somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাশেদ এবং আমি

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাশেদ। কিশোর বয়সে আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধুটি ছিল রাশেদ। ক্লাস সেভেনে থাকতে রাশেদের সাথে আমার পরিচয় হয়। তারপর থেকেই আমরা একজন আরেকজনের ঘনিষ্ট বন্ধু হয়ে উঠি। রাশেদ ছিল ভীষণ দূরদৃষ্টিসম্পন্ন আর তার মনে ছিল প্রবল দেশপ্রেম। নিজের দেশপ্রেমকে আমার মাঝেও ছরিয়ে দিয়েছিল।
রাশেদের একটিমাত্র স্বপ্ন ছিল-স্বাধীন বাংলাদেশ। রাশেদের সেই স্বপ্নটিকে আমি কবে যে নিজের স্বপ্ন ভেবে নিয়েছিলাম তা জানা ছিল না। দেশকে স্বাধীন করার তীব্র আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ঝাপিয়ে পড়েছিলাম স্বাধীনতা যুদ্ধে। তখন আমাদের বয়স কম থাকায় পাক-সেনাদের বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধ করার সৌভাগ্য পায়নি। নানাভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য সহযোগিতা কারাই ছিল আমাদের কর্তব্য। মুক্তিযোদ্ধা শফিক ভাই যখন পাক সেনাদের হাতে বন্দি হয়েছিল তখন আমরাই তাকে মুক্ত করে এনেছিলাম। আর আমাদের এই অপারেশনের পরিকল্পনাটি রাশেদের মাথা থেকেই এসেছিল।
দেশ স্বাধীন হোল কিন্তু তা পেলাম রাশেদের জীবনের বিনিময়ে। চিরদিনের জন্য হারালাম রাশেদকে।
জাফর ইকবাল স্যারের ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ পড়ে এভাবেই রাশেদের সাথে পরিচয় হয়েছিল আমার। তখন থেকেই রাশেদের বন্ধু ইবুর জায়গায় আমি নিজেকে ভাবতে শুরু করি। আমার কৈশোর জীবনে প্রভাব পরতে থাকে রাশেদের। সেই প্রভাবটি আজও আছে। এখনও আমি আমার পাশে রাশেদের অস্তিত্ত্ব অনুভব করি। আজও আমি রাশেদের জন্য চোখের জল ফেলি।
ডিসেম্বর মাসের দুই তারিখে রাশেদ ধরা পড়ে। ব্যাগের মাঝে ছয়টা গ্রেনেড ছিল। আজরফ আলী আর রাজাকাররা তখন নদীর ঘাটে নিয়ে দাড় করিয়ে বলে কলমা পড়। সামনে রাজাকারগুলো দাড়িয়ে ছিল রাইফেল তুলে, পিছনে আজরফ আলী। একজন আজরফ আলীকে বলেছিল, হুজুর, ছেড়ে দেন, এইতুকু বাচ্চা। আজরফ আলী চিৎকার করে বলেছিল, সাপের বাচ্চা বড় হয়ে সাপই হয়। তারপর, অনেক ব্যাথা..., ভীষণ কষ্ট...।
আমি রাশেদকে ভুলিনি। কখনও ভুলব না। ইবুর মত আমিও রাশেদকে কথা দিয়েছিলাম তাকে ভুলব না- কথা না দিলেও ভুলতাম না। রাশেদের মত একজনকে কি এতো সহজে ভোলা যায়?
ক্লাস সেভেনে ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ পড়ার পড় থেকেই রাজাকারগুলিকে মনে মনে প্রচণ্ডভাবে ঘৃণা করা শুরু করি। তখন বি.এন.পি ক্ষমতায়, রাজনীতি তেমন বুঝতাম না। খবরে প্রতিদনিই দেখতাম জামাতের নিজামী আর মুজাহিদ সগর্বে পাড়িয়ে বেড়াচ্ছে বাংলার মাটির উপর দিয়ে। তখনও জানতাম না এই পশুগুলোই রাশেদের হত্যাকারী। একদিন এক প্রবন্ধ পড়ার সময় জানতে পারলাম, ‘জামাতে ইসলামের প্রধানরাই ছিল একাত্তরের স্বাধীনতাবিরোধী’। এই একটি লাইন-ই আমাকে জামাতের আসল রূপ আমার সামনে তুলে ধরেছিল। তখন থেকেই প্রচণ্ড ঘৃণা হতে থাকে নিজামি আর মুজাহিদের প্রতি। রাশেদ বলেছিল- ‘স্বাধীনতার প্রথম কাজই হচ্ছে বিশ্বাসঘাতকদের খতম করা। যদি তাদের খতম না করা হয় তাহলে দশ বিশ বছর পড় তারা আবার পাকিস্তানিদের ডেকে আনবে’। রাশেদের কথাটির সত্যতা তখন চোখের সামনে প্রত্যক্ষ করেছি। খালেদার প্রতিও ঘৃণা হতে থাকে, এই খুনিদের মন্ত্রী বানানোর জন্য।
জানতাম এই খুনিদের বিচার কোনদিনও হবে না কারণ তারা ইতোমধ্যে ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে। তবুও বার বার স্বপ্ন দেখতাম হয়তো কোন একদিন সত্যি সত্যিই ফাঁসির দড়িতে ঝুলবে রাজাকারগুলি, তাহলে রাশেদের সেই ব্যাথাটি, সেই কষ্টটি কমবে। ২০১৩ এর ডিসেম্বর পর্যন্ত দীর্ঘ আট বছর আমি আমার স্বপ্নকে লালন করে গেছি। আজ আমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে, ফাসিতে ঝোলাতে পেরেছি রাজাকারকে, শান্তি দিতে পেরেছি হাজারো রাশেদের আত্মাকে।
সবশেষে, ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ থেকে একটি লাইন- ‘এই শ্লোগানে কিন্তু একটাই অংশ। একজন বলে জয় বাংলা, তখন অন্য সবাই বলে জয় বাংলা। শ্লোগানটা সাংঘাতিক। বলার সময়ই মনে হয় দেশ স্বাধীন হয়ে যাচ্ছে’।
জয় বাংলা।।


Md. Mithun Hasan
December 14, 2013
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যাড গাই গুড গাই

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

নেগোশিয়েশনে একটা কৌশল আছে৷ ব্যাড গাই, গুড গাই৷ বিষয়টা কী বিস্তারিত বুঝিয়ে বলছি৷ ধরুন, কোন একজন আসামীকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে৷ পারিপার্শ্বিক অবস্থায় বুঝা যায় তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

টান

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২২


কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর
বিচ্যুতি ঠেকা‌তে ছু‌টির পাহাড়
দিগন্ত অদূর, ছ‌বি আঁকা মেঘ
হঠাৎ মৃদু হাওয়া বা‌ড়ে গ‌তি‌বেগ
ভাবনা‌দের ঘুরপাক শূণ্যতা তোমার..
কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর।
:(
হাঁটুজ‌লে ঢেউ এ‌সে ভাসাইল বুক
সদ্যযাত্রা দম্প‌তি... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরী

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৯

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরীঃ


১। নিজের সিভি নিজে লেখা শিখবেন। প্রয়োজন অনুযায়ী কাস্টোমাইজ করার অভ্যাস থাকতে হবে। কম্পিউটারের দোকান থেকে সিভি বানাবেন না। তবে চাইলে, প্রফেশনাল সিভি মেকারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×