somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কি অদ্ভুত মিল দুজনের কথায় ও কাজে!

২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফেরেস্তা নন! যদিও পূজা, নৈবেদ্য, সেজদা কোন অংশে কম পান না। কিন্তু মানুষ তো বটে! সেই কোন ১৯৯৬ সালে বলেছিলেন, আবার এখন ২০১৩ সালে এসে বলছেন। মুখের পরিবর্তন হলো শুধু। কথা রয়েগেলো একই!কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে ১৮ বছর পরেও ঠিক একই ভাষণ, একই রকম ভঙ্গিমায় অন্যজনের কন্ঠ দিয়ে বের হচ্ছে।দিনের পর দিন একই ধারাবাহিক নাটকের পর্ব বাই পর্ব পুনঃমঞ্চায়ন চলছে।দু’একটি পর্বের এখানে সেখানে শুধুমাত্র একটু নতুন রং লাগিয়েই চালিয়ে দেয়া হচ্ছে। শুধু ৯৬-এ যারা অভিনেতা ছিলেন আজ তারা দর্শক আর সেদিনের দর্শকসারিতে থাকা অতিপরিচিতরা আজ অভিনয় মঞ্চে।
সেদিনের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সেদিনের বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন,“নির্বাচনে আসুন!বাসে আগুন দিয়ে,বোমা হামলা করে মানুষ হত্যা করবেন না। হত্যা,সহিংসতা বন্ধ করুন।” একবার নয় বার বার বলেছিলেন। আরো বলেছিলেন, তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা একটি উদ্ভট ব্যবস্থা, পাগল আর ফেরেস্তাই শুধু নিরপেক্ষ হতে পারে। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়কের দাবী ছেড়ে নির্বাচনে আসুন।আমরা গ্রহণযোগ্য স্বচ্ছ নির্বাচন করতে প্রস্তুত,ব্লা ব্লা ব্লা....! খালেদা জিয়ার আহবানে সেদিন সাড়া দেন নি শেখ হাসিনা।হরতাল, অবরোধ, জ্বালাও-পোড়াও হয়েছে।জীবন গিয়েছে পাবলিকের,সম্পদের ক্ষতি হয়েছে জনগণের।তারপর সন্ত্রাস দমনের নামে হয়েছে যৌথবাহিনীর অভিযান।অসংখ্য মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে, গ্রেফতার করে জেলে পোরা হয়েছে।পাকলিককে তখনও দেখানো হয়েছে সংলাপ,আহবান, প্রত্যাখ্যান আরো কতো রকম খেলা!
আজকের পরিস্থিতিরও মৌলিক কোন পরিবর্তন হয় নি। তবে পরিস্থিতি এবং পাবলিকের অবস্থানের পরিবর্তন না হলেও মৌলিক পরিবর্তন হয়েছে দুই নেত্রীর অবস্থানের। শেখ হাসিনা এখন প্রধানমন্ত্রী আর খালেদা জিয়া বিরোধীদলীয় নেতা।ঠিক উল্টো অবস্থানে!এবারও শেখ হাসিনা বার বার খালেদা জিয়াকে আহবান করছেন নির্বাচনে আসার।খালেদা জিয়ার মতোই আঙুল উচিয়ে বলছেন, ‘মানুষ হত্যা করবেন না!গাড়িতে আগুন দিয়ে, ভাংচুর করে, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করে সরকারকে হঠানো যাবে না’! তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবী আর ভুলেও মুখে নিয়েন না।আলোচনায় বসে সমস্যার সমাধান করুন। হরতাল অবরোধ বন্ধ করুন, মানুষ খুন বন্ধ করুন।৯৬ এর দ্বিতীয়ধাপ, সহিংসতা প্রতিরোধে যৌথবাহিনীর অভিযান, সেটাও ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে।
কৃষক-শ্রমিকের অবস্থা ৯৬-এর মতোই শোচনীয়।চরম নিরাপত্তাহীনতায় সাধারণ মানুষ। আগের মতোই ব্যবসা-বাণিজ্য চরম ক্ষতিগ্রস্ত।একই কায়দায় হামলা হচ্ছে সংখ্যালঘুদের উপর। ৯৬ সালের সেই সংকটময় পরিস্থিতি প্রতিদিনই পাবলিকের সামনে নতুন করে হাজির হচ্ছে।
১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী একতরফা নির্বাচন করেছিলো খালেদা জিয়ার বিএনপি। যুদ্ধাপররাধী জামায়াতে ইসলামও তখন শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের সাথে জোটবদ্ধ আন্দোলন চালিয়েছিলো বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে।শেখ হাসিনা তখন আজকের যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযম,নিজামী, মুজাহিদদের সাথে একই মঞ্চে বক্তৃতা করেছেন,কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছেন রাজপথে।তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগ,জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীসহ বেশির ভাগ দলই ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচন বর্জন করেছিল। তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল বিএনপি সেদিন ফ্রিডম পার্টিসহ কয়েকটি ছোট দল নিয়ে নির্বাচন করেছিল।
