আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির প্রতিক্রিয়ায় জুমার নামাজের পর রাজধানীর মতিঝিল ও রামপুরা এলাকায় ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে জামায়াত-শিবির কর্মীরা।
Published : 13 Dec 2013, 01:26 PM
মতিঝিল ও আরামবাগ এলাকা থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিবেদক কামাল তালুকদার জানান, শুক্রবার নামাজের পরপরই জামায়াতকর্মীরা মিছিল বের করে এবং মতিঝিল-আরামবাগ প্রধান সড়কের পাশে এজিবি কলোনি ও আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ সংলগ্ন দুই গলির প্রায় সিকি মাইল এলাকায় ব্যাপক ভাংচুর-অগ্নিসংযোগ চালায়।
এ সময় সেখানে দাঁড় করিয়ে রাখা গাড়ি, ভ্যান, অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলসহ ১২ থেকে ১৫টি যানবাহন পুড়িয়ে দেয়া হয়। রাস্তার ওপর জ্বলতে দেখা যায় বেশ কয়েকটি রিকশাও।
আইডিয়াল স্কুলের গলিতে হলিডে মার্কেট তছনছ করার পাশাপাশি ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের আবর্জনা ব্যবস্থাপনা বিভাগের ১০ নম্বর ওয়ার্ড কার্যালয়েও আগুন দেয় জামায়াতকর্মীর।
হলিডে মার্কেটের দোকানদার হারুন জানান, নামাজের পরপরই ওই দুই গলি দিয়ে জামায়াত-শিবিরের দুটি মিছিল আসে এবং ‘ধর ধর’ বলে চিৎকার দিয়েই ভাংচুর-অগ্নিসংযোগ শুরু করে।
এ সময় একের পর এক ককটেল ও পেট্রোল বোমার বিস্ফোরণে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
জামায়াতকর্মীরা সেখানে দাঁড় করিয়ে রাখা প্রাইভেট কার, রিকশা ও ভ্যানে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেয়। ফুটপাতের হলিডে মার্কেটের জিনিসপত্র তছনছ করে এবং রাস্তায় জড়ো করে জ্বালিয়ে দেয়।
আরেক দোকানদার নূর আলম জানান, কাছেই পুলিশের একটি টহল দল থাকলেও কয়েকশ জামায়াত-শিবিরকর্মীকে এগিয়ে আসতে দেখে তারা পিছু হটে যায়। এরপর আশেপাশের এলাকায় প্রায় ২০ মিনিট ধরে তাণ্ডব চালায় মিছিলকারীরা।
পরে বাড়তি পুলিশ এসে শটগানের গুলি ছুড়ে জামায়াতকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় বলে পুলিশের মতিঝিল জোনের এডিসি মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান।
বিরোধী দলের অবরোধের কারণে টানা ছয় দিন কার্যত অবরুদ্ধ থাকার পর এদিন অনেকেই রাস্তায় নেমেছিলেন প্রয়োজনীয় কাজে। নামাজ শেষে অনেকেই বাসায় ফিরছিলেন। মতিঝিল আইডিয়ালে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষাও চলছিল।
স্কুল থেকে ছেলেকে নিয়ে বেরিয়েই তাণ্ডবের মধ্যে পড়েন ফেরদৌস আরা রুমা। জামায়াতকর্মীদের আগুন থেকে তার গাড়িও রক্ষা পায়নি।
গাড়ির চালক আলমগীর হোসেন জানান, তিনি গাড়ি নিয়ে স্কুলের দিকে এগোনোর সময় মিছিল আসতে দেখে এক পাশে সরে যান। এ সময় মিছিলকারীরা তার গাড়িও ভাংচুর শুরু করলে তিনি থেকে বেরিয়ে যান। এরপর পেট্রোল ঢেলে গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হওয়ার পর ফায়ার সার্ভিসকর্মীদের পাশাপাশি পু্লিশও জলকামানের পানি ব্যাবহার করে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে।
এরকটি জ্বলন্ত গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে চালক আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, একদল লোক লাঠিসোটা ও হাতে পেট্রোলভর্তি বোতল নিয়ে ‘আল্লাহু আকবার’ শ্লোগান দিতে দিতে এই তাণ্ডব চালায়।
এ সময় মিছিলকারীদের হাতে ছোট আকারে আগেয়াস্ত্র দেখেছেন বলেও স্থানীয় এক দোকানদার জানান।
এজিবি কলোনির মোড়ে দেওয়ানবাগ দরবার শরিফের সামনেই একটি ভ্যান ও নয়টি মোটর সাইকেল পুড়িয়ে দেয় হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শী নির্মল দাস জানান।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিবেদক গোলাম মুজতবা ধ্রুবকে তিনি বলেন, মিছিলকারীদের হাতে লাঠিসোটা ও পেট্রোলভর্তি বোতল ছিল।
একই সময়ে রামপুরা আবুল হোটেল থেকে মালিবাগ রেলগেইট, খিলগাঁও ও মানিকনগরেও ভাংচুর-অগ্নিসংযোগ চালায় জামায়াত কর্মীরা।
রামপুরা থানার ওসি কৃপা সিন্ধু বালা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ৫০ থেকে ৬০ জন শিবিরকর্মী মালিবাগ থেকে মিছিল নিয়ে রামপুরার দিকে আসে। এরইমধ্যে তারা উত্তরা ব্যাংকের সমানে অনাবিল পরিবহনের একটি গাড়িতে আগুন দেয়। সিটি ওভারসিজ ফিলিং স্টেশনের সামনে এসে আরেকটি কভার্ড ভ্যান পোড়ায়।
এছাড়া মানিকনগরে সোহাগ পরিবহনের একটি গাড়ি এবং মালিবাগে অন্তত চারটি গণপরিবহনে ভাংচুর চালানো হয় বলে আমাদের প্রতিবেদক জানান।
মিছিলকারীরা রামপুরার কাছাকাছি গেলে পুলিশ টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট ও শটগানের গুলি ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় বলে জানান ওসি।
রামপুরা থানার এসআই নির্মল কুমার দাস জানান, তারা সাত থেকে ১০ জন ওই এলাকায় দায়িত্ব পালন করছিলেন।
শিবিরকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটাতে থাকলে তারা বাধ্য হয়ে টিয়ার সেল ও শটগানের গুলি ছোঁড়েন।
এক পর্যায়ে শিবিরকর্মীরা রামপুরার অলিগলিতে পালিয়ে যায় বলে জানান তিনি।