somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাওয়া (ধারাবাহিক গল্প) -শেষ পর্ব

০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আবার আমি সাগরের মইধ্যে পড়ি। কুল কিনারা নাই।
রাইত হইয়া গেছে। আমি মাইয়াডারে কুলে নিয়া রিক্সায় উঠি। সাথে মর্জিনা। দুইজনে কোন কথা হয় না। মর্জিনা মাইয়াডারে কোলে নেয়। চুমা খায়। চোখ দিয়া পানি তখন পড়ছে। আমার চোখেও কি দুই ফোটা পানি আসলো? বলতে পারি না।
বস্তিতে যাইয়া ভাত খাইয়া তিনজনে ঘুমাইতে যাই। সকালে ঘুম থিকা উঠি। মর্জিনা সকালে এক বাসায় কাম করে। টাকা পয়সার জন্য না। সময় কাটানোর জন্য। আইজ আর কামে যাইবো না। মাইয়াডা যদি হারাইয়া যায়।

আমি আইজ কামে যামু। কবে ফিরবো জানি না। দুই, তিন, চাইর দিনও লাগতে পারে। মনের মধ্যে ভয় নিয়া আল্লার নাম নিয়া কামে রওয়ানা দিলাম। মর্জিনারে কইলাম-ভালো কইরা দেইখা রাখিস।

এর মধ্যে নাকি একদিন মাইয়া হারাইয়া গেছিলো। অনেক খুজাখুজি কইরা তারে পাইছে। আমারে জানায় নাই বকাবকির ভয়ে। আমি তিনদিন পরে আইসা শুনলাম। কতো বড় ফাড়া কাঁটছে। আল্লার কাছে শুকরিয়া করলাম। নামাজ কালাম পড়ি না। কিন্তু এই মাইয়া পাওয়ার পর থিকা আল্লার নাম বেশী বেশী মনে পড়ে। তবে এই তিনদিনে থানার থিকা ডাক পড়ে নাই। দারোগা সাব কি ভুইলা গেছে ব্যপারটা? এত কাম তার, ভুইলা গেলে আমি বাইচা যাইতাম।

তিনদিন পর আবার কামে যাইতে হইবো। এর মইধ্যে একটা কিনারা হইলে ভালো হইত। একদিন যায়, দুই দিন যায়, তিন দিনের দিন থানা থিকা ফোন আসে।
-মাইয়া নিয়া থানায় আসো।
-এক্ষনি আসতাছি স্যার।

আমি আর মর্জিনা মাইয়াডারে নিয়া থানার দিকে রওয়ান দেই। দারোগা সাব বাইরে বেঞ্চে বসতে বলে। আর কিছু বলে না। আমরা অপেক্ষা করতে থাকি। এক পুলিশরে ডাইকা ব্যপার জিজ্ঞাস করি। কিছু নাকি জানে না।

বুক দুরুদুরু করতে থাকে। আবার আটকাইবো না তো? আবার টাকা ......। নানা চিন্তা আসে মাথার ভিতরে।

ঘন্টা খানেক পরে একটা গাড়ি আইসা ঢুকে থানার ভিতরে। পছনের সিট থিকা একজন পুরুষ আর একজন মহিলা নামে। স্বামী-স্ত্রীই হইব মনে হয়। দুইজনের বয়সই চল্লিশের উপরে হইবো। সোজা দারোগার সাবের রুমে ঢুকে। একজন পুলিশ তাগো দারোগার সাবের রুমে নিয়া যায়। বুকের দুরু দুরু বাড়তে থাকে। আমার নামে কেস করবো না তো? জেলে যাইতে হইবো না তো?

ভিতর থিকা হাসির আওয়াজ পাওয়া যায়। দারোগার সাবের দোস্ত-বন্ধু হইবো মনে হয়। তুই তুকারি সম্পর্ক। একটু পরে আমার ডাক পড়ে। আমরা তিনজন ভিতরে যাই। দারোগা সাবের মুখে হাসি। আমার কোলের মাইয়াডারে দেখাইয়া মেম সাবরে কয়-দেখেন তো ভাবি পছন্দ হয় কি না। আমি আল্লারে আবার ডাকতে থাকি। আল্লা, মাইয়াডারে যেন তাগো পছন্দ হয়।

মেম সাবের মুখে হাসি। বলে –খুব পছন্দ হয়, ভাই। দেখে তো মনে হচ্ছে বড়লোকের মেয়ে। পরে কোন ঝামেলা হবে না তো।
দারোগা সাব কয়- ঝামেলা হলে আমি তো আছি।

মেমসাব চেয়ার থেকে উঠে আসে। দাঁড়াইয়া থাকা মর্জিনার কুল থেইকে সুমিরে কুলে নিতে চায়। সুমি যাইতে চায় না। একটু জোড়াজুরি করে। সুমি কাইন্দা দেয়।

আমি কই-আফা, ও লজেন খুব পছন্দ করে।

আমার হাত থেইকে দুইটা লজেন মেম সাবের হাতে দেই। মেম সাব সুমিরে লজেন দেখায়। সুমি কোলে যায়। লজেন নিয়া আবার মর্জিনার কোলে আসতে হাত বাড়ায়। মর্জিনা হাত বাড়ায় না। কিন্তু চোখ থিকা পানি গড়াইয়া পড়তে থাকে। আমার চোখেও পানি। দারোগা সাব একটা কাগজে সই করতে বলে।

আমি জিজ্ঞাস করি-কিসের দলিল, সার।

-তুমি যে মাইয়াডারে দান করতাছো তার দলিল। তোমার কোন ভয় নাই। এরা আমার বন্ধু। খুব ভালো মানুষ। তোমার কোন ক্ষতি হবে না।

-মাইয়াডা তো আমি কুড়াইয়া পাইছিলাম।

-তাও দলিলে লেখা আছে। তোমার কোন অসুবিধা নাই।

দারোগা সাবের কথার বিশ্বাস কইরা দলিলে সই করলাম। একটা বিপদ থিকা তো বাঁচলাম। পরে বিপদ আইলে, পরে দেখা যাইব।

মেম সাবের কোলে সুমি কান্না কাটি শুরু করছে। আমি আর মর্জিনা চার চোখ ভরা পানি নিয়া থানা থিকা বাইর হই। পিছন থিকা মেম সাব ডাকে। আমি পিছনে তাকাই। মেম সাবের হাতে পাঁচশ’ টাকার দুইটা নোট চোখে পরে। আমি “লাগবো না” কইয়া রিক্সায় উঠি। মর্জিনার গলায় হাত দিয়া বস্তির দিকে রওয়ানা দেই। মর্জিনা ফুপাইয়া কানতে থাকে।

সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:৫৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×