আগামী ৫ জানুয়ারী ২০১৪ নির্বাচনে সেদিক থেকে আওয়ামী লীগ বেশ সুবিধাজনক অবস্থানেই আছে।এখন আওয়ামী লীগের আছে মহাজোট। ডান-বাম মিলিয়ে সাথে আছে কয়েক হালি রাজনৈতিক দল। এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে না থাকলেও থাকছেন সাবেক ফার্স্টলেডী রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির এক অংশও।
তবে ৯৬’র সেই বিএনপি সরকার মাত্র দেড় মাস স্থায়ী হয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইন পাস করে তার অধীনে আবার নতুন নির্বাচন দিতে আওয়ামী লীগ সেদিন বাধ্য করেছিলো বিএনপিকে। তখনকার বিরোধী দলের প্রতিরোধের মুখে সারা দেশের কয়েক হাজার কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তারা ঢুকতেই পারেননি। অনেক কেন্দ্র ভোটারবিহীন থাকলেও ভোট গ্রহণ হয়েছিল। নারায়ণগঞ্জের আদমজী নগরের ছয়টি এবং সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি কেন্দ্রে চেষ্টা করে সেনাবাহিনীও ঢুকতে পারেনি। গোপালগঞ্জেও একই পরিস্থিতি হয়েছিল। সে বার ৩০০ আসনের মধ্যে ৪৮টি আসনের প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিলেন। নির্বাচন হয়েছিল ২৫২টি আসনে। শেষ পর্যন্ত কমিশন ২৪২ আসনের নির্বাচনের ফল গেজেট আকারে প্রকাশ করেছিল। বাকি ১০টি আসনের নির্বাচনী ফল কমিশনেই পৌঁছেনি তখন।
৫ জানুয়ারী নির্বাচন এবং পরবর্তী সময়ে বিএনপি একই নাটকের পুনঃমঞ্চায়ন করতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না।রাজপথের আন্দোলনে বিএনপি যথেষ্ট দুর্বল সেটা বার বার প্রমাণিত। এখনও হরতাল-অবরোধে বিএনপি নয়, জামায়াতই মূখ্য ভূমিকা পালন করছে।যদিও যুদ্ধাপরাধের বিচার ইস্যূতে জামাত বিপর্যস্ত। এদিকে বিনা নির্বাচনে সরকার গঠনের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে গিয়েছে আওয়ামী লীগের মহাজোট।
৯৬ নাটকের শেষ পর্ব নিয়ে এখনও নিশ্চিত কিছু বলার সময় হয়নি। তবে অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে মহাজোটের নতুন সরকার কয়েক বছর টিকে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী সহিংসতা আর অস্থিরতার দিকেই এগুচ্ছে বাংলাদেশ। যা কৃষক, শ্রমিক, মেহনতী মানুষ কেন লুটেরা শাসক শ্রেণীর বড় অংশের জন্যও অশুভ।

পাঠক লাল গোলদার
২১ ডিসেম্বর ২০১৩
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

**অপূরণীয় যোগাযোগ*

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ২৮ শে মে, ২০২৪ ভোর ৫:১৯

তাদের সম্পর্কটা শুরু হয়েছিল ৬ বছর আগে, হঠাৎ করেই। প্রথমে ছিল শুধু বন্ধুত্ব, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তা গভীর হয়ে উঠেছিল। সে ডিভোর্সি ছিল, এবং তার জীবনের অনেক কষ্ট ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যাঙ দমনের নেপথ্যে এবং রাষ্ট্রীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের সমন্বয়

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৭


ব্যাঙ দমনের বাংলায় একটা ইতিহাস আছে,খুবই মর্মান্তিক। বাংলাদেশে বহুজাতিক কোম্পানির কোন সার কেনা হতো না। প্রাচীন সনাতনী কৃষি পদ্ধতিতেই ভাটি বাংলা ফসল উৎপাদন করতো। পশ্চিমবঙ্গ কালক্রমে ব্রিটিশদের তথা এ অঞ্চলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পজ থেকে প্লে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

লিখেছেন বন্ধু শুভ, ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১৫


.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×