somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দেশের বর্তমান রাজনৈতিক হালচাল নিয়ে আজকে ফেসবুকে প্রদত্ত স্ট্যাটাস

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২৯ ডিসেম্বর ২০১৩ রবিবার রাত্র ৯টা ময়ূর ভিলা মোহাম্মদপুর ঢাকা-১২০৭

১. আগেই ধারণা করেছিলাম যে, বিরোধী দলের কর্মসূচি ব্যর্থ করতে সরকারি অবরোধের মুখোমুখি হতে হবে আমাদের। সেটাই হল শেষ পর্যন্ত। বিরোধী দলের কর্মসূচি ভণ্ডুল করতে ১৪-দল কর্মীরা মাঠে থাকবে, সেটাও স্বাভাবিক। নির্দেশনা ছিল ১৮ দল কোনো সহিংসতার চেষ্টা করলে তারা প্রতিহত করবে। কিন্তু আমরা কি দেখলাম? আগ বাড়িয়ে প্রেস ক্লাবের ভিতরে অবস্থানরত সাংবাদিকদের অযথা হট-পাটকেল মারল আওয়ামী-কর্মীরা! আগ বাড়িয়ে শান্তিপূর্ণ অবস্থানে কেন অশান্তি সৃষ্টি?! এসব আলামত শুভ নয়।

২. সুপ্রিম কোর্ট সাধারণ মানুষের সর্বশেষ ভরসাস্থল। সুপ্রিম কোর্টের মর্যাদা রক্ষায় সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখা উচিত আইনজীবীদের। অথচ আজ সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে নজিরবিহীন ঘটনা ঘটল! এসব ঘটনায় একজন আইনজীবী হিশেবে ভীষণ লজ্জ্বিত, ক্ষুব্ধ! ব্যক্তিগতভাবে কোর্ট প্রাঙ্গণে কোনো রাজনৈতিক স্লোগান দেয়ার পক্ষপাতী নই। তারপরও আমাদের ‘ঐতিহ্যানুযায়ী’ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা ভিতরে বসে স্লোগান দিয়েছেন, পুলিশের আটকে-দেয়া গেট পেরিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসতে চেয়েছেন--- সেটাকে আমি আন্দোলনের অংশ হিশেবেই দেখতে চাই। কিন্তু সেখানে অযথা পুলিশের জলকামান ব্যবহার কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। একইভাবে প্রত্তুত্যরে যেভাবে আন্দোলকারী-আইনজীবীরা পুলিশের উপর ইট-পাটকেল মারলেন, সেটাও সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।

৩. দোষারোপের রাজনীতি আমাদের নতুন নয়। ১৮-দল আহূত হরতাল-অবরোধে অগ্নিসংযোগ, হত্যাকাণ্ড, যানবাহন ভাঙচুরসহ যাবতীয় নাশকতার দায় সরকারের উপর চাপিয়ে দিয়ে দায়মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করে ১৮-দল। অনুরূপভাবে সৈয়দ আশরাফও সংবাদ সম্মেলন করে বললেন যে, সুপ্রিম কোর্টে হামলা চালিয়েছে ছাত্রদল-যুবদল-শিবির! বেশ! যদি তাই হয়, তাহলে এসব সন্ত্রাসীরা যখন গেট খুলে কোর্ট প্রাঙ্গণের ভিতরে ঢুকে গেল, তখন কেন পুলিশ নীরবে দাড়িয়ে থাকল? কেন তৎক্ষণাৎ পুলিশ লাঠিপেটা করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়নি? তারপরও তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেই যে, আশরাফের কথাই সত্য; তাহলে টিভি চ্যানেলগুলো থেকে ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে অতিসত্ত্বর দুষ্কৃতিকারীদের ধরে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হোক। সুপ্রিম কোর্টের ভিতরে কোনো তাণ্ডব-হামলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। সুপ্রিম কোর্টের মর্যাদাকে রাজনৈতিক হানাহানির বলি হতে দেয়া উচিত হবে না কোনো পক্ষেরই। উভয় পক্ষের জন্যই এর পরিণাম হবে ভয়াবহ!

সৈয়দ আশরাফ আরো বলেছেন যে, আজকের কর্মসূচি ব্যর্থ হয়েছে। এটা সত্য। মূলত সরকার-আইন-শৃঙ্ক্ষলারক্ষাকারীবাহিনী-চৌদ্দদল কর্মীরা যৌথভাবে ১৮দলের কর্মসূচি ভণ্ডুল করে দিতে সক্ষম হয়েছে। এতে আপাতদৃষ্টিতে সরকারের জয় হলেও ক্ষতি বেশি হয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের; পরাজিত হয়েছে গণতন্ত্র।

