somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এবছর ২৮ ছফর পবিত্র আখেরী ছাহার শোম্বাহ, ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম ও হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের পবিত্র বিছাল শরীফ

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এ বছর ২৮ ছফর পবিত্র আখেরী ছাহার শোম্বাহ তথা ছফর মাসের শেষ বুধবার। আখেরী ছাহার শোম্বাহ বলতে বুঝায়, যেদিন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দীর্ঘদিন অসুস্থতাকে গ্রহন করার পর সুস্থতা গ্রহন করেন।

=====================================================================================

পবিত্র আখিরী চাহার শোম্বাহ শরীফ’ বলতে পবিত্র ছফর শরীফ মাস উনার শেষ বুধবার উনাকে বলা হয়। পবিত্র ছফর শরীফ মাস ব্যতীত আর কোনো মাস উনার শেষ ইয়াওমুল আরবিয়ায়ি বা বুধবারকে ‘পবিত্র আখিরী চাহার শোম্বাহ শরীফ’ বলা হয় না। যেমন ‘আশূরা’ শব্দটি আরবী ‘আশরাতুন’ শব্দ হতে এসেছে; যার অর্থ দশ বা দশম। কিন্তু ইছতিলাহী বা পারিভাষিক অর্থে ‘আশূরা’ শরীফ বলতে শুধুমাত্র পবিত্র মুহররমুল হারাম শরীফ মাস উনার ১০ তারিখ দিনটিকে বুঝানো হয়ে থাকে। অন্য কোনো মাস উনার ১০ তারিখকে পবিত্র আশূরা শরীফ বলা হয় না।
মূলত, পবিত্র মুহররমুল হারাম শরীফ মাস উনার ১০ তারিখ দিনটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য ও মর্যাদামন্ডিত হওয়ার কারণে যেমনিভাবে উক্ত দিনটি ‘আশূরা’ শরীফ নামে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে, তদ্রুপ পবিত্র ছফর শরীফ মাস উনার শেষ ইয়াওমুল আরবিয়ায়ি বা বুধবার দিনটিও বিশেষ বৈশিষ্ট্য ও মর্যাদামন্ডিত হওয়ার কারণে ‘পবিত্র আখিরী চাহার শোম্বাহ শরীফ’ হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। আর সে বিশেষ বৈশিষ্ট্য ও মর্যাদামন্ডিত বিষয়টি হলো, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দীর্ঘদিন অসুস্থতাকে গ্রহণ করার পর পবিত্র আখিরী চাহার শোম্বাহ শরীফ দিনে সুস্থতাকে গ্রহণ করেন।
অতঃপর গোসল মুবারক করত খাওয়া-দাওয়া করেন। পরে পবিত্র মসজিদে নববী শরীফ উনার মধ্যে মুবারক তাশরীফ রাখেন। তিনি সুস্থতা মুবারক উনাকে গ্রহণ করার কারণে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা অত্যন্ত আনন্দিত হন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে শুকরিয়া আদায় করেন এবং এ উপলক্ষে উনাদের সাধ্যমতো আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে হাদিয়া পেশ করেন। আর আলাদাভাবে গরিব-মিসকিনদেরকেও দান-ছদকা করেন।
কাজেই এ দিনটিতে উম্মতের জন্য উনাদের নবী ও রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বত ও সন্তুষ্টি মুবারক লাভের উদ্দেশ্যে সাধ্য ও সামর্থ্য অনুযায়ী হাদিয়া এবং দান-ছদকা করা ও খুশি প্রকাশ করা পবিত্র সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত।

-০-

ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম ৪৯ হিজরীতে ২৮শে পবিত্র ছফর শরীফ “শাহাদাত” শরীফ গ্রহণ করেন।
====================================================================================
খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি কখনো হযরত নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের বাসনা অপূর্ণ রাখেন না। আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রায়শই শাহাদাত মুবারক কামনা করতেন। ছহীহ আবু দাউদ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে, আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আমার ইচ্ছে হয় জিহাদে যোগদান করে শহীদ হই। অতঃপর পুনরায় জীবিত হয়ে আবার জিহাদ করি ও শাহাদাত শরীফ গ্রহণ করি।” এইভাবে প্রায়ই তিনি শাহাদাত মুবারক কামনা করতেন।
মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূল্লিাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মধ্যে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র নূরুল আহমার মুবারক প্রবাহিত করে উনাদের শাহাদাত গ্রহণের দ্বারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাধ্যম দিয়ে “শাহাদাত” মাক্বামের মর্যাদা বৃদ্ধি করে দিয়েছেন।
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূল্লিাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে শহীদ করার জন্য একে একে পাঁচবার বিষ পান করানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের খাছ রহমত ও ইহসান মুবারক-এ তিনি প্রত্যেকবারই বেঁচে যান। বর্ণিত রয়েছে, উনাকে যখন বিষ পান করানো হয়েছিল তখন উনি প্রত্যেকবার পবিত্র রওযা শরীফ উপস্থিত হয়ে প্রিয় নানাজী নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে গিয়ে জানাতেন। যার ফলে উনার মধ্যে আর বিষ কোনো ক্রিয়া করতে পারেনি। কিন্তু ষষ্ঠবার উনাকে শহীদ করার জন্য উনার পানি মুবারক পূর্ণ কলসি মুবারক-এ অর্থাৎ যে কলসি মুবারক উনার মুখ কাপড় দিয়ে বেঁধে রাখা হতো, যাতে ভিতরে কিছু ফেলা সম্ভব না হয় সেই কাপড় মুবারক উনার উপর শত্রুরা হিরকচূর্ণ বিষ উনার অজান্তে মিশিয়ে দিয়েছিল। তিনি গভীর রাতে হিরকচূর্ণ বিষ মিশ্রিত পানি মুবারক কলসি থেকে ঢেলে পান করেন। এ বিষ এত মারাত্মক ছিল যে, তিনি এটা পান করার পর আর পবিত্র রওযা শরীফ তাশরীফ মুবারক রাখতে পারেননি। তিনি শাহাদাত মুবারক অর্থাৎ বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন। তিনি ৪৯ হিজরীতে ২৮শে পবিত্র ছফর শরীফ প্রায় সাড়ে পঁয়তাল্লিশ বছর বয়স মুবারকে বিছাল মুবারক গ্রহণ করেন।

