somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাঙ্গালীর সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জনের ৪২তম গৌরব উজ্জল মহান বিজয় দিবস আজঃ বিজয় দিবসে সকলকে শুভেচ্ছা

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


১৬ই ডিসেম্বর, স্বাধীনতা অর্জনের অহংবোধের উজ্জ্বলতায় উৎকীর্ণ অনিন্দ্যসুন্দর একটি দিন। একরাশ সোনালি স্বপ্ন হৃদয়ে ধারণের দিন আজ। বাঙালির কাছে বিজয় দিবস শুধু উৎসবের নয়, স্বাধীনতা অক্ষুন্ন রাখার শপথেরও দিন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশের মুখ ফিরিয়ে আগামীতে সুখী-সমৃদ্ধ একটি দেশ গড়ার যাত্রা শুরুর দিনও এটি। ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতির জীবনে সর্বোচ্চ অর্জনের দিন ৪৩তম মহান বিজয় দিবস আজ।


জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অমোঘ নির্দেশে যে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয় ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের মাধ্যমে তার সমাপ্তি ঘটে। গত ৪২ বছর ধরে এদেশের স্বাধীনতাপ্রিয় প্রতিটি মানুষ পরম শ্রদ্ধা আর মমতায় পালন করে আসছে এ দিনটি। যতদিন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অস্তিত্ব থাকবে ততদিন এ দিনটি পালন করা হবে এমনি মহিমায়। আজ লাল-সবুজের পতাকায় ছেয়ে যাবে পুরো দেশ। আকাশে বাতাসে পতপত করে উড়বে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত মুক্তির পতাকা। সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধসহ সারাদেশে স্মৃতির মিনার উপচে পড়বে ফুলে ফুলে। মুক্তিকামী বাঙালি সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করবে একাত্তরের বীরসন্তানদের যাদের তাজা রক্তে মুক্ত হয়েছে এদেশ। হৃদয় উজাড় করে তারা গাইবে ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে/বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা/আমরা তোমাদের ভুলব না। ১৬ ডিসেম্বরের প্রথম প্রহর থেকেই জাতীয় স্মৃতিসৌধসহ সারাদেশে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভ ফুলে ফুলে ছেয়ে যায়। পৌষের রাতের শীত আর কুয়াশাকে তুচ্ছজ্ঞান করে লাখ মানুষ সুশৃঙ্খলভাবে তাদের প্রাণের অর্ঘ্য নিবেদন করে দেশের জন্য প্রাণ বিসর্জন দেয়া সেই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি।


১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ এ উচ্চারণ করে বঙ্গবন্ধু যে লড়াইয়ের ডাক দিয়েছিলেন সেই লক্ষ্যে একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে অর্জনের প্রত্যয়ে এদেশের দামাল ছেলেরা ঝাঁপিয়ে পড়ে মুক্তিযুদ্ধে। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম, ৩০ লাখ জীবনের বিনিময়ে মাতৃভূমিকে দখলদারমুক্ত করেছিল মুক্তিযোদ্ধারা। মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর যৌথ কমান্ডের কাছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আÍসমর্পণে বাধ্য হয়েছিল বিজয়ের এদিনে। পৃথিবীর মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশের। বাঙালির স্বনির্মিত ইতিহাসে সবচেয়ে গৌরবময় অধ্যায় ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ, এ বিজয়।


হাজার বছর ধরে শৃংখলিত বাঙালি জাতিকে বঙ্গবন্ধুই প্রথম ঘুম জাগানিয়া গান শুনিয়ে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছিলেন। সুদীর্ঘ দু’যুগের নিরবচ্ছিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামের মাহেন্দ্রক্ষণে ১৯৭১-এর অগ্নিঝরা মার্চে শুনিয়েছিলেন মুক্তির অবিনাশী গান। অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে ’৭১-এর ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর অতর্কিত হামলা চালালে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে হানাদারদের প্রতিহত করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। স্বাধীনতার ঘোষণায় দুর্বার প্রতিরোধে জেগে ওঠে বাংলাদেশ। শুরু হয় জনযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস নির্বিচারে গণহত্যা, নারী নির্যাতন, লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে মানবাধিকার লংঘন করে চলে দখলদার পাকিস্তান সেনাবাহিনী। তাদের এই নির্বিচার হত্যাযজ্ঞে মদদ দেয় এদেশেরই কিছু কুলাঙ্গার সন্তান। তারা রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস গঠন করে নিরীহ-নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর অত্যাচার চালায়। জামায়াতে ইসলামীসহ অপরাপর মৌলবাদী রাজনৈতিক দল দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত হয়।