৪. সবচেয়ে ভালো হল শফিক রেহমান কিংবা অন্য কারো লিখিত-বক্তব্য খালেদা জিয়া তোঁতা পাখির মত পাঠ করবেন। লিখিত-ব্ক্তব্যের বাইরে কথা বললেই তিনি তালগোল পাকিয়ে ফেলেন এবং সেক্ষেত্রে তিনি শেখ হাসিনার চেয়েও কয়েককাঠি সরেস! ব্যক্তিগতভাবে খালেদা জিয়াকে আমার কখনোই ভালো লাগেনা। বরাবরই তাকে অহংকারী এবং দাম্ভিক মনে হয়। সাধারণ মানুষের নেতা হবার গুণাবলী তাঁর আছে বলে মনে করিনা। শেখ হাসিনা তাঁর নেতা-কর্মী তথা জনমানুষের সাথে যতটা আন্তরিক, তাঁর ছিটেফোটাঁও খালেদা জিয়া নন। শেখ হাসিনাকে তাঁর নেতা-কর্মীরা সম্বোধন করেন ‘আপা’ বলে; আর খালেদা জিয়াকে ডাকতে হয় ‘ম্যাডাম’ বলে! তারপরও রাষ্ট্রপতি জিয়ার স্ত্রী হিশেবে তথা আওয়ামী লীগ-বিরোধী মানুষের নেতা হিশেবে তিনি টিকে আছেন, হয়তো আরো থাকবেন।

আজকে গুলশানের বাসভবনে অবরুদ্ধ হয়ে তিনি ক্রুদ্ধ হবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তিনি যেভাবে, যে ভাষায় কথা বললেন, তাতে সহজেই অনুমেয় তিনি মনের ভিতরে কতটা প্রতিহিংসা, বিদ্বেষ এবং অহংকার ধারণ করেন! ক্ষমতানামক যাদুর কাঠির ছোঁয়া পেয়ে গোপালগঞ্জের নাম মুছে দেয়াসহ কতটা প্রতিহিংসাপরায়ণ আচরণ করবেন, সেটারও প্রকাশ ঘটালেন তিনি! মূলত আমাদের প্রতিহিংসাপরায়ণ রাজনীতির জন্যই কেউই ক্ষমতার আস্বাদ থেকে মুক্ত হতে চায় না!

৫. আওয়ামী লীগ সরকারের অনেক সাফল্যের পাশাপাশি রয়েছে চরম কিছু ব্যর্থতাও। সরকারের অনেক কর্মকাণ্ডই সমর্থনযোগ্য নয়; বিশেষ করে শেয়ারবাজারধসের চরম ভুক্তভোগী আমি নিজে; যার খেসারত আজো দিয়ে চলেছি। কিন্তু তারপরও এটাই সত্য যে, আওয়ামী লীগের সময়ই দেশের উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হয়; বিভিন্ন রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়; জঙ্গিবাদ নির্মূল করতে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ নেয়া হয়; বিদ্যুত-শিক্ষা-কৃষি ক্ষেত্রে অসাধারণ সাফল্য অর্জিত হয়; আন্তর্জাতিক মণ্ডলে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয় (বর্তমান ‘সর্বদলীয় সরকারের’ কথা ভিন্ন)। সবচেয়ে বড় কথা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে আওয়ামী লীগ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ; একইসাথে যতই টিটকারি মারা হোক-না কেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল সাধারণ মানুষ ব্যাপকভাবে পাচ্ছে। অন্যদিকে, বিএনপির নানা ব্যর্থতা থাকা সত্ত্বেও বর্তমানে সবচেয়ে বড় সমস্যা হল জামায়াত-শিবির। শুধু জামায়াত-শিবির এবং জঙ্গিবাদের মদদদানকারী হিশেবে পরিচিত হবার কারণে বিএনপি মূলধারার গণমাধ্যম ও বুদ্ধিজীবীদের সমর্থন পাচ্ছেনা; আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও বিএনপি কিছু করতে পারছে না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে জামায়াত নয়, বিএনপি-ই জামায়াতের ঘাড়ে চেপে বসেছে! খালেদা জিয়ার উচিত অতিসত্ত্বর জামায়াত-শিবিরমুক্ত হওয়ার ঘোষণা দেয়া; যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করার ওয়াদা করা। অন্যথায়, বিএনপিকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌছঁতে।

৬. ১৮-দল এতদিন যেভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে সন্ত্রাসবাদ চালিয়েছে, সেটাকে জনগণ সর্বোতভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। সহিংস হরতাল-অবরোধের বদলে আজকের কর্মসূচি ছিল গণতান্ত্রিক; সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করার কর্মসূচি। আওয়ামী লীগ তথা তথাকথিত ‘সর্বদলীয়’ সরকার তাতে বাঁধার সৃষ্টি করবে সেটাও স্বাভাবিক। এসব বাঁধা-বিপত্তি পেরিয়েই বিএনপির আন্দোলন চালানো উচিত। বিএনপি সরকারের সময়ও আওয়ামী লীগ তথা চৌদ্দদল এসব বাঁধা-বিপত্তি সহ্য করেই আন্দোলন করেছিল। আমরা কোনোভাবেই ১৮-দলের কাছ থেকে রাজনৈতিক আন্দোলনের নামে সন্ত্রাসের তাণ্ডবলীলা দেখতে চাইনা। একইভাবে সরকারের অগণতান্ত্রিক মনোভাবের নগ্ন বহি:প্রকাশও কাম্য নয়।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৩৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে দেখা - ১৩ মে

লিখেছেন জোবাইর, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:০৩

১৩ মে ২০০৬


দমননীতির অদ্ভুত কৌশল
সরকার নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধী দলের ওপর দমন নীতির আশ্রয় নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দ্রুত বিচার আইন ও পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করে দমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাঁচা আম পাড়ার অভিযান

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২



গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×