somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুগল্পঃ ঘুষ

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(ক) পার্কের বেষ্ণে বসে আছে সাজিদ।
পড়নে ইস্ত্রি করা ফুলহাতা শার্ট আর কালো ফরমাল প্যান্ট। হাতে শক্ত করে ধরে রাখা একটি কালো ব্যাগ। ব্যাগের
ভেতরের জিনিসগুলো গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষাজীবনের বায়োডাটা। পুরো লাইফ হিস্টরি। গতসপ্তাহ একটি সার্কুলার বের হয়েছিল। বেসরকারী এনজিওতে ফিল্ড ওয়ার্ক করার জন্য লোক দরকার। বিদেশী এনজিও, বেতনও মোটামুটি ভাল। আজ ১০টায় ইন্টারভিউ।
এখনো সময় ঢের বাকি। তাই এখানে বসে থাকা। সাজিদ জানে চাকরিটা তার হবে না। ঢাকায় চাকরি পেতে হলে শিক্ষাগত যোগ্যতা না যতটা দরকার। তার থেকে বেশি দরকার সরকারী উচু পোষ্টে কর্মরত মামা-চাচা আর নাহয়
পকেট ভর্তি ক্যাশ টাকা। টাকা থাকলে চাকরি কোন সমস্যা না। দু'মিনিটে মামলা ডিসমিস। সাজিদের
উপরের লেভেলে কোন মামা-চাচা বা পকেট ভর্তি ক্যাশ কোনটাই নেই। শুধু
আছে কয়েকটি নামমাত্র অকেজো সার্টিফিকেট। সার্টিফিকেটে চাকরি হয় না !


কিন্তু চাকরিটা যে তার দরকার। বাবা মারা গেছেন দু'বছর হলো। সংসারের আর্থিক অবস্থা অনেক খারাপ, পড়াশোনা শেষ করেছে অনেক আগে। বিদেশে গিয়ে আরও পড়ার ইচ্ছে ছিল তবে টাকার
অভাবে তা আর করা হলো না। নিজের খরচ, ছোট বোনের পড়াশোনা, মায়ের ওষুধ, সংসারের নিত্যদিনের প্রয়োজন মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। সে অনেকগুলো টিউশনি করে। বন্ধু-বান্ধবের হাত
পা ধরে পেয়েছে। একটা কোচিং এ ঢোকারও চেষ্টা করছে। তবে এখানেও যে টাকা চাই...


(খ) ইন্টারভিউ হল। সাজিদ কোনার
একটি চেয়ারে বসে। আশেপাশের মানুষগুলোর উপর চোঁখ বুলাচ্ছে। কয়েকজন তো সুট-টাই পড়ে একেবারে ফিটফাট হয়ে এসেছে। যেন সে একেবারে নিশ্চিন্ত চাকরিটা তারই হবে। রেসিপশনে সুন্দরী বসে। কয়েকজনের
দৃষ্টি ঐখানে আটকে। চাকরিটা যদি রেসিপশনিস্ট দেখার হতো, তারা নির্ঘাত তা নিতে যুদ্ধ লাগিয়ে দিতো। ওয়েটিং রুম সুন্দর করে সাজানো।
দেয়ালে একটি চিত্রকর্ম, গ্রাম বাংলার ফসল তোলার দৃশ্য। এক পাশে ফুলের টব, সামনে নানান পেপার-পত্রিকা।


ইন্টারভিউ শেষ। খুব ভালো ভাবেই শেষ হয়েছে। সকলের মন জয় করতে পেরেছে বলেই মনে হয়।
পরবর্তীতে যোগাযোগ করার জন্য বলেছে। এই অফিসেই তার বন্ধু নজরুলের মামা চাকরি করেন।
নাম শরিফুল হক। আগের থেকেই পরিচয় ছিল।ইন্টারভিউ শেষে সাজিদকে ক্যান্টিনে নিয়ে গেলেন।

শরিফুল হক পানখোর মানুষ। পান খেতে খেতে ঠোঁট লাল হয়ে গেছে। হাতে পিক ফেলার কৌটা নিয়ে ঘোরেন।

- কি ভাইগানা ইন্টারভিউ কেমন দিলা?
- জ্বী ভালোই দিলাম
- পান খাবা? একটা বানিয়ে দেই?
- না, ঠিকআছে ধন্যবাদ
- আরে খাও চিটাংগের পান। জব্বর খাইতে।
- না থাক আপনিই খান
- আচ্ছা ঠিক আছে।
- মামা চাকরিটার যদি কিছু করতেন
- তুমি টেনসন নিও না। তোমার কথা বড় স্যারকে বলছি, ধরে নাও চাকরি হয়ে গেছে
- এরকম তো অনেকেই বললো। কাজ তো হল না
- এবার হবে। তুমি শুধু চা পানির টাকার ব্যবস্থা করো।
- কত দিতে হবে?
- বেশি না ৩ হলেই চলবে
- আপনি তো জানেন আমার অবস্থা।
- সে জন্যই তো স্যারকে বলে কমিয়ে এনেছি। তা না হলে আরও বেশি লাগতো।

চাকরিটা সাজিদের দরকার। খুব বেশি দরকার। ঘুষ ছাড়া এখন চাকরি হয় না। এবার ঘুষ দিতেই হবে। আর যে কোন উপায় নেই !


(গ)
- বাবা ইন্টারভিউ কেমন হইছে?
- ভালো হইছে
- চাকরিটা কি হবে?
- শরিফুল মামা তো বললেন হবে। কিন্তু
- কিন্তু কী?
- ঘুষ দিতে হবে।

রাজিয়া খাতুন চুপ হয়ে গেলেন। তিনি যা ভেবেছেন ঠিক তাই হলো। ঘুষ ছাড়া আজকাল চাকরি হয় না।
তার স্বামী আনিসুর রহমান
সরকারী কর্মকর্তা ছিলেন। তবুও কখনোও ঘুষ ছুয়েও দেখন নি। সত্পথে থেকে, সত্ উপায়ে অর্থ উর্পাজন করেছেন। তাই মারা যাওয়ার আগে তেমন কিছুই করে যেতে পারেন নি। সারাজীবনের উর্পাজন
দিয়ে দুতলা একটি বাড়ি আর ব্যাংকে কিছু ফিক্সড ডিপোজিট। ব্যাংকের টাকা প্রায় শেষ, বাড়িটাই যা শেষ সম্বল।

- কত দিতে হবে ?
- ৩ লাখ
- বাড়িটা বিক্রি করলে এতো টাকা হবে তো?
- কি বলছো মা?
- ঠিকই বলছি এছাড়া তো আর কোন উপায় নেই
- মা এ চাকরি আমার লাগবেনা
- তুই আমাদের কথা ভাবছিস। আমাদের কিছু হবেনা। তোর চাকরিটা হলে আমরা একটা ছোট্ট বাসায়
মাথা গুজে থাকতো পারবো।
- কিন্তু মা বাবার শেষ সম্বলটা....
- এই সম্বলের থেকে তোর চাকরিটা বেশি দরকার


(ঘ) সাজিদ শরিফুল হকের বাসায় এসেছে। তার পকেটে দুইটা খাম। দু টাতেই টাকা। একটাতে ৩ লাখ,
আরেকটাতে ১০ হাজার। একটা বড় স্যারের জন্য, আরেকটা শরিফুল মামার।
- কি ভাইগনা আনছো?
- জ্বী এই নিন
- কত আছে?
- যত বলেছিলেন
- ঠিক আছে দাও। তোমার চাকরিটা হয়ে গেছে।
যাওয়ার সময় মিষ্টি কিনে নিয়ে যেও।
- আচ্ছা ঠিক আছে। আর এটাও রাখেন।
- এটা কিসের জন্য?
- আপনার জন্য
- এটার আবার কি দরকার ছিল
- আমার জন্য এতো কিছু করলেন। এজন্যই দিলাম।
- হাহা ও কিছু না। শরিফুল হোক
খামটা নিতে নিতে বললেন।
- আমি উঠি

সাজিদ হাটছে। তার হাতে মিষ্টির প্যাকেট। মিষ্টি কেনার যোক্তিকতা নিয়ে সে এখনোও চিন্তিত। সে ঘুষ দিয়ে চাকরি নিতে চায় নি। নিজ
যোগ্যতায় পেতে চেয়েছিলি। সমাজে যোগ্যতার দাম নেই, দাম আছে অর্থের। অর্থের নিগড়ে সবাই বন্দি। সমাজের সবাই বন্দি !
১২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=নিছক স্বপ্ন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৮



©কাজী ফাতেমা ছবি
তারপর তুমি আমি ঘুম থেকে জেগে উঠব
চোখ খুলে স্মিত হাসি তোমার ঠোঁটে
তুমি ভুলেই যাবে পিছনে ফেলে আসা সব গল্প,
সাদা পথে হেঁটে যাব আমরা কত সভ্যতা পিছনে ফেলে
কত সহজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একদম চুপ. দেশে আওয়ামী উন্নয়ন হচ্ছে তো?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৯



টাকার দাম কমবে যতো ততোই এটিএম বুথে গ্রাহকরা বেশি টাকা তোলার লিমিট পাবে।
এরপর দেখা যাবে দু তিন জন গ্রাহক‍কেই চাহিদা মতো টাকা দিতে গেলে এটিএম খালি। সকলেই লাখ টাকা তুলবে।
তখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×