অন্যদিকে স্বাধীনতা ঘোষণার পরপরই বঙ্গবন্ধুকে বন্দি করে নিয়ে যাওয়া হয় তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানে। তবে তার নির্দেশিত পথ ও পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে শপথ নেয় বিপ্লবী বাংলাদেশ সরকার। মুজিবনগর সরকার হিসেবে পরিচিত এই প্রবাসী সরকারের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ শেষে ’৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর যৌথ কমান্ডের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল দখলদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ৯৩ হাজার সৈনিক।


অস্থায়ী সরকারের অধীনে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শেষভাগে এসে ডিসেম্বরের গোড়ায় মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সমন্বয়ে গঠন করা হয় যৌথ কমান্ড। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি যৌথবাহিনীর হাতে মার খেয়ে একে একে পিছু হটতে থাকে দখলদার পাকিস্তান বাহিনী। চারদিক থেকে মুক্তিযোদ্ধারা বিজয় পতাকা উড়িয়ে ঢাকার দিকে অগ্রসর হতে থাকে। অর্জিত হয় বাঙ্গালীর স্বাধীনতা, হানাদার মুক্ত হয় প্রিয় বাংলাদেশ।


আজ ১৬ই ডিসেম্বর। ৪২তম মহান বিজয় দিবস। বাঙালী জাতির স্বপ্নের বাস্তবায়নের দিন। আজ সেইদিন -স্বজন হারানোর ব্যাথা আর অশ্রু আনন্দে স্বাধীনতালাভের মহেন্দ্রক্ষন, বিজয় দিবস। এই বিজয় দিবসের প্রত্যয় হোক সুখী,সমৃদ্ধ,স্বর্নিভর বাংলাদেশ গড়ার । বিজয় দিবসে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরন করছি তাদের, যাদের আত্মত্যাগে পেয়েছি মহান স্বাধীনতা।সবাইকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:৫৯
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যারিস্টার সুমন দায়মুক্ত , চু্ন্নু সাহেব কি করবনে ?

লিখেছেন শাহাবুিদ্দন শুভ, ০৮ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৭


দেশে প্রথম কোন সংসদ সদস্য তার বরাদ্ধের ব্যাপারে Facebook এ পোষ্ট দিয়ে জানিয়ে থাকেন তিনি কি পেলেন এবং কোথায় সে টাকা খরচ করা হবে বা হচ্ছে মানুষ এসব বিষয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়ের নতুন বাড়ি

লিখেছেন সাদা মনের মানুষ, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২২

নতুন বাড়িতে উঠেছি অল্প ক'দিন হলো। কিছু ইন্টরিয়রের কাজ করায় বাড়ির কাজ আর শেষই হচ্ছিল না। টাকার ঘাটতি থাকলে যা হয় আরকি। বউয়ের পিড়াপিড়িতে কিছু কাজ অসমাপ্ত থাকার পরও পুরান... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। শিল্পী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৮










চিত্রকলার কোন প্রথাগত শিক্ষা ছিলনা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। ছোট বেলায় যেটুকু শিখেছিলেন গৃ্হশিক্ষকের কাছে আর পাঁচজন শিশু যেমন শেখে। সে ভাবে আঁকতেও চাননি কোন দিন। চাননি নিজে আর্টিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাহান্নামের শাস্তির তীব্রতা বনাম ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে অমুসলিম উপস্থাপিত বিবিধ দোষ

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৪



জাহান্নামের শাস্তির তীব্রতার বিবেচনায় মুমিন ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে অমুসলিম উপস্থাপিত দোষারোপ আমলে নেয় না। আমার ইসলাম সংক্রান্ত পোষ্ট সমূহে অমুসলিমগণ ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে বিবিধ দোষের কথা উপস্থাপন করে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শ্রান্ত নিথর দেহে প্রশান্তির আখ্যান..... (উৎসর্গঃ বয়োজ্যেষ্ঠ ব্লগারদের)

লিখেছেন স্বপ্নবাজ সৌরভ, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৪২



কদিন আমিও হাঁপাতে হাঁপাতে
কুকুরের মত জিহবা বের করে বসবো
শুকনো পুকুর ধারের পাতাঝরা জামগাছের নিচে
সুশীতলতা আর পানির আশায়।

একদিন অদ্ভুত নিয়মের ফাঁদে নেতিয়ে পড়বে
আমার শ্রান্ত শরীর , ধীরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×