৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকাতে নতুন বছরের প্রথম দিন থেকে লাগাতার অবরোধ শুরু করছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দল।
Published : 31 Dec 2013, 09:41 PM
‘একতরফা’ নির্বাচন ঠেকাতে বুধবার থেকে রাজপথ-রেলপথ-নৌপথে এই কর্মসূচি পালনের জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
অন্যদিকে এই কর্মসূচি নিয়ে ‘দুঃশ্চিন্তা’ নেই জানিয়ে অবরোধ ঠেকাতে রাজপথে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক।
নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে মতদ্বন্দ্ব থেকে বছরের শেষ ভাগে টানা হরতাল চালানোর মধ্যে দশম সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে অবরোধের কর্মসূচিতে আসে বিরোধী জোট।
ডিসেম্বর মাসজুড়ে সহিংস অবরোধে প্রায় একশ’ মানুষের প্রাণহানি এবং জনজীবন প্রায় অচল থাকার মধ্যে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতাকে আটকের পর নির্বাচনের পাঁচ দিন আগে লাগাতার অবরোধের ঘোষণা আসে।
বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার ডাকা ‘ঢাকামুখী অভিযাত্রা’ পণ্ড হওয়ার পরও নতুন এই কর্মসূচি সফল করে সরকারকে নির্বাচন স্থগিত করে নির্দলীয় সরকারের দাবি মানতে বাধ্য করার আশা করছেন ফখরুল।
অন্যদিকে বিরোধী দলের বর্জনের মধ্যেও ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পথে এগিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচ টি ইমাম বলেছেন, অবরোধও ভেঙে ফেলতে পারবেন তারা।
অবরোধের মধ্য দিয়ে দেশ অচল করার বিএনপির হুমকির মধ্যে শুরুর দিনই ঢাকায় তিনটি স্থানে নির্বাচনী জনসভা করতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
অবরোধ সফলের জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে ফখরুল মঙ্গলবার রাতে এক বিবৃতিতে বলেন, “দেশ এক চরম সঙ্কটের সম্মুখীন। দেশ, গণতন্ত্র ও মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষার জন্য একতরফা নির্বাচনের বিরুদ্ধে দলমত নির্বিশেষে আজ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।”
এর আগের দিন ‘ঢাকামুখী অভিযাত্রা’ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের পর গ্রেপ্তার হন বিএনপির সহসভাপতি হাফিজউদ্দিন আহমেদ। আগে গ্রেপ্তার বিভিন্ন নেতার মতো তার বিরুদ্ধে সহিংসতার মামলা হয়েছে।
ফখরুল দাবি করেছেন, সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে ‘ধ্বংস’ করে সরকারের ক্ষমতায় টিকে থাকার ‘উগ্র বাসনার চেহারা’ এখন জনগণের সামনে ‘উন্মোচিত’। “ফ্যাসিবাদী কায়দায় স্বৈরাচারী একনায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।”
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এইচ টি ইমামের দাবি, আন্দোলনের নামে দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে চাইলে বিরোধী জোট, নির্দলীয় সরকার মুখ্য নয়।
বিরোধী দলবিহীন নির্বাচন এবং এতে অর্ধেকের বেশি আসন ১৫৩টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় একে ‘তামাশা’ বলে আখ্যায়িত করছেন বিএনপি নেতারা।
ফখরুল বলেন, “আন্তর্জাতিক সংস্থা ও পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোর পর্যবেক্ষক না পাঠানোর ঘটনায় তথাকথিত এই নির্বাচন একটি তামাশায় পর্যবসিত হয়েছে। এতে আওয়ামী লীগের নৈতিক ও রাজনৈতিক পরাজয় নিশ্চিত হয়েছে।”
“আমরা স্পষ্টভাষায় বলে দিতে চাই, চাতুরি ও বলপ্রয়োগ করে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকা যাবে না,” ফখরুলের এই হুঁশিয়ারির জবাবে নানকের বক্তব্য- “জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী গণবিরোধী এই কর্মসূচির বিরুদ্ধে জনগণ আরো কঠোর প্রতিরোধের পথ বেছে নেবে।”
৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানের মধ্যেও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা রাজনৈতিক সমঝোতা হলে এই নির্বাচনের পর সংসদ ভেঙে নতুন নির্বাচনের প্রস্তাব দিয়েছেন। তবে বিএনপি ৫ জানুয়ারির ভোট স্থগিত করে সব দলকে নিয়েই দশম নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
গত মঙ্গলবার বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচন প্রতিরোধের আহ্বান জানিয়ে ২৯ ডিসেম্বর ‘ঢাকামুখী অভিযাত্রা’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাধায় তিনি বের হতে হতে পারেননি। পুলিশের ব্যাপক তৎপরতায় রাজপথে নামতে পারেনি কর্মীরাও।