somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবন কথা-১২: আমার দুরন্ত বড় আপা

২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমরা পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে প্রথম বড় আপা তারপর মেঝো আপা তারপর আমি আমার পর এক ছোট ভাই আর সবার ছোট আমাদের ছোট বোনটি। বড় আপার সাথে আমার বয়সের ব্যবধান প্রায় পাঁচ বছর। আমি বাড়ির বড় ছেলে হলেও মূলত বড় ছেলের দায়িত্ব পালন করেছে আমার বড় আপা।

আমাদের সংসারের সব গুরুত্বপূর্ণ কাজে বিশেষ করে আমাদের বাকি চার ভাইবোনের বিয়েতে আপার ভূমিকাই ছিলো বেশি। এখনও চাকরির প্রয়োজনে আমাকে বাবা মা থেকে দূরে থাকতে হয় কিন্তু নিজের সংসার সামলে ঠিকই আপা আব্বা আম্মার খবর রাখেন এমনকি বাবার ঔষধ শেষ হয়ে গেলো কিনা সেটাও খেয়াল রাখেন। (আপা এখন আমাদের বাসার পাশের বাসাতেই ভাড়া থাকেন)

আপা শুধু আমাদের সংসারেই নয় আশে পাশের কয়েক বাড়িতেও তিনি ভি,আই,পি । কারো কোনো অনুষ্ঠানে বা বেশি মেহমান আসলে রান্না বান্না এবং মেহমানদারিতে আপা ছাড়া যেনো জমবেই না। আমি অবাক হই চাকরি করে, নিজের সংসার সামলে অন্যকে সময় দেবার এনার্জি তিনি কোথায় পান!

এই আপা ছোট বেলায় ছিলেন অসম্ভব রকমের দুরন্ত। নিচে তার দুইটি ঘটনা বলছি।
১) আপা স্কুলে যাচ্ছেন রাস্তায় আইসক্রিম ওলার সাথে দেখা কিন্তু তার কাছে টাকা নেই। তিনি আইসক্রিম ওলাকে বললেন ঐ যে আমাদের বাড়ি, আপনি আমাকে আইসক্রিম বকিতে দেন বিকাল বেলা বাড়ির সামনে গিয়ে ফারহানা (তার বানানো ভূয়া নাম) বলে ডাক দিবেন আমি এসে টাকা দিয়ে দিবো।

এতো টুকো ছোট মেয়ে যে তার সাথে চিটিং করতে পারে আইসক্রিম ওলার ধারনা করে নাই সে একটি আইসক্রিম বাকিতে দেয়। বিকাল বেলা বাড়ির সামনে ফারহানা ফারহানা বলে ডাকতে থাকে কিন্তু কোথায় পাবে এই নামে তো কেউ এ বাড়িতে থাকে না। অবশেষে নিরাশ হয়ে যখন ফিরে যাবে তখন ছোট কাকার সাথে দেখা।

ছোট কাকাকে পেয়ে আইসক্রিম ওলার বলে এ বাড়ির এতো টুকো একটি ফর্সা মেয়ে এক পাশের কয়েকটি চুল পাকা ( আপা ছোটো বেলায় অনেক ফর্সা ছিলেন এতো ফর্সা যে তার কয়েকটি চুল সোনালী ছিলো) ফারহানা নাম, আইসক্রিম বাকিতে খেয়েছে কিন্তু এখন ডাকতেছি বের হয় না।

বর্ণনা শোনে কাকা আসামিকে সনাক্ত করতে পারলেন এবং আপা যে এ কাজ করতে পারে সেটা বিশ্বাসও করলেন। আইসক্রিম এর দাম দিয়ে মাকে বললেন ফারহানা নামে আপনার মেয়েটা কোথায়?;)

২) আপা তার বান্ধবীর বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে দেখেন তাদের অনেক ফুল গাছ। তিনি বললেন তুই আমাকে এখান থেকে কয়েকটি ভালো ফুলের চারা দে আমি তোকে বিদেশী ফুলের বীজ দেবো;) বিদেশী ফুলের নাম শোনে তার বান্ধবী খুশিতে আটখান। বেছে বেছে ভালো কয়েকটি ফুলের চার আপাকে দেয়।

পরের দিন আপা আশে পাশ থেকে শিয়াল-মতি সহ কয়েকটি জঙ্গলি ফুলের বীজ সংগ্রহ করে তার বান্ধবীকে দেয় । আর বলে বেশি করে পানি দিবি, পানি কম হলে কিন্তু বিদেশী ফুলের চার গজাবে না । তার বান্ধবী বীজ লাগিয়ে কয়েক সপ্তাহ নিয়মিত পানি দেয় কিন্তু সেখানে শিয়াল-মতি সহ কয়েকটি আগাছা ছাড়া কিছুই দেখা যায় না। আপাকে জানালে আপা বলেন "নিশ্চয় তুই পানি দেয়াতে উনিশ-বিশ করেছিলি, তুই আমার বিদেশী বীজ গুলিই নষ্ট করলি;)

জীবন কথার বাকি লিখা গুলো এই বিভাগে

সংযোজন: জুয়েল তখন খুব ছোট ৮/১০ মাসের। একদিন আম্মা তাকে বিছানায় শোয়াইএ রান্না ঘরে গেছেন কাজ করতে। জুয়েল গড়তে গড়তে বিছানার চিপা দিয়ে পড়ে যায়। কিন্তু পরো পুরি পরে না, তার গলাটা আটকে যায় বিছানা ও ঘরের টিনের বেড়ার সাথে। অনেকটা ফাঁস দেয়া ব্যাক্তির মত। ঘরে ছিলো বড় আপা। আপা তাড়াতাড়ি উপস্থিত বুদ্ধি হিসাবে বিছানার নিচে গিয়ে জুয়েলকে উঁচু করে ধরে। তারপর মাকে জুরে জুরে ডাকতে থাকে। আল্লাহর রহমতে আপার সেই উপস্থিত বুদ্ধির কারনে জুয়েল সেদিন প্রাণে বেঁচে যায়।

আর একদিন, ছোট বোন পলির জন্মের সময় মা অসুস্থ বিছানায় শোয়ে আছেন। ঘরে রান্না করার কোনো তরকারি নেই। আপা গেলেন ছিম মাচায় ছিম পাড়তে। নিচে মেঝো আপা। আরো ছিম পাড়ার জন্য আপাকে মাচার আরো উঁচু উঠতে হচ্ছিলো । নিচে থেকে মেঝো আপা একবার সাবধান করে দিলেন, "আপা এতো উপরে উঠিস না" তার কিছু পরেই ধপাস...
বড় ধরনের ব্যাথা না পেলও মোটামোটি ব্যাথা পেয়েছিলেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:১৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মাটির কাছে যেতেই..

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

মাটির কাছে
যেতেই..


ছবি কৃতজ্ঞতাঃ https://pixabay.com/

ঠিক যেন
খা খা রোদ্দুর চারদিকে
চৈত্রের দাবদাহ দাবানলে
জ্বলে জ্বলে অঙ্গার ছাই ভস্ম
গোটা প্রান্তর
বন্ধ স্তব্ধ
পাখিদের আনাগোনাও

স্বপ্নবোনা মন আজ
উদাস মরুভূমি
মরা নদীর মত
স্রোতহীন নিস্তেজ-
আজ আর স্বপ্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেলা ব‌য়ে যায়

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩০


সূর্যটা বল‌ছে সকাল
অথছ আমার সন্ধ্যা
টের পেলামনা ক‌বে কখন
ফু‌টে‌ছে রজনীগন্ধ্যা।

বাতা‌সে ক‌বে মি‌লি‌য়ে গে‌ছে
গোলাপ গোলাপ গন্ধ
ছু‌টে‌ছি কেবল ছু‌টে‌ছি কোথায়?
পথ হা‌রি‌য়ে অন্ধ।

সূর্যটা কাল উঠ‌বে আবার
আবা‌রো হ‌বে সকাল
পাকা চু‌ল ধবল সকলি
দেখ‌ছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পর্ণআসক্ত সেকুলার ঢাবি অধ্যাপকের কি আর হিজাব পছন্দ হবে!

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৩ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:২৭



ইন্দোনেশিয়ায় জাকার্তায় অনুষ্ঠিত একটা প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক জিতেছে বাংলাদেশি নারীদের একটা রোবোটিক্স টিম। এই খবর শেয়ার করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপিকা। সেখানে কমেন্ট করে বসেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ২৩ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:১৪


কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়
আমার বাবা-কাকারা সর্বমোট সাত ভাই, আর ফুফু দুইজন। সবমিলিয়ে নয়জন। একজন নাকি জন্মের পর মারা গিয়েছেন। এ কথা বলাই বাহুল্য যে, আমার পিতামহ কামেল লোক ছিলেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙালী মেয়েরা বোরখা পড়ছে আল্লাহর ভয়ে নাকি পুরুষের এটেনশান পেতে?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৩ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:২০


সকলে লক্ষ্য করেছেন যে,বেশ কিছু বছর যাবৎ বাঙালী মেয়েরা বোরখা হিজাব ইত্যাদি বেশি পড়ছে। কেউ জোর করে চাপিয়ে না দিলে অর্থাৎ মেয়েরা যদি নিজ নিজ ইচ্ছায় বোরখা পড়ে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×