somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মানুষ কেন কম্পিউটার তৈরী করেছে এবং আল্লাহ কেন মানুষ তৈরী করেছেন ।

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আল্লাহ জীবন ও মরণ সৃষ্টি করেছেন মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য যে কে কে তার কর্মে সর্বাপেক্ষা উত্তম । মানুষতো বর্তমানে ধর্মীয় বই অপেক্ষা বিজ্ঞানের কথা বেশী বিশ্বাস করে । বিজ্ঞানই এখন বলছে যে মৃত্যু মানেই জীবনের শেষ নয় । জীবন ও মৃত্যু হলো মানুষের দুটো অবস্হা । মৃত্যুর সময় মানুষের আত্না স্হায়ীভাবে দেহ ছেড়ে চলে যায় । এছাড়া ঘুমের সময় চলে গেলেও তা আবার ফিরে আসে । মৃত্যুর পর আত্না এই জগৎ ছেড়ে অন্য জগতে চলে যায় । মানুষের দেহটা পচে গলে যায় । কিন্তু আত্না ঠিকই অস্তিত্ববান থাকে । মানুষ মৃত্যুর সময় তার অন্তরের যে বিশ্বাস নিয়ে দেহত্যাগ করে , সে তার সেই বিশ্বাস নিয়েই আবার নতুন দেহ নিয়ে জেগে ওঠে ।




কুরআন ও হাদীসের কথা হলো অদৃশ্যের উপর বিশ্বাস - অর্থাৎ যা কিছু চোখে দেখা যায় না । স্রষ্টা, বেহেশ্ত, দোযখ সবই বর্তমানে অদৃশ্য । মৃত্যুর পর আমাদের সবার বর্তমান চোখের পর্দা খুলে যাবে । আমরা তখন সব কিছু দেখতে পাব । এখন আমাদের সামনে এক পর্দা রয়েছে । আমরা জানি আমাদের মৃত্যু হবে কিন্তু দুনিয়ার এই অস্হায়ী বস্তু তথা জীবন, সম্পদ এবং নফসের ধোকায় আমরা সব ভূলে আছি । এগুলো সবই হলো পরীক্ষার বস্তু ।

আল্লাহ যুগে যুগে নবী রাসুল পাঠিয়েছেন মানুষকে এসব সম্মন্ধে সতর্ক করার জন্য যে মানুষের এই জীবনের পরে আরেক জীবন আছে । তার এই জীবনের স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাস এবং কর্মের উপরই ভিত্তি করে আরেক জীবন গড়ে ওঠবে ।

যারা বুদ্ধিমান এবং চিন্তা ফিকির করে । তারা অন্ধের মত জীবন যাপন করে না । তারা দুনিয়ার জীবন এবং পরিবেশ নিয়ে চিন্তা করে এবং স্রষ্টাকে সন্ধান করে । স্রষ্টা আপনা আপনি এসে ধরা দেন না । মানুষকে তিনি উনার সৃষ্টির নিদর্শনের মাধ্যমে খুজতে বলেছেন এবং মানুষকে যে অনর্থক সৃষ্টি করেন নি তা বুঝতে বলেছেন ।



তিনি আমাদের জ্ঞান দান করেছেন । আমরা উনার প্রদত্ত জ্ঞান দ্বারা এই জীবনে উন্নত করে চলেছি এবং বিভিন্ন বস্ত্ত নিজের প্রয়োজনে তৈরী করছি । যেমনঃ কম্পিউটার মানুষের অন্যতম বিস্ময়কর আবিস্কার । কিন্তু মানুষ এটা তৈরী করেছে নিজের সুবিধার জন্য । এখন এই কম্পিউটার যদি মানুষের প্রয়োজন পুরা না করে অর্থাৎ যেজন্য তৈরী করা হয়েছে সেই কাজে না লাগে মানুষকি কম্পিউটার ব্যবহার করবে ? করবেনা । আবার মানুষ তার প্রয়োজন অনুসারে কম্পিউটারের উন্নত সংস্করণ তৈরী করছে । সে তার প্রথম আবিস্কার মেইনফ্রেম তথা বিশালাকায় কম্পিউটার নিয়েই বসে নেই । সে তার সুবিধামত কম্পিউটারের উন্নত সংস্করণ লেপটপ, নোটপ্যাড আর ট্যাবলেট তৈরী করছে ।

অনুরূপ ভাবে আল্লাহ সুবহানাতায়ালাও মানুষকে অনর্থক সৃষ্টি করেন নি । তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন সে যেন তার ইবাদত করে । তার পবিত্রতা ও প্রশংসা-গুণকীর্তন করে । এখানে মানুষের আর কোন পছন্দ নাই যে সে তার খেয়াল খূশীমত জীবন যাপন করবে । স্রষ্টার সৃষ্টি হিসেবে তাকে যেজন্য সৃষ্টি করা হয়েছে তাকে তাই করতে হবে । এই দুনিয়ার জীবনে যদি সে স্রষ্টাকে স্মরণ করে উত্তম জীবন যাপন করে তাহলে সে মৃত্যুর পর নতুন জীবনে চিরস্হায়ী আয়ু এবং আনন্দময় জীবন পাবে । আর তা না হলে তাকে শাস্তি পেতে হবে । দুনিয়ার জীবনেও তিনি কিছু শাস্তির আস্বাদন করান যাতে আখেরাতের ভয়াবহ শাস্তি থেকে কিছুটা নাজাত পাওয়া যায় ।

সমস্ত কুরআনে আল্লাহ উপরোক্ত সতর্কবাণী বার উল্লেখ করেছেন । আমরা দুনিয়া নিয়ে - এই স্বল্প দিনের জীবন নিয়ে এতই ব্যস্ত যে মৃত্যু পরবর্তী জীবন, স্রষ্টার নিদর্শন সম্মন্ধে অসচেতন হয়ে রয়েছি । আল্লাহ কুরআনে বলেছেন যে, তিনি ইচ্ছা করলে মানুষের পরিবর্তে অন্য সৃষ্টি তৈরী করতে পারেন বা মানুষকে যেকোন সময় দুনিয়ার জীবন থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারেন ।

সূরা মূলকে আল্লাহ তায়ালা উপরোক্ত কথাগুলো সুন্দরভাবে তুরে ধরেছেন ।

১. পূণ্যময় তিনি, যার হাতে রাজত্ব । তিনি সব কিছুর উপর সর্বশক্তিমান ।
২. যিনি সৃষ্টি করেছেন মরণ ও জীবণ , যাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন - কে তোমাদের মধ্যে কর্মে শ্রেষ্ঠ । তিনি পরাক্রমশালী , ক্ষমাময় ।



৩. তিনি সপ্ত আকাশ সৃষ্টি করেছেন । তুমি করুণাময় আল্লাহর সৃষ্টিতে কোন তফাৎ দেখতে পাবে না । আবার দৃষ্টি ফিরাও কোন ফাটল দেখতে পাওকি ?
৪. অতঃপর তুমি বার বার তাকিয়ে দেখ - তোমার দৃষ্টি ব্যর্থ ও পরিশ্রান্ত হয়ে তোমার দিকে ফিরে আসবে ।
৫. আমি সর্বনিম্ন আকাশকে প্রদীপমালা দ্বারা সুসজ্জ্বিত করেছি ; সেগুলোকে শয়তানদের জন্য ক্ষেপনাস্ত্র করেছি এবং প্রস্তুস্ত করে রেখেছি তাদের জন্য জ্বলন্ত অগ্নির শাস্তি ।



৬. যারা তাদের পালনকর্তাকে অস্বীকার করেছে তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের শাস্তি । সেটা কত নিকৃষ্ট স্হান ।
৭. যখন তারা তথায় নিক্ষিপ্ত হবে, তখন তার উৎক্ষিপ্ত গর্জন শুনতে পাবে ।
৮.ক্রোধে জাহান্নাম ফেটে পড়বে । যখনই তাতে কোন সম্প্রদায় নিক্ষিপ্ত হবে , তখন তাদেরকে তার সিপাহীরা জিজ্ঞেস করবেঃ তোমাদের কাছে কি কোন সতর্ককারী আগমণ করেনি?
৯. তারা বলবেঃ হ্যা , আমাদের কাছে সতর্ককারী আগমণ করেছিলো । অতঃপর আমরা মিথ্যারোপ করেছিলাম এবং বলেছিলামঃ আল্লাহ কোন কিছু নাযিল করেন নি । তোমরা মহা বিভ্রান্তিতে পড়ে রয়েছ ।
১০. তারা আরো বলবেঃ যদি আমরা শুনতাম বা বুদ্ধি খাটাতাম , তবে আমরা জাহান্নাম বাসীদের মধ্যে থাকতাম না ।
১১. অতঃপর তারা তাদের অপরাধ স্বীকার করবে । জাহান্নাম বাসীরা দূর হোক ।


১২. নিশ্চয়ই যারা তাদের পালনকর্তাকে না দেখে ভয় করে, তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহা পুরস্কার ।
১৩. তোমরা তোমাদের কথা গোপনে বল অথবা প্রকাশ্যে বল, তিনি তো অন্তরের বিষয়াদি সম্পর্কে সম্যক অবগত ।
১৪. যিনি সৃষ্টি করেছেন , তিনি কি করে জানবেন না ? তিনি সূক্ষ জ্ঞানী , সম্যক জ্ঞাত ।
১৫. তিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে সুগম করেছেন, তোমরা তার কাধে বিচরণ কর এবং তার দেয়া রিযিক আহার কর । তারই কাছে পুনরুজ্জীবন হবে
১৬. তোমরা কি ভাবনা মুক্ত হয়ে গেছ যে, আকাশে যিনি আছেন , তিনি তোমাদেরকে ভূগর্ভে বিলিন করে দেবেন , অতঃপর তা কাপতে থাকবে ।
১৭. না, তোমরা নিশ্চিন্ত হয়ে গেছ যে, আকাশে যিনি আছেন, তিনি তোমাদের উপর প্রস্তর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন , অতঃপর তোমরা জানতে পারবে কেমন ছিলো আমার সতর্কবাণী ।
১৮. তাদের পূর্ববর্তীরা মিথ্যারোপ করেছিলো , অতঃপর কত কঠোর হয়েছিলো আমার অস্বীকৃতি ।



১৯. তারা কি লক্ষ্য করে না - তাদের মাথার উপর উড়ন্ত পক্ষীকূলের প্রতি - পাখা বিস্তারকারী ও পাখা সংকোচনকারী ? রহমান আল্লাহই তাদের স্হির রাখেন । তিনি সর্ববিষয় দেখেন ।
২০. রহমান আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের কোন সৈন্য আছে কি , যে তোমাদের সাহায্য করবে ? কাফিররা বিভ্রান্তিতেই পতিত আছে ।
২১. তিনি যদি রিযিক বন্ধ করে দেন, তবে কে আছে, যে তোমাদের রিযিক দেবে ? বরং তারা অবধ্যতা ও বিমূখতায় ডুবে রয়েছে ।
২২. যে ব্যক্তি উপুড় হয়ে মুখে ভর দিয়ে চলে, সে-ই কি সৎ পথে চলে , না সেই ব্যক্তি যে সোজা হয়ে সরল পথে চলে ?



২৩. বলুন, তিনিই তোমাদের সৃষ্টি করেছেন এবং দিয়েছেন কর্ণ, চক্ষু ও অন্তর । তোমরা অল্পই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর ।
২৪.বলুন, তিনিই তোমাদেরকে পৃথিবীতে বিস্তৃত করেছেন এবং তারই কাছে তোমরা সমবেত হবে ।
২৫. কাফিররা বলেঃ এই প্রতিশ্রুতি কবে হবে , যদি তোমরা সত্যবাদী হও ?
২৬. বলুন, এর জ্ঞান কেবল আল্লাহর কাছেই আছে । আমি তো কেবল প্রকাশ্য সতর্ককারী ।
২৭. যখন তারা সেই প্রতিশ্রুতিকে আসন্ন দেখবে তখন কাফিরদের মূখমন্ডল মলিন হয়ে পড়বে এবং বলা হবেঃ এটাই তো তোমরা চাইতে ।


২৮. বলুন, তোমরা কি ভেবে দেখেছ যে - যদি আল্লাহ আমাকে এবং আমার সঙ্গীদেরকে ধ্বংস করেন অথবা আমাদের প্রতি দয়া করেন তবে কাফেরদেরকে কে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে রক্ষা করবে ?
২৯. বলুন, তিনি পরম করুণাময় , আমরা তাতে বিশ্বাস রাখি এবং তারই উপর ভরসা করি । সত্বরই তোমরা জানতে পারবে কে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় আছে ।



৩০. বলুন, তোমরা ভেবে দেখেছ কি - যদি তোমাদের পানি ভূগর্ভের গভীরে চলে যায় তবে কে তোমাদের সরবরাহ করবে পানির স্রোতধারা ?




সূত্রঃ মারেফূল কুরআন, মূফতি শাফী উসমানিয়া (রহঃ)

সুতরাং আমাদের উচিত আল্লাহর উপর দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে জীবন যাপন করা এবং উনাকে স্মরণ করা । এই দুনিয়াতে আমরা কেউই স্হায়ী নয় । মৃত্যুর পর আমাদেরকে আমাদের কাজের হিসাব দিতে হবে । সেখানে কেউ কারো উপকারে আসতে পারবেনা । প্রত্যেকেই তার কর্ম ফল দেখতে পাবে । সময় থাকতে সতর্ক না হলে পরে হাজার আফসুসেও কোন কাজ হবে না । ধন্যবাদ ।

Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:০৫
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার মায়ের চৌহদ্দি

লিখেছেন শাওন আহমাদ, ১২ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৫



আমার মা ভীষণ রকমের বকবকিয়ে ছিলেন। কারণে-অকারণে অনেক কথা বলতেন। যেন মন খুলে কথা বলতে পারলেই তিনি প্রাণে বাঁচতেন। অবশ্য কথা বলার জন্য যুতসই কারণও ছিল ঢের। কে খায়নি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণা!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৭



নীচে, আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণাকে ( পেশগত দক্ষতা ও আভিজ্ঞতার সারমর্ম ) আমি হুবহু তুলে দিচ্ছি। পড়ে ইহার উপর মন্তব্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

মোজো ইদানীং কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে 'অখাদ্য' খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৮

আজ (১০ মে ২০২৪) রাত দুইটা দশ মিনিটে নিউ ইয়র্কের পথে আমাদের যাত্রা শুরু হবার কথা। এর আগেও পশ্চিমের দেশ আমেরিকা ও কানাডায় গিয়েছি, কিন্তু সে দু’বারে গিয়েছিলাম যথারীতি পশ্চিমের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×