-০-

পবিত্র নকশবন্দিয়ায়ে মুজাদ্দেদিয়া তরীক্বা উনার ইমাম হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পবিত্র বিছাল শরীফ ২৮ পবিত্র ছফর শরীফ

*****************************************************************************************************

মহান আল্লাহ পাক উনার খালিছ ওলী দ্বিতীয় সহস্রাব্দের (একাদশ হিজরী শতকের) মহান মুজাদ্দিদ, আফদ্বালুল আউলিয়া, কাইয়্যুমে আউওয়াল শাহ ছূফী শায়েখ আহমদ ফারূকী হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী সিরহিন্দী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি। তিনি ১০৩৪ হিজরী সনের ২৮ পবিত্র ছফর শরীফ মাসে ৬৩ বছর বয়স মুবারকে বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন। তিনি খাছ সুন্নতী বয়স মুবারক পেয়েছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
তিনি উনার যামানার মুজাদ্দিদ, মুজতাহিদ, ইমাম, গাউছুল আ’যম ও মহান আল্লাহ পাক উনার খাছ লক্ষ্যস্থল ওলী ছিলেন। তিনি জীবনের কোনো অবস্থায় ফরয-ওয়াজিব সুন্নতে দায়িম ও মুস্তাহাব আমলও ত্যাগ করেননি। তিনি সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সুন্নত পালন করতেন। কখনোই বিদয়াত-বিশরা’কে সহ্য করতেন না। তিনি কখনোই আমীর-উমারা ও রাজা-বাদশাহদের তোয়াজ করতেন না। তিনি বাদশাহ আকবের শরীয়তবিরোধী কুফরী দীনে ইলাহীর বিপক্ষে রুখে দাঁড়িয়ে ছিলেন এবং শেষপর্যন্ত উনার তাজদীদের দাপটের কারণে দীনে ইলাহীর অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গিয়েছিলো। সম্মানিত দ্বীন ইসলাম হক্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং নাহক্ব মিটে যায়। প্রভাবশালী মুসলমান নামধারী গুমরাহ বাদশাহ আকবরের কাছে কখনোই তিনি মাথা নত করেননি। উনার সাথে বেয়াদবী করার কারণে বাদশাহ আকবরের শেষপর্যন্ত মাথা ফেটে যায় এবং এই অসুস্থতা নিয়েই সে মারা যায়। উনার তাজদীদের প্রভাবে তৎকালীন সকল উলামায়ে ‘সূ’ তথা ধর্মব্যবসায়ী উলামাদের মুখোশ উন্মোচিত হয়েছিল এবং তারা নাস্তানাবুদ হয়েছিল। সুবহানাল্লাহ!

এই পবিত্র ছফর শরীফ মাসে সেই শিক্ষা ও ইত্তিবা সকলের নছীব হোক।

সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩৫
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা শহর ইতিমধ্যে পচে গেছে।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



স্থান: গুলিস্থান, ঢাকা।

ঢাকার মধ্যে গুলিস্থান কোন লেভেলের নোংড়া সেটার বিবরন আপনাদের দেয়া লাগবে না। সেটা আপনারা জানেন। যেখানে সেখানে প্রসাবের গন্ধ। কোথাও কোথাও গু/পায়খানার গন্ধ। ড্রেন থেকে আসছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজত্ব আল্লাহ দিলে রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েম আমাদেরকে করতে হবে কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:০৬



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) কেড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তির কোরাস দল

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৫



ঘুমিয়ে যেও না !
দরজা বন্ধ করো না -
বিশ্বাস রাখো বিপ্লবীরা ফিরে আসবেই
বন্যা ঝড় তুফান , বজ্র কণ্ঠে কোরাস করে
একদিন তারা ঠিক ফিরবে তোমার শহরে।
-
হয়তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাইডেন ইহুদী চক্তান্ত থেকে বের হয়েছে, মনে হয়!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮



নেতানিয়াহু ও তার ওয়ার-ক্যাবিনেট বাইডেনকে ইরান আক্রমণের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো; বাইডেন সেই চক্রান্ত থেকে বের হয়েছে; ইহুদীরা ষড়যন্ত্রকারী, কিন্তু আমেরিকানরা বুদ্ধিমান। নেতানিয়াহু রাফাতে বোমা ফেলাতে, আজকে সকাল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×