somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

৪২ বছর পর পাকিস্তানি সৈন্যদের নির্মম নির্যাতনের কথা জনসমক্ষে বললেন সিরাজগঞ্জের ১৪ জন বীরাঙ্গন

১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যারা আমাদের নির্যাতন করেছে কেন তাদের বিচার হলো না?

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় হানাদার পাকিস্তান বাহিনীর দ্বারা নির্যাতিত ১৪ জন বীরাঙ্গনা ৪২বছর পর মুখ খুললেন জনসমক্ষে। সিরাজগঞ্জের এই বীরাঙ্গনারা বললেন, কিভাবে এদেশীয় দোসর রাজাকারদের সহায়তায় বর্বর পাকিস্তানি সৈন্য তাদের ওপর পৈশচিক নির্যাতন চালিয়েছে।
কিভাবে তারা নির্যাতিত হয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সময়। তারপর কিভাবে এই স্বাধীন বাংলাদেশে তারা এখনো পদে পদে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। বললেন, এখন তাদের বেঁচে থাকাটাই একটা কষ্টের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে সে কথাও। ’৭১-এর কথা বলতে বলতে তারা কেঁদে ফেললেন। আর কাঁদালেন তাদের, যারা তাদের কথা শুনছিলেন।
নির্যাতিত হাসনাবানু বললেন, কোলের শিশু আমার বুক থেকে কেড়ে নিয়ে ছুড়ে ফেলে দিয়ে পাকিস্তানি সৈন্যরা একে একে আমার উপর অত্যাচার চালায়। মুক্তিযুদ্ধের সময় ৩ বছরের সন্তান, মা, মাসিকে সঙ্গে নিয়ে নিরাপদ স্থানে যাচ্ছিলাম। পথিমধ্যে নিজগ্রামের রাজাকার কুদ্দুস পাকিস্তানি আর্মির হাতে ধরিয়ে দেয় আমাদের। মুক্তিযুদ্ধে আমি সব হারিয়েছি, স্বামী আমাকে ঘরে নেয়নি। সমাজের কেউ আমাকে এবং আমার মতো যারা আছে তাদের ভালো চোখে দেখে না। আমরা কাজ করে খেতে চাই, কেউ আমাদের কাজ দেয় না। আমরা যে কিভাবে বেঁচে আছি তা কেউ জানেনা। আমি আজ এই সমাজের মানুষের কাছে প্রশ্ন করতে চাই আমাদের কি অপরাধ? আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে কি পেলাম? আমাদের যারা অত্যাচার করল, যে রাজাকাররা পাকিস্তানিদের হাতে আমাদের তুলে দিলো কেন আজও তাদের বিচার হলো না?
সূর্যবানু বলেন, বড়ভাই মুক্তিযুদ্ধে গেছে গ্রামের অনেকেই জানতো। একদিন রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও স্থানীয় রাজাকার আলবদরবাহিনী গ্রাম ঘেরাও করে। ঘরে ঢুকে আমাকে তুলে নিয়ে যায় ক্যাম্পে। তারপর রাতভর আমার উপর নির্যাতন চালায়। আমি ওদের কাছে হাত পা ধরে মিনতি করেছি। বলেছি এই অত্যাচারের চেয়ে আমাকে মেরে ফেল। তিন দিন ক্যাম্পে রেখে অসুস্থ অবস্থায় আমাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।
আরেক বীরাঙ্গনা কমলা বেগমকে ৪ দিন আটকে রাখা হয় সিরাজগঞ্জ কলেজ ক্যাম্পে। আটক অবস্থায় রাতদিন তার উপর বর্বর অত্যাচার চালায় পকিস্তানি আর্মিরা। এ ক্যাম্পে শান্তিকমিটির নেতারা ছাড়াও বিহারীরাও এসেছিল।
মুক্তিযুদ্ধের ৪২ বছর পরে এই বীর নারীদের হাতে প্রিতবছেরর মতো নির্মূল কমিটির পক্ষ থেকে তুলে দেয়া হয় নগদ ৫০০০ (তিন হাজার) টাকা, শাড়ী, লুঙ্গি, চাল, ডাল, দুধ, স্যালাইনসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিষপত্র।
সংবর্ধনা সভায় উপস্থিত ছিলেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল, শহীদজায়া শ্যামলী নাসরীন চৌধুরী, অধ্যাপিকা মাহফুজা খানম, সাংবাদিক জুলফিকার আলী মাণিক, সাংবাদিক ফজলুর রহমান, শিল্পী অমল দাস, সাংবাদিক আমিনুল ইসলাম চৌধুরী, ডা. জহুরুল হক রাজা, এডভোকেট রহমান, এডভোকেট হেদায়েতুল ইসলাম, আব্দুল হাই তালুকদার, গাজী শফিকুল ইসলাম শফি, আনু ইসলাম, হেলালউদ্দিন প্রমূখ।
সাফিনা লোহানীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সংবর্ধনা সভায় শাহরিয়ার কবির বলেন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সৈন্য ও তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার আলবদরদের দ্বারা নির্যাতিত মা বোনদের সাহস করে বলতে হবে সেদিনের কথা। তাহলেই সারা দেশের মানুষ, পৃথিবীর মানুষ বুঝতে পারবে কি পাশবিক অত্যাচার করেছে তারা। তাদের বিচারের দাবি আমরা করছি করবো। মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত নারীর সংখ্যা দুই বা আড়াই লাখের কথা উল্লেখ করলেও প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশি। শাহরিয়ার কবির আরও বলেন, একজন নারীকে ধর্ষণ করা মানে মানবিকতাকে ধর্ষণ করা। মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা নারীদের ইজ্জত হরণ করেছে এখন তারাই ক্ষমতায়। দেশটাকে আবার তারা পাকিস্তান বানাতে চায়। সে জন্য আমাদের ’৭১-এর মতো আবার একটা যুদ্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, নিজামী, মুজাহিদ, সাকা চৌধুরীরা যতদিন সরকারে থাকবে ততোদিন বাংলাদেশের ভাবমুর্তি বিনষ্ট হবে।
শহীদজায়া শ্যামলী নাসরীন চৌধুরী বলেন, মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত মা-বোনেরা আপনারা এদেশের সেরা সন্তান। এদেশের সামনের সারিতে স্থান হওয়ার কথা আপনাদের। আমরা সেটা করতে ব্যর্থ হয়েছি। এ লজ্জা আমাদের। আপনারা মাথা নিচু করে থাকবেন না। আপনারা এই দেশের জন্য মূল্য দিয়েছেন এদেশ আপনাদের, এ দেশে মাথা উঁচু করে চলবেন আপনারা।
অধ্যাপিকা মাহফুজা খানম বলেন, আজ হোক কাল হোক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবেই। আজ সময় এসেছে রাজাকার আলবদরদের মূলোৎপাটন করার। বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের দল নয়, তাদের জন্মই হয়েছিল রাজাকার যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসন করার জন্য।
কাজী মুকুল বলেন, আমাদের রাজনীতিকে শুদ্ধ পথে এগিয়ে নিতে হবে। সাম্প্রদায়িক ও ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে হবে। ’৭২-এর সংবিধান ফিরে পাওয়ার জন্য তিনি সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে বীরঙ্গনাদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন, বীরাঙ্গনা রহিমা, বাহাতন, রোকেযা, নূরজাহান, রাহেলা খাতুন, আছিয়া খাতুন ও এজবাহাতন।
সমাজকর্মী সাফিনা লোহানীর তত্বাবধানে সিরাজগঞ্জ উত্তরণ মহিলা সংস্থা দীর্ঘ ৪২ বছর ধরে ওই ১৪ জন নির্যাতিত মহিলাকে দেখাশোনা করে আসছিলেন। এদের প্রায় সবাই স্বামী পরিত্যাক্তা।
নানা জ্বরাব্যাধি এসে শরীরে ভর করেছে। বাসস্থান নেই, খাবার সংস্থান নেই।
তাই মরিয়া হয়ে বাংলাদেশের জনগণের সামনে আজকের প্রজন্মের মানুষের কাছে তাঁরা তুলে ধরেছেন ৭১ সালের সেই ভয়াল দিনের কথা।
অনুষ্ঠানে শাহরিয়ার কবির ঘোষণা দেন এই ১৪ জন বীরঙ্গনার দায়িত্ব নির্মূল কমিটি নেবে এবং আগামী ডিসেম্বর মাসে ঢাকায় এনে তাদের নাগরিক সংবর্ধনা দেয়া হবে।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:৫৫
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বর্গের নন্দনকাননের শ্বেতশুভ্র ফুল কুর্চি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ২২ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৭


