somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শানে হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি

০১ লা জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার প্রিয়তম হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাধ্যমে আসমানী ওহী প্রেরণের অবসান ঘটিয়েছেন। এরপর মানুষকে প্রশিক্ষিত ও নিবিষ্ট করার দায়িত্বে যুগে যুগে নিয়োজিত থাকেন ওয়ারাছাতুল আম্বিয়াগণ তথা ওলীআল্লাহগণ উনারা। পথভ্রষ্ট এবং লক্ষ্য বিচ্যুত মানুষকে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের দিকে রুজু করে দেয়ার জন্য এমন ব্যক্তিত্ব পৃথিবীতে সব সময়ই অবস্থান করে থাকেন। এই মহান দায়িত্বের আঞ্জাম দেয়ার জন্য পৃথিবীতে প্রতি শতাব্দীতেই মুজাদ্দিদ বা সংস্কারকের আবির্ভাব ঘটে। যেমন, আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “মহান আল্লাহ পাক তিনি এই উম্মতের জন্য প্রতি হিজরী শতকের প্রারম্ভে এমন এক ব্যক্তিত্ব পাঠান, যিনি উম্মতের স্বার্থে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার সংস্কার সাধন করেন।”
তদ্রুপ মহান এক মুজাদ্দিদ হচ্ছেন হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি। উনার সম্পর্কে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “হিজরী একাদশ শতাব্দীর আরম্ভকালে মহান আল্লাহ পাক তিনি এমন এক ব্যক্তিকে প্রেরণ করবেন, যিনি একটি বৃহৎ নূর। উনার নাম মুবারক হবে আমার নাম মুবারক উনার অনুরূপ। দুই অত্যাচারী বাদশাহর রাজত্বকালের মাঝে তিনি আবির্ভূত হবেন এবং উনার সুপারিশে অগণিত মানুষ বেহেশতে প্রবেশ করবেন।” সুবহানাল্লাহ!
মোঘল সম্রাট জালাল উদ্দিন আকবরের শাসনামলে মানুষ মহান আল্লাহ পাক উনার তাওহীদের পরিবর্তে নানা প্রকার দেব-দেবীর পূজায় ও শিরকীর জালে আবদ্ধ হয়ে পড়ে। আকবর প্রবর্তিত মনগড়া ‘দ্বীনে ইলাহী’ মতবাদের অনুশাসনে ঈমান হারিয়ে বিদয়াত, শিরক ও কুফরীতে লিপ্ত হয়ে যায়। অজ্ঞতা ও অবহেলাভরে মানুষ আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র সুন্নত ও পবিত্র আহকাম উনাদের অবলুপ্তি ঘটাতে থাকে। মুসলমানদের এই ঘোর দুর্দিনে রিসালতের ধারায় তাওহীদ ও আধ্যাত্ম চিন্তার পুনর্বিন্যাসের জন্য উপমহাদেশে একজন মুজাদ্দিদ আগমনের মজবুত ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়ে যায়।
মানুষের বিবেক, মন ও অনুভূতিতে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার নবায়ন ঘটানোর জন্যে আকবর সৃষ্ট ফিতনার চরমকালে ৯৭১ হিজরী সনের ১৪ই শাওয়াল, ইয়াওমুল জুমুয়াতি বা জুমুয়াবার, ইমামে রব্বানী হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি পবিত্র বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন পূর্ব পাঞ্জাব প্রদেশের পাতিয়ালার সিরহিন্দ শরীফ-এ। মাত্র ছয় বছর বয়স মুবারক-এ তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ হিফয করেছিলেন। অতঃপর কানপুরস্থ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে জগৎ বরেণ্য আলিমগণ উনাদের নিকট তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র তাফসীর শরীফ, পবিত্র ফিক্বাহ শরীফ, সাহিত্য, কাব্য, ইতিহাস, ভূগোল, দর্শন, বিজ্ঞানসহ ইসলামী ইলমের সকল শাখায় ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন। কামালতের পরিপূর্ণ ধাপে উত্তরণের জন্য তিনি ওলীকুল শিরোমণি হযরত খাজা বাক্বী বিল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছে বাইয়াত হন।
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার ক্ষতিসাধনে বিধর্মীদের তুলনায় উলামায়ে ‘সূ’দের (দুনিয়াদার মন্দ আলিম) ভূমিকাই প্রকট। রসূলে মকবুল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “দুনিয়ার লোভ সকল পাপের মূল” তিনি আরো বলেন, “দুনিয়াদার আলিম সবচেয়ে মন্দ ব্যক্তি।”
প্রতিপত্তি, খ্যাতি ও অর্থ লালসায় তদানীন্তন বিশ্ববিখ্যাত আলিম মোল্লা মুবারক নাগোরী, আবুল ফজল, ফৈজী এরা সম্রাট আকবর ও জাহাঙ্গীরের তাঁবেদারী ও তোষণ নীতিতে লিপ্ত থাকে। তারা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের বিকৃত ব্যাখ্যা প্রদান করে। আসমানী পবিত্র ওহী মুবারক উনার তত্ত্বাবধানে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কর্তৃক প্রণীত পবিত্র শরীয়ত উনার পরিবর্তে তারা এক অভিনব শরীয়ত প্রবর্তন করে। পবিত্র সুন্নত ও আহকাম উনাদের অবলুপ্তি ