somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাদশাহ আলমগীরের ন্যায়বিচার

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ইসলাম শান্তির ধর্ম। এর অনুসারীদের মুসলমান বলা হয়। এর স্পর্শে মানুষ পরশ পাথরে পরিণত হয়। যারা ইসলামকে পরিপূর্ণভাবে মেনে চলেন তারা দুনিয়া আখিরাতে সফলতা লাভ করেন। এ রকম একজন সোনার মানুষ হলেন বাদশাহ আলমগীর। আওরঙ্গজেব তার পূর্ব নাম। তিনি একাধারে ৪৯ বছর দিল্লীর মসনদে আসীন হন। তিনি কোরআনের হাফেজ, মুত্তাকী, আল্লাহর ওলী ও একজন ন্যায়বিচারক বাদশাহ ছিলেন। তার আমলেই ফতোয়ায়ে আলমগিরী রচিত হয়। ন্যায় বিচারক একজন শাসক হিসেবে তার নাম ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখিত রয়েছে।

একবার সম্রাট আলমগীরের সৈন্য বাহিনী পাঞ্জাবের এক পল্লীর মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে জনৈক ব্রাহ্মণের অপরূপ সুন্দরী কন্যার দিকে লোভাতুর দৃষ্টি পড়ে মুসলিম সেনাপতির। ব্রাহ্মণের নিকট বিবাহের প্রস্তাব দেন সেনাপতি। ব্রাহ্মণ বেচারা মুসলমানের নিকট কন্যাকে বিবাহ দিতে অস্বীকার করে। সেনাপতি নাছোড় বান্দা। সুন্দরী মেয়েটিকে তার প্রয়োজন। এবং জানিয়ে দেন যে, আগামী একমাস পর অমুক তারিখে বর বেশে ব্রাহ্মণের বাড়িতে উপস্থিত হবেন ও সুন্দরী কন্যাকে যেভাবেই হোক নিয়ে যাবেন।

ব্রাহ্মণ বাবু বিরাট সমস্যায় পড়লেন যুবতী মেয়েকে নিয়ে। সত্যিই যদি মুসলিম সেনাপতি তার বাড়িতে এসে উপস্থিত হয়ে পড়েন। মেয়েকে কোথায় লুকাবেন? আর লুকিয়ে কতক্ষণ রাখবেন। অবশেষে ব্রাহ্মণ স্বয়ং বাদশাহ আলমগীরের শরণাপন্ন হলেন এবং সমস্ত ঘটনা খুলে বললেন এবং সাহায্যের আবেদন জানালেন। সম্রাট তাকে অভয় দিলেন, ‘নির্দিষ্ট দিনে আমি আপনার বাড়িতে থাকবো। ব্রাহ্মণ নতুনভাবে চিন্তায় পড়ে গেলেন। ভাবতে লাগলেন, ‘সম্রাট শত সহস্র রাষ্ট্রীয় ঝামেলায় আমার কথা মনে রাখবেন? মনে থাকলেও তিনি কি নিজে আসবেন, নাকি কোন প্রতিনিধি পাঠাবেন। আর যদি সত্যিই তিনি আসেন তবে সঙ্গে লোক-লস্কর, হাতি-ঘোড়া নিশ্চয়ই থাকবে। তাদেরকে কোথায় থাকতে দিবেন; নানা চিন্তা নিয়ে তিনি বাড়ি ফিরলেন।

অবশেষে সমস্ত চিন্তার অবসান ঘটিয়ে বিবাহের ঠিক আগের দিন সম্রাট আলমগীর নিজে এসে হাজির হন ব্রাহ্মণের বাড়িতে। ব্রাহ্মণ তো হতবাক। এ যেন ‘গরিবের বাড়িতে হাতির পা'।

সম্রাট ঐ দরিদ্র ব্রাহ্মণের জীর্ণ কামরায় সারারাত এবাদত-বন্দেগী আর কান্নাকাটি করে কাটিয়ে দেন। ব্রাহ্মণ পরিবার তো অবাক। ইনি কাঁদছেন কেন? উনার কিসের অভাব? কান্নার ধরণ দেখে মনে হয় উনি যেন মৃত্যুদন্ডের আসামি জীবন ভিক্ষা চাইছেন কারও কাছে। এসব প্রশ্নের উত্তর তারা খুঁজে পেল না।

এদিকে সেনাপতি বর বেশে ব্রাহ্মণের বাড়িতে এসে উপস্থিত হলেন এবং বিবাহের পূর্বে মেয়েকে একবার দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন এবং বললেন, দেখেশুনে বিবাহ করা ইসলাম ধর্মের বিধানও বটে। সম্রাট পূর্বেই ব্রাহ্মণকে কৌশল শিখিয়ে দিয়েছেন। সম্রাটের শেখানো কথা অনুযায়ী ব্রাহ্মণ সম্রাটের কামরা দেখিয়ে দিলেন। ফুরফুরে মেজাজে সুহাস্য বদনে সেনাপতি কামরার মধ্যে প্রবেশ করলেন। সেনাপতি ঘরে প্রবেশ করেই দেখলেন নাঙা তরবারি হাতে আজরাঈলের মতো রুদ্রমূর্তি ধারণ করে দাঁড়িয়ে আছেন স্বয়ং দিল্লীর বাদশাহ আলমগীর। সেনাপতির সুহাস্য বদন মলিন হয়ে গেল। ভয়ে, লজ্জায় বেহুঁশ হয়ে গেল। ব্রাহ্মণ, বাদশাহ আলমগীরের সুবিচার, দায়িত্ববোধ ও অসাম্প্রদায়িক মনোভাব দেখে অভিভূত হয়ে গেলেন এবং আনন্দে উদ্বেলিত কণ্ঠে বললেন, আপনি আমার কন্যার ইজ্জত রক্ষা করেছেন। আপনার এই ঋণ অপরিশোধ্য। সম্রাট ব্রাহ্মণকে বুকে জড়িয়ে আলিঙ্গন করে বললেন, ‘ভাই ইহাতো আমার প্রতি আপনার ঋণ নয়; বরং মহান দায়িত্ব। আমি যে আমার দায়িত্ব যথাযথ পালন করতে পেরেছি এতে আমি ধন্য। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহপাকের নিকট যিনি আমাকে ভাল কাজ করার তৌফিক দিয়েছেন। ঐ ঘটনার পরই পাঞ্জাবের ওই পল্লীর নাম রাখা হয় ‘আলমগীর পল্লী'। ১৭০৭ সালে ২৫ ফেব্রুয়ারি এই মহান মনীষী ৮৩ বছর বয়সে স্বর্গপানে যাত্রা করেন। ন্যায় বিচারক বাদশাহ হিসেবে প্রলয়দিন অবধি ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে আলমগীরের নাম।
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×