somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পিচ্চিগল্পঃ মুগ্ধতা

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

- তার মানে তুমি খাবে না?
- একটু আগে সকালের ভাত খেলাম, এখন পেট ভরা।
- আমাকে শিখাচ্ছ? এখন বাজে ২ টা, আর তুমি বলতেছ ,তুমি একটু আগে সকালের ভাত খাইছ?


কথাটা বলে উত্তর শুনবার জন্য রুম্মানের দিকে তাকাল, ইপা। ইপা মেয়েটার রাগ করার অসীম ক্ষমতা আছে। হাসতে হাসতে রাগ করে, কাঁদতে কাঁদতে রাগ করে, ভাল বাসতে বাসতে রাগ করে। আর রুম্মানের, বোধহয় উল্টাপাল্টা কাজ করার অসীম ক্ষমতা আছে।যা করে তার কিছুই ইপার পছন্দ হয় না। যা করে তাই ইপার রাগ করার মত হয়ে যায়। এই যে আজ দুপুরে ইপার দেখা করতে আসল।ইপাই বলেছে অবশ্য।এটা রাগ করার মত কিছু না।কিন্তু আজ ইপা অনেক শখ করে ,রান্না করে নিয়ে আসল, রুম্মানকে খাওয়াবে তাই।রুম্মানকে খেতে বলাতে,দুপুর ২ টার সময় এসে বলছে, সকালের ভাত খেল একটু আগে। পেট ভরা। এতো শখ করে রান্না করল,ইপার রাগ হবে না?
আর রুম্মানও ঠিক বুঝতে পারে না, কি বললে ইপা রাগ করবে, কি বললে করবে না।যাই করে, মনে হয় ভুল হয়ে গেল।মেয়েটা এতো শখ করে রান্না করে আনল, রুম্মানকে খাওয়াবে। আর রুম্মান একবার জানতেও চাইল না কি রান্না করেছে।উল্টা বলল,পেট ভরা।রাগিয়ে দিল ইপাকে। রাগ ভাঙাতে হবে। রুম্মান বলল, আসলে আমি ঘুম থেকে উঠলাম ১২ টার দিকে।উঠে ফ্রেশ হয়ে খেতে খেতে দেরী হয়ে গেল।
- তার মানে তুমি খাবে না?
- না, খাব তো। কিন্তু এখন পেট ভরা। চল, আমরা এখন গল্প করি।পরে দুজন একসাথে খাব, আচ্ছা?
- না। তুমি খাবে কিনা বল?


মেয়েটা রেগেই যাচ্ছে। এতো অল্পতে কেউ রাগ করে?রুম্মানের কি করা উচিৎ, ভাবনায় আসছে না।হঠাৎ বলল, আচ্ছা তুমি কি রান্না করে আনলে আমার জন্য?


ইপার মুখটা আনন্দে চিক চিক করে উঠল।রাগী মুখে অনেকটা আনন্দের ছাপ, অপরূপ লাগছে।টিফিন বক্সটা খুলল ইপা। নুডুলস রান্না করে নিয়ে এসেছে। বক্সটা খুলে ইপা বলল, দেখো দেখো, আমি তোমার জন্য নুডুলস রান্না করে আনলাম।আমি নিজে রান্না করেছি, তোমার জন্য।আমার বান্ধবীরা খেতে চাইল, দেই নি। একটুও না।বুয়া রান্নার সময় সাহায্য করতে চাইল, তাও করতে দেই নি। একাই রান্না করলাম।তোমার জন্য শুধু। দেখো দেখো।


রুম্মান ইপার দিকে তাকিয়ে আছে অপলকে, মেয়েটা আসলেই কত আগ্রহ নিয়ে, কত ভালবাসা নিয়ে রান্না করেছে। ইপা রুম্মানের দিকে তাকিয়ে বলল, এই এই, আমাকে কি দেখো?দেখনা আমি রান্না করে আনলাম তোমার জন্য।


রুম্মান টিফিন বক্সের দিকে তাকিয়ে দেখল, পুরো বক্স ভর্তি নুডুলস। দেখেই বোঝা যাচ্ছে খেতে অনেক সুস্বাদু হবে।কিন্তু তাই বলে এতখানি? রুম্মান বলল, এতো রান্না করছ কেন?
- কই এতো? ২ প্যাকেট নুডুলস, ২ টা ডিম, আর হাফ কোয়ার্টার মুরগী দিয়ে। এতো টুকু খেতে পারবে না?


রুম্মান ইপার মুখের দিকে আর একবার তাকাল। বুঝতে চেষ্টা করল, না খাবার কথা বললে, আবার রাগ করবে কিনা ইপা। এরপর মাথা নেড়ে বলল, হ্যাঁ, কেন পারব না? অবশ্যই পারব।


একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে ইপা বলল, নাও খাও।কত ভাল তুমি।


রুম্মানের দিকে বক্সটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল, কেমন হইছে একেবারে সত্যি কথা বলবে। আমাকে মিথ্যা কথা বললে, কিন্তু বুঝে ফেলব।


রুম্মান হাতে চামচ নিয়ে খাওয়া শুরু করল। আসলেই অনেক ভাল হয়েছে রান্না।রুম্মান খাচ্ছে আর ইপা আগ্রহ নিয়ে দেখছে।তবে রুম্মানের খেতে খুব কষ্ট হচ্ছে।আসলেই পেটটা ভরা। ইপা তা বুঝতে পেরে বলল, এতো আস্তে খাচ্ছ কেন? মুখের এই অবস্থা কেন? খুব খারাপ হইছে রান্না?
- আরে না, তা হবে কেন? আসলে পেট ভরা তো। তাই একটু কষ্ট হচ্ছে। মাঝখানে একটু বিরতি নেই? পরে খাই আবার?
- জ্বি না, তা হবে না। একেবারে পুরুটুকু খেতে হবে।
- এতোখানি? আচ্ছা, আমি একাই খাব? তুমি নাও, তুমিও খাও।
- তাও হবে না। আমি তোমার জন্য রান্না করেছি, তুমি খাবে।আমার বান্ধবীদের পর্যন্ত আমি দেই নি।
- ও জান, একটু তো বুঝ, আমার ব্যাপারটা। আমি এতো নুডুলস একসাথে খাই নি। এতো খাওয়া সম্ভব বল?
- সম্ভব। এই জন্যই তোমার এই অবস্থা। খাবে না,আর দিন দিন শুকিয়ে কাঠ হবে। আমার পাশে হাঁট আর লোকে নানা কথা বলে।একটু খেয়ে দেয়ে মোটা হতে পার না? এতোটুকু নুডুলস খেতে পারবে না?


রুম্মান কিছু না বলে চুপচাপ খেতে লাগল। ইপা তাকিয়ে রুম্মানের খাওয়া দেখছে। ছেলেটার আসলেই কষ্ট হচ্ছে খেতে। কিন্তু এতো কষ্ট করে রান্না করা, রুম্মান খাবে না?ইপা রুম্মানের হাতটা ধরল। রুম্মান আস্তে করে মাথা তুলে তাকাল। ইপা বলল, থাক, আর খেতে হবে না।
- আরে না, খেতে পারব, সত্যি রান্না ভাল হয়েছে। বিশ্বাস কর। রাগ কইর না প্লিজ।
- আমি কি শুধু রাগই করি? ভালবাসতে পারি না?


রুম্মান কথাটা শুনে থমকে গেল। ইপার চোখের দিকে ভয়ে ভয়ে তাকাল। ইপা মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলল, দাও তোমার খেতে কষ্ট হচ্ছে। আমি খাইয়ে দেই।


রুম্মান আস্তে করে মাথা নাড়ল। আর ইপা রুম্মানকে খাইয়ে দিতে লাগল। রুম্মানের চোখ, ইপার মুখের উপর আটকা।এই মিষ্টি মুখটা থেকে চোখ ফেরানো দায়।একমনে খেয়ে যাচ্ছে রুম্মান, আর ইপা খাইয়ে দিচ্ছে। রুম্মানকে দেখতে কত অবুঝ লাগছে। মনে হচ্ছে খুব অবাক হয়েছে। এতো ভালবাসা হয়ত আশা করেনি। ভেবে বসে আছে, ইপা শুধু রাগই করতে পারে।
দুজনের এই দৃষ্টির মাঝে দারুণ ভালবাসা চলছে। মুগ্ধতা ঘিরে দুজন থমকে আছে।ভালবাসা বুঝি এমনই। কখনও ভয়ে থাকা, এই বুঝি রাগ করল। কখনও ভেবে নেয়া, আর কত রাগ করব। একটু না হয় ভালবাসি।
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। শেষ মুহূর্তে রাইসির হেলিকপ্টারে কী ঘটেছিল

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২২ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৩২

ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হওয়ার আগে কী ঘটেছিল, সে সম্পর্কে এখন পর্যন্ত খুব কমই জানা গেছে। এবার এ ঘটনার আরও কিছু তথ্য সামনে এনেছেন ইরানের প্রেসিডেন্টের চিফ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনারই মেরেছে এমপি আনারকে।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২২ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


ঝিনাইদহ-৪ আসনের সরকারদলীয় এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ছিল তারই ছোটবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার আক্তারুজ্জামান শাহীন!

এই হত্যার পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আরেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের কিছু উল্টা পালটা চিন্তা !

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২২ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১০

১।
কলকাতা গিয়ে টুকরা টুকরা হল আমাদের এক সন্ত্রাসী এমপি, কলকাতা বলা চলে তার ২য় বাড়ি, জীবনে কতবার গিয়েছেন তার হিসাব কেহ বের করতে পারবে বলে মনে করি না, কলকাতার অলিগলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাটির কাছে যেতেই..

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

মাটির কাছে
যেতেই..


ছবি কৃতজ্ঞতাঃ https://pixabay.com/

ঠিক যেন
খা খা রোদ্দুর চারদিকে
চৈত্রের দাবদাহ দাবানলে
জ্বলে জ্বলে অঙ্গার ছাই ভস্ম
গোটা প্রান্তর
বন্ধ স্তব্ধ
পাখিদের আনাগোনাও

স্বপ্নবোনা মন আজ
উদাস মরুভূমি
মরা নদীর মত
স্রোতহীন নিস্তেজ-
আজ আর স্বপ্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

পর্ণআসক্ত সেকুলার ঢাবি অধ্যাপকের কি আর হিজাব পছন্দ হবে!

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৩ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:২৭



ইন্দোনেশিয়ায় জাকার্তায় অনুষ্ঠিত একটা প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক জিতেছে বাংলাদেশি নারীদের একটা রোবোটিক্স টিম। এই খবর শেয়ার করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপিকা। সেখানে কমেন্ট করে বসেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×