শ্রদ্ধা আর ভালবাসার ফুলে অভিনেতা-নির্দেশক খালেদা খান যুবরাজকে চিয় বিদায় জানাল সহকর্মী আর ভক্তরা।
Published : 21 Dec 2013, 10:15 AM
শনিবার সকালে ধানমণ্ডির ইউল্যাবে কর্মস্থলে শ্রদ্ধা জানানোর পর দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেয়া হয় প্রয়াত এই অভিনেতার কফিন।
দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জানাজার পর কফিন নেয়া হয় শিল্পকলা একাডেমিতে। সেখানে শ্রদ্ধা জানানোর পর বিকালে মরদেহ নিয়ে স্বজনরা রওনা হন টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে। সেখানে পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হবে তাকে।
দীর্ঘদিন মোটর নিউরন ও হৃদরোগে ভুগে শুক্রবার ৫৫ বছর বয়সে মারা যান নব্বইয়ের দশকের মঞ্চ ও টেলিভিশনের জনপ্রিয় অভিনেতা খালেদ খান।
বারডেমের হিমঘর থেকে সকালে ধানমণ্ডির ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশে (ইউল্যাব) নেয়া হলে সহকর্মীরা শেষ বিদায় জানায় তাকে।
৭ বছর ধরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করেছেন খালেদ খান। কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি শিক্ষকতাও করতেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়টির নিবন্ধক ফয়জুল ইসলাম বলেন, “কোষাধ্যক্ষ হিসেবে তিনি যেমন দায়িত্ববান নির্ভরযোগ্য ও কর্তব্যপরায়ণ ছিলেন তেমনি শিক্ষক হিসেবেও ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ। তার অকাল প্রয়াণে জাতির অপুরণীয় ক্ষতি হয়েছে।”
“স্যার সবসময় হাসিমুখে ক্লাশ নিতেন। মৃতুর পরও যেন স্যারের মুখে হাসি লেগে আছে,” আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী সিনথিয়া।
খালেদ খানের সহকর্মী জুদিথা ওমেখ বলেন, “তার মৃত্যুতে দেশবাসীর মতো বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারও শোকাহত। বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রগতিতে তার যে অবদান তা এক কথায় বলে শেষ করা যাবে না। আমরা আজীবন শ্রদ্ধাভরে তাকে স্মরণ করব।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ইমরান রহমান, উপ-উপাচার্য এইচ এম জহিরুল হকসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মচারীরা ফুল দিয়ে খালেদ খানের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
ইউল্যাব থেকে খালেদ খানের কফিন সকাল সোয়া ১০টার দিকে নেয়া হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে।
সেখানে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা জানানোর পর দুপুরে কফিন নেয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে, সেখানে জানাজায় অংশ নেন অভিনয়শিল্পী, শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ হাজারো মানুষ।
এরপর মরদেহ নেয়া হয় শিল্পকলা একাডেমিতে। সেখান থেকে লাশ নিয়ে টাঙ্গাইলের পথে রওনা হন স্বজনরা।
১৯৫৭ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইলে জন্মগ্রহণ করেন খালেদ খান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের ছাত্র ছিলেন তিনি।
১৯৭৫ সালে নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের সদস্য হিসেবে মঞ্চনাটকে তার যাত্রা শুরু হয়। ১৯৮৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেয়া এই শিল্পী অভিনয় শুরু করেন আশির দশকে, মঞ্চনাটকের মাধ্যমে।
হুমায়ূন আহমেদের ধারাবাহিক নাটক ‘এইসব দিনরাত্রি’ ও ইমদাদুল হক মিলনের ‘রূপনগর’ নাটকে অভিনয় করে সে সময় দারুণ জনপ্রিয়তা পান খালেদ খান। রূপনগর নাটকে ‘ছি, ছি, তুমি এত খারাপ’ সংলাপটি সেই সময় দর্শকদের মুখে মুখে ফিরত।
নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ের হয়ে মঞ্চে দেওয়ান গাজীর কিসসা, নূরুল দীনের সারাজীবন, দর্পনসহ ৩০টির বেশি নাটকে অভিনয় করেছেন। নির্দেশনা দিয়েছেন পুতুল খেলা, ক্ষুধিত পাষাণসহ ১০টির বেশি নাটক।
অসুস্থ হওয়ার আগে তিনি নাগরিক নাট্যাঙ্গনের 'রক্ত করবী' নাটকের বিশু পাগল চরিত্রে অভিনয় করেন। সুবচন নাট্য সংসদের 'রূপবতী' নাটকেরও নিদের্শনা দেন।
এই বছর শিল্পকলা একাডেমি নাট্যকলায় পুরস্কারের জন্য খালেদ খানকে মনোনীত করেছিল। সেই পুরস্কার হাতে নেয়ার আগে না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন এই শিল্পী।