আলোচনায় ‘রাজি’ দুই পক্ষ, জাতিসংঘ দূতও আশাবাদী

আলোচনা চালিয়ে যেতে ‘বড় দুই দলের সম্মতির’ মধ্যে দিয়ে রাজনৈতিক সংকট উত্তরণের পথে ‘ইতিবাচক অগ্রগতি’ হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিবের দূত অস্কার ফার্নান্দেজ-তারানকো।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Dec 2013, 11:35 AM
Updated : 11 Dec 2013, 02:13 AM

নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে চার দিন ধরে দফায় দফায় বৈঠকের পর মঙ্গলবার বিকালে এক বিবৃতিতে এ কথা জানান জাতিসংঘ দূত।    

তিনি বলেন, “দুই পক্ষই সদিচ্ছার সঙ্গে সংলাপ চালিয়ে যেতে এবং সমঝোতায় আসার জন্য একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছে, যাতে উদ্বেগ কমিয়ে আনা যায়, আস্থা ফিরিয়ে আনা যায়।”    

ফার্নান্দেজ-তারানকো জানান, এই অগ্রগতির কারণেই ঢাকায় তার সফরের সময় একদিন বাড়ানো হয়েছে; সংলাপ এখনো চলছে। 

তিনি বলেন, “বর্তমান প্রেক্ষাপটে আজকের দিনটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। জাতিসংঘ মহাসচিবের প্রতিনিধির আহ্বানে সাড়া দিয়ে দুই পক্ষই দেখা করেছে এবং আলোচনা শুরু করেছে।” 

একসঙ্গে বসার গুরুত্বপূর্ণ এই সিদ্ধান্ত নেয়ায় দুই পক্ষকে স্বাগত জানান জাতিসংঘ মহাসচিবের দূত।

“এর মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক নেতৃত্বের দায়িত্ববোধ ও সাহসিকতার পরিচয় মিললো। পাশাপাশি বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশার প্রতিও সাড়া দিলেন তারা।” 

তিনি এই বিবৃতি দেয়ার ঘণ্টা দুই আগেই ঢাকায় ইউএনডিপি কার্যালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সন্ধ্যায় হোটেল সোনারগাঁওয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের দূতের সংবাদ সম্মেলন স্থগিত করা হয়েছে। এর নতুন সময় ও স্থান পরে জাননো হবে।

পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জানানো হয়, শেখ হাসিনার সঙ্গে ফার্নান্দেজ-তারানকোর দ্বিতীয় দফার বৈঠকের সময়ও একদিন পিছিয়ে বুধবার নেয়া হয়েছে।

এরইমধ্যে ফার্নান্দেজ-তারানকো রাজধানীর গুলশান এলাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক নিল ওয়াকারের বাড়িতে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন, যা নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে ব্যাপক লুকোচুরি চলে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমদ ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা গওহর রিজভী এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও মঈন খান এবং সহসভাপতি শমসের মবিন চৌধুরী ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

গুলশান এক নম্বরে ১৩৯ নম্বর বাড়িতে দুপুর আড়াইটা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত এই বৈঠকটি চলে। অথচ এই বৈঠকের খবর পেয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকে বারিধারার সাত নম্বর রোডে ইউএনডিপির আরেক কর্মকর্তার বাড়ির সামনে। 

ফার্নান্দেজ-তারানকো ঢাকায় টয়োটার যে ‘এসইউভি’ ব্যবহার করছেন, সেই গাড়িটিকে বেলা ৩টার দিকে বারিধারার ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতেও দেখেন সংবাদকর্মীরা। তবে ওই গাড়িতে যে জাতিসংঘ দূত ছিলেন না- সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায় অনেক পরে।

এরপর বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে নিজেই হোটেল সোনারগঁওয়ে এসে বিবৃতি দেন ফার্নান্দেজ-তারানকো। বিএনপির পক্ষ থেকেও বিবৃতি দিয়ে বৈঠকের বিষয়টি স্বীকার করা হয়। 

‘সর্বদলীয়’ সরকার গঠন করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নির্বাচনে এগিয়ে যাওয়া এবং তফসিল প্রত্যাখ্যান করে নির্দলীয় সরকারের দাবি নিয়ে বিএনপির হরতাল-অবরোধে দেশে রাজনৈতিক সহিংসতার মধ্যেই বাংলাদেশে আসেন বান কি-মুনের দূত ফার্নান্দেজ-তারানকো।

ঢাকায় ব্যস্ত সময়ের মধ্যে সফরের তৃতীয় দিন সোমবার সংবাদ মাধ্যমের সামনে প্রথম মুখ খুলে তিনি শুধু বলেন, সদিচ্ছা থাকলে ‘শান্তিপূর্ণ সমাধান’ এখনো সম্ভব।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদও সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, সংকট নিরসনে ‘গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা চলছে’। তবে এই অবস্থায় তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি নন।