somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জিপিএ-৫ বনাম ভাল ফলাফল

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“পঞ্চম শ্রেণী সমাপনী পরীক্ষায় পাসের হার এবং জিপিএ-৫ তাক লাগিয়ে দিয়েছে। প্রায় ২৫ লাখ ১৯ হাজার ৩২ জন খুদে শিক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ২৪ লাখ ৮৩ হাজার ১৪২ জন।এদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে দুই লাখ ৪০ হাজার ৯৬১ জন। পরীক্ষায় গড় পাসের হার ৯৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ। সূত্র- প্রথম আলো (৩০/১২/২০১২)
ওপরের খবরটা দেখে আপনার কি মনে হয়? প্রথমেত সবারই খুব ভালো লাগে এইরকম ভালো রেজাল্ট দেখলে। কচি-কচি বাচ্চা ছেলে-মেয়েরা মাত্র ৯/১০ বছর বয়সেই অচেনা স্কুলে গিয়ে জীবনের প্রথম পাবলিক পরীক্ষা দিয়ে অত্যন্ত সফলতার সাথে ফলাফল করল। শিক্ষার্থীর রাতদিন জেগে বকবক পড়াশোনা, অভিভাবকদের পড়ার জন্য চাপ (এটা এক স্বীকৃত মানসিক অত্যাচার), শিক্ষকদের সহযোগিতা (বকুনি) ইত্যাদি সব সফল হল!!!
আসলেই কি তাই………??? এতগুলো বাচ্চা ছেলে-মেয়ে জিপিএ-৫ পেল!!! আসলেই কি এরা সবাই এতই ভাল শিক্ষার্থী? সবাই এই বয়সেই এত পড়াশোনা করে? আপনাদের কারো কারো কোন সন্তান/ছোট ভাই, বোনের পরীক্ষার রেজাল্টের আগে আপনাদের কি কখনো মনে হয়েছিল, Confirm জিপিএ-৫??
আমার মা একজন সরকারী স্কুলের শিক্ষিকা। প্রতিবারের মত এবারো মায়ের উপর সমাপনী পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। সর্বমোট ৫০০ খাতা মূল্যায়ন করার জন্য দেয়া হয়েছিল। আর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কড়া নির্দেশ ছিল এটা যে, কোন শিক্ষার্থী যদি ৭৫ নম্বর পায়, তবে তা ৮০ নম্বর পরিণত করতে হবে। এছাড়া যেভাবে হোক প্রশ্নের উত্তরের নম্বর যেন বাড়িয়ে দেয়া হয়। খাতায় সব প্রশ্নের উত্তরের নম্বর দেয়ার (প্রাথমিক মূল্যায়ন) পর দেখা গেল মাত্র ২০ শতাংশ শিক্ষার্থী ৮০-১০০ এর মধ্যে নম্বর পেয়েছে, ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী ৬৫-৭৫ এর মধ্যে নম্বর পেয়েছে, ২০ শতাংশ শিক্ষার্থী ৪৬-৬৫ এর মধ্যে নম্বর পেয়েছে, বাকি ১০ শতাংশ শিক্ষার্থী ৩০-৪৫ এর মধ্যে নম্বর পেয়েছে। এখন নির্দেশ মোতাবেক যেসব শিক্ষার্থী ৭০-৭৫ নম্বর পেয়েছে, তাদের সবার নম্বর ৮০ করা হয়। যারা ৫০-৬৯ এর মধ্যে নম্বর পেয়েছে, নম্বর ৬৫-৭০ করা হয়, আর যাদের পাস নম্বর আসেনি, তাদের পাস নম্বর দেয়া হয়। আর এই নম্বর বাড়িয়ে দিতে গিয়েই চরম ভোগান্তি তৈরী হয়েছিল, এমনিতেই এতগুলো খাতা একজন মানুষকে দিন-রাত পরিশ্রম করে দেখতে হয়েছে (সময় দেয়া হয়েছিল মাত্র ৫ দিন, হিসেবে প্রতিদিন গড়ে ১০০ এর মত খাতা দেখা, এরপর সবগুলো খাতার নম্বর যোগ করে তা মার্কশীটে অন্তর্ভুক্ত করা), এরপর যেসব খাতার নম্বর কম এসেছে সেসব খাতার নম্বর বাড়িয়ে আবার যোগ করা। সব খাতা মূল্যায়ন করা শেষে খাতাগুলো নির্ধারিত কেন্দ্রে গিয়ে রেখে আসা হয়। কিন্তু শেষ রক্ষা আর হয় না, সংশ্লিষ্ট কেন্দ্র থেকে ফোন করে তলব করা হয় আবার খাতাগুলো দেখার জন্য, কারণ অনেকগুলো খাতার নম্বর ৭৫ এ আছে, তা ৮০ করতে হবে। হায়, কর্তৃপক্ষকে কিছুতেই বোঝানো যায় না, যে খাতাগুলো ৬০-৬৫ থেকে ৭৫ এ নিয়ে আনা হয়েছে, আর নম্বর দেয়ার মত কোন জায়গায়ই নেই, আর উত্তরই লেখা নেই, নম্বরটা দিবে কিভাবে…? তারপরেও জোর করে আরও খাতার নম্বর বাড়িয়ে ৮০ করা হয়েছে।
ফল ভালো, কিন্তু মান ভাল না। এভাবে এতগুলো শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা না থাকা সত্বেও জিপিএ-৫ দেয়া হল, এটা তাদের মেধার সাথে চূড়ান্ত প্রতারণা করা হল। এই ছেলে-মেয়ে জানে যে তারা কেমন পরীক্ষা দিয়েছিল, এখন তারা এটাই বুঝেছে কোনরকম মোটামুটিভাবে পরীক্ষা দিলেই এখন খুব সহজেই ভালো রেজাল্ট (জিপিএ-৫) করা যাবে। এরপর…… এরপর যখন এই এত ভালো রেজাল্ট নিয়ে কোন ভাল কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবে না, তখন তার কেমন লাগবে? শিক্ষার্থী/অভিভাবকদের মানষিক অবস্থাটা কি দাঁড়াবে? চাকরীর বাজারের কথা তো আরও পরে।
এখন এসব বলে কি আর হবে! সবকিছুতেই রাজনীতিকরণ, এ তো বলার অপেক্ষা রাখে না যে এভাবে ঢালাওভাবে জিপিএ-৫, এই ভাল রেজাল্টটের মাধ্যমে রাজনীতিকভাবে লাভবান হওয়ার একটা চেষ্টা সব সরকার মহলের থাকে।
তারপরেও সবকিছুর ভাল-মন্দ থাকে। আমরা অব্যশই ভালটাই নিবো। এই ভাল হোক যে, যেসব শিক্ষার্থী ৫ পেয়েছে তা থেকে আরো ভাল কিছু করার উৎসাহ পায়, সবার আত্মবিশ্বাসের ভিত আরো শক্ত হয়। সবার প্রতি শুভকামনা।
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×