কুর্চি
অন্যান্য ও আঞ্চলিক নাম : কুরচি, কুড়চী, কূটজ, কোটী, ইন্দ্রযব, ইন্দ্রজৌ, বৎসক, বৃক্ষক, কলিঙ্গ, প্রাবৃষ্য, শক্রিভুরুহ, শত্রুপাদপ, সংগ্রাহী, পান্ডুরদ্রুম, মহাগন্ধ, মল্লিকাপুষ্প, গিরিমল্লিকা।
Common Name : Bitter Oleander, Easter Tree, Connessi Bark,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচলের (সচলায়তন ব্লগ ) অচল হয়ে যাওয়াটই স্বাভাবিক

লিখেছেন সোনাগাজী, ২২ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬



যেকোন ব্লগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবর, একটি ভয়ংকর খারাপ খবর; ইহা দেশের লেখকদের অদক্ষতা, অপ্রয়োজনীয় ও নীচু মানের লেখার সরাসরি প্রমাণ।

সচল নাকি অচল হয়ে গেছে; এতে সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

হরিপ্রভা তাকেদা! প্রায় ভুলে যাওয়া এক অভিযাত্রীর নাম।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২২ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৩


১৯৪৩ সাল, চলছে মানব সভ্যতার ইতিহাসের ভয়াবহ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। টোকিও শহর নিস্তব্ধ। যে কোন সময়ে বিমান আক্রমনের সাইরেন, বোমা হামলা। তার মাঝে মাথায় হেলমেট সহ এক বাঙালী... ...বাকিটুকু পড়ুন

তুমি বললে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ২২ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৭

তুমি বললে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

খুব তৃষ্ণার্ত, তুমি তৃষ্ণা মিটালে
খুব ক্ষুধার্ত, তুমি খাইয়ে দিলে।
শ্রমে ক্লান্ত, ঘর্মাক্ত দেহে তুমি
ঠান্ডা জলে মুছে দিলে, ঊর্মি
বাতাস বইবে, শীতল হবে হৃদয়
ঘুম ঘুম চোখে পাবে অভয়।
তোমার আলপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনারই মেরেছে এমপি আনারকে।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২২ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


ঝিনাইদহ-৪ আসনের সরকারদলীয় এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ছিল তারই ছোটবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার আক্তারুজ্জামান শাহীন!

এই হত্যার পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আরেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×