somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শোকাবহ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজঃ বিনয় এবং গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের সকল শহীদদের

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আজ ১৪ ডিসেম্বর; মহান শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের নিধনের মর্মন্তুদ স্মৃতিঘেরা একটি দিন। বাঙালির মেধা-মনন-মনীষা শক্তি হারানোর দিন আজ। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত মুহূর্তে বাঙালি জাতি যখন অত্যাসন্ন বিজয়ের আনন্দে উন্মুখ, ঠিক তখন দখলদার পাকিস্তানের এদেশীয় দোসর আলবদর, রাজাকার ও আলশামস এ গুপ্তঘাতকরা রাতের অন্ধকারে মেতে ওঠে বুদ্ধিজীবী নিধনযজ্ঞে। অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর কাছে পরাজয় স্বীকার করে নিঃশর্ত আÍসমর্পণের দু’দিন আগে ১৪ ডিসেম্বর রাতের আঁধারে পরাজয়ের গ্লানিমাখা পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর, আল শামস ও শান্তি কমিটির সদস্যরা সারাদেশ থেকে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান সহস্রাধিক বুদ্ধিজীবীকে ধরে নিয়ে পৈশাচিকভাবে হত্যা করে যাদের অনেকের লাশই পাওয়া যায়নি। এ দিনে বাংলাদেশের ইতিহাসে সংযোজিত হয়েছিল এক কলংকজনক অধ্যায়। মুক্তিযুদ্ধে আমাদের বিজয়ের প্রাক্কালে দখলদার বাহিনী ও তার দোসররা পরাজয় নিশ্চিত জেনে মেতে ওঠে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডে। প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে তারা হত্যা করে জাতির অনেক কৃতী সন্তানকে। এর আরেকটি বড় উদ্দেশ্য ছিল স্বাধীনতা লাভ করতে যাওয়া একটি জাতিকে মেধাশূন্য করা।


স্বাধীনতা লাভের পর দীর্ঘ ৪২ বছরেও বুদ্ধিজীবী হত্যার কোন কিনারা আজো হয়নি। বুদ্ধিজীবীদের কে কোথায় কিভাবে শহীদ হয়েছেন তারও কোন কিনারা হয়নি। ২৫ মার্চ নিরস্ত্র বাঙালির ওপর আক্রমণ শুরুর পর থেকেই অবশ্য তারা বেছে বেছে কিছু মানুষকে হত্যা করে যারা বিবেচিত হতেন দেশের অসাধারণ নাগরিক বলে। মুক্তিযুদ্ধের গোটা সময়টায় বিভিন্ন জেলা শহরে দেশীয় অনুচরদের সহায়তায় হত্যা করা হয় তাদের। তাদের অপরাধ ছিল নিজ নিজ অবস্থান থেকে জনসাধারণকে স্বাধিকারের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে তোলা ও মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা জোগানো। আজকের এ দিনে আমরা তাদের কথাও গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করব। প্রাণরক্ষা ও প্রতিরোধ গড়ে তোলার প্রত্যয়ে অনেক বুদ্ধিজীবী দেশত্যাগ করায় তারা রেহাই পান ওই হত্যাযজ্ঞ থেকে। তাদের পরিবারবর্গও জানতে পারেনি প্রিয় এই মানুষগুলোর লাশ কোথায়? এ নিয়ে একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে হত্যা রহস্য উন্মোচন এবং দোষীদের চিহ্নিত করার উদ্যোগ নেয়া হলেও তা বাস্তবের মুখ দেখেনি।


মুক্তিযুদ্ধে বিশেষত ডিসেম্বরে আমরা যাদের হারিয়েছি সেই সকল শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রকৃত সংখ্যা এখনও নিরূপণ করা হয়নি যাদের অধিকাংশই ছিলেন নিজ নিজ ক্ষেত্রে খ্যাতিমান। প্রাপ্ত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বাংলাপিডিয়ায় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের যে সংখ্যা দেয়া হয়েছে সে অনুযায়ী একাত্তরে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে ছিলেন ৯৯১ শিক্ষাবিদ, ১৩ সাংবাদিক, ৪৯ চিকিত্সক, ৪২ আইনজীবী এবং ১৬ শিল্পী, সাহিত্যিক ও প্রকৌশলী। যুদ্ধে চারদিক থেকে কোণঠাসা হানাদার বাহিনী ও তার দোসররা রাজধানীসহ মূলত শহরাঞ্চলে সে ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ড চালায়। ন’মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে বাঙালি বিজয় অর্জনের ফলে বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে এক স্বাধীন রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। আমাদের জন্য তা ছিল মহত্তম অর্জন। কিন্তু বিজয়ের আনন্দ অনেকটাই বিষাদে পরিণত হয় বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের কারণে। এসব বুদ্ধিজীবীসহ ৩০ লাখ শহীদ ও অসংখ্য নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমরা অর্জন করেছি প্রিয় মাতৃভূমি।


একাত্তরের গণহত্যার বিচারহীনতা থেকে মুক্তির অনুপ্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে এবারই প্রথম বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের বিচারের রায় হাতে নিয়ে দিনটি পালন করবে দেশবাসী। ১২ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধকালে হত্যা ও ধর্ষণের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আর গত ৩ নভেম্বর ১৮ জন বুদ্ধিজীবীকে হত্যার দায়ে ফাঁসির সাজা ঘোষিত হয়েছে একাত্তরের কুখ্যাত খুনে আলবদর বাহিনীর সদস্য চৌধুরী মুঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে। দুজনই যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে পলাতক।


স্বাধীনতার উষালগ্নে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্রের দায়ে ইতিমধ্যে সর্বোচ্চ সাজা পেয়েছেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ। দেশের সর্বোচ্চ আদালতে তাঁর বিচার চলছে। বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনায় আরেক অভিযুক্ত জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী। যেকোনো দিন তাঁর মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। এদের সাজা কার্যকর করা নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকলেও স্বাধীনতার চার দশক পর এ বিচার স্বজনহারা শোকসন্তপ্ত মানুষের কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব করেছে। বিনয় এবং গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের সকল শহীদদের। কামনা করছি তাদের আত্মার মাগেফেরাত।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস শুধু দেশের রাজধানী মুখস্ত করার পরীক্ষা নয়।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:১৪

"আমার বিসিএস এক্সামের সিট পরেছিলো ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এ, প্রিপারেশন তো ভালোনা, পড়াশুনাও করিনাই, ৭০০ টাকা খরচ করে এপ্লাই করেছি এই ভেবে এক্সাম দিতে যাওয়া। আমার সামনের সিটেই এক মেয়ে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×