বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের পঞ্চম দফা অবরোধের শুরুতে নারায়ণগঞ্জে কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর হয়েছে, রেল লাইনের ফিসপ্লেট খুলে ফেলা হয়েছে কিশোরগঞ্জে।
Published : 21 Dec 2013, 10:42 AM
নির্বাচন স্থগিত ও নির্দলীয় সরকারের দাবিতে ডাকা এই কর্মসূচিতে শনিবার সকালে আর কোথাও বড় ধরনের কোনো গোলযোগের খবর পাওয়া যায়নি।
অবরোধে রাজধানীতে অভ্যন্তরীণ রুটে বাস চলাচল করছে, তবে সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ি সংখ্যা কম। দূরপাল্লার কিছু বাস ছেড়েছে টার্মিনালগুলো থেকে। ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সকাল ৮টার দিকে রূপগঞ্জের তারাব এলাকায় অবরোধকারীরা ৪/৫টি গাড়ি ভাংচুর করে এবং পেট্রোল ঢেলে সড়কে আগুন ধরায়।
এর আগে সাড়ে ৭টার দিকে কাঞ্চন জিন্দা পার্ক এলাকায় অবরোধকারীরা গাছের গুঁড়ি কেটে সড়ক অবরোধ ও টায়ারে অগ্নিসংযোগ করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, তারাবোয় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ৪/৫টি গাড়ি ভাংচুর ও সড়কে আগুন জ্বালানোর পর পুলিশ যায়। তখন অবরোধকারীরা নটকে পড়ে।
অন্যদিকে জিন্দা পার্ক এলাকায় ৩/৪টি গাছ কেটে গুঁড়ি ফেলে মদনপুর-ভুলতা-জয়দেবপুর সড়ক অবরোধ করে বিরোধী জোটের কর্মীরা।
পরে পুলিশ এসে গাছের গুঁড়ি সরিয়ে দিলে সড়কে যান চলাচল শুরু হয় বলে রূপগঞ্জ থানার ওসি মো. আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন।
এদিকে জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক মঈনুর রহমান জানান, অবরোধে নাশকতার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ফতুল্লা এলাকা থেকে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সরারচর রেল স্টেশনের কাছে রেললাইনের প্রায় ১০০ ফুট ফিসপ্লেট খুলে ফেলা হলে সকাল থেকে ‘কিশোরগঞ্জ-ভৈরব-ঢাকা’ রুটে প্রায় এক ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে।
কিশোরগঞ্জের স্টেশন মাস্টার জয়ন্ত মজুমদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, শুক্রবার গভীর রাত থেকে শনিবার ভোরের মধ্যে কোনো এক সময় দুর্বৃত্তরা ফিসপ্লেট খুলে ফেলে। এজন্য ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
লাইন মেরামত শেষে সকাল সোয়া ৮টার দিকে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয় বলেও জানান তিনি।
ফিসপ্লেট খুলে ফেলার খবরে শনিবার সকালে কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া আন্তঃনগর এগারসিন্ধুর এক্সপ্রেস কটিয়াদী উপজেলার মানিকখালী স্টেশনে আটকা পড়ে। লাইন মেরামতের পর তা গন্তব্যে ছেড়ে যায়।
চার সপ্তাহে চার দফা অবরোধের পর গত বৃহস্পতিবার ১৮ দল শনিবার সকাল থেকে পঞ্চম দফার কর্মসূচি ডাক দেয়। এই অবরোধ চলবে মঙ্গলবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত।
কর্মসূচির ঘোষণা করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছিলেন, “২৫ ডিসেম্বর খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠানের কথা বিবেচনা রেখেই আমরা শনিবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত এই অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিচ্ছি।”
শনিবার জাতীয় টিকা দিবস হওয়ায় জাতিসংঘ ও স্বাস্থ্য বিভাগের সব যানবাহন অবরোধের আওতামুক্ত রাখা হয়েছে। সেইসঙ্গে সংবাদপত্র ও সংবাদপত্রবাহী গাড়ি, লাশবাহী গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স অবরোধের আওতামুক্ত।
বিরোধী দলের অবরোধের মধ্যেও দশম সংসদ নির্বাচনের পথে এগিয়ে চলছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিএনপি না এলেও সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার বিষয়টি যুক্তি হিসেবে তুলে ধরছে তারা।
অন্যদিকে নির্বাচন স্থগিত না হলে ৫ জানুয়ারি ভোট গ্রহণের আগে আরো কঠোর কর্মসূচির হুমকি রয়েছে বিরোধী জোটের। অন্যদিকে রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি রয়েছে সরকারের।
গত ২৫ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণার পর ১৮ দল তা স্থগিত ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে ২৬ নভেম্বর থেকে চার দফায় রাজপথ-রেলপথ-নৌপথ অবরোধ কর্মসূচি করে। এতে সহিংসতায় প্রায় একশ জন নিহত হয়েছে।