একাত্তরে আট ধরনের যুদ্ধাপরাধের নয় ঘটনায় জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির আব্দুস সুবহানের বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
Published : 31 Dec 2013, 11:01 AM
বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল-১ মঙ্গলবার এই জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে সাক্ষ্য ও শুনানি শুরুর জন্য ২৮ জানুয়ারি দিন রাখেন।
সুবহানের বিরুদ্ধে যে নয়টি অভিযোগ আনা হয়েছে- তার মধ্যে হত্যা, গণহত্যা, অপহরন, আটক, নির্যাতন, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগও রয়েছে।
এ মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানিতে সুবহানের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আব্দুস সুবহানের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। তিনি কোথায় কখন কোন অপরাধ করেছেন তাও প্রসিকিউশন নির্দিষ্টভাবে বলতে পারেনি।
তার আগে সুবহানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পক্ষে যুক্তি দেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন ও রেজিয়া সুলতানা চমন।
প্রসিকিউশন গত ১৫ সেপ্টেম্বর জামায়াতের এই নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেয়। ১৯ অক্টোবর অভিযোগ আমলে নিয়ে অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরুর আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল।
১৯৩৬ সালে পাবনার সুজানগর থানার মানিকহাটি ইউনিয়নের তৈলকুণ্ডি গ্রামে জন্ম সুবহানের। পাকিস্তান আমলে পাবনা জেলা জামায়াতের আমির ও কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য ছিলেন তিনি।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর তিনি পাবনা জেলা শান্তি কমিটির সেক্রেটারি এবং পরে ভাইস-প্রেসিডেন্ট হন।
তার নেতৃত্বে পাবনা জেলার বিভিন্ন থানায় শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও মুজাহিদ বাহিনী গঠিত হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাতে ঢাকায় ‘অপারেশন সার্চলাইট’ শুরু হলে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে নিয়ে সুবহান পাবনায় হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট শুরু করেন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
পাবনা সদরের সাবেক সংসদ সদস্য সুবহানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, মুক্তিযোদ্ধা ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের নামের তালিকা করে পাকিস্তানি সেনাদের কাছে সরবরাহ করতেন তিনি।
মুক্তিযুদ্ধের শেষদিকে ইয়াহিয়া সরকারের পতন দেখে গোলাম আযমের সঙ্গে তিনিও পাকিস্তানে চলে যান। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর তিনি দেশে ফেরেন এবং পরে সংসদ সদস্য হন।
ট্রাইবুন্যনালের তদন্ত সংস্থার জ্যেষ্ঠ সদস্য সানাউল হক বলেন, “মওলানা সুবহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাবনা জেলার বিভিন্ন থানায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও রাজাকারদের নিয়ে গণহত্যা, হত্যা, অপহরণ, আটক নির্যাতন, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ চালিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেন।”
২০১২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু সেতুর টোল প্লাজা থেকে সুবহানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাকে যুদ্ধাপরাধ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।