বলা গল্প। যা আমরা কখনো শুনি না। শুনতে চাই না। এইরকম হাজারো রানী তখন নিজের সম্ভ্রম দিয়ে লড়াই করেছে। দেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছে। কিন্তু ইতিহাসের পাতায় তাদের স্থান হয় নি। রানীরা পুরুষ তান্ত্রিক সমাজে লোক চক্ষুর অন্তরালেই পরে থাকে।কোন এক গ্রামের মেঠো পথের ধারে জরা জীর্ণ চায়ের কাপে তাদের জীবন ঘুরপাক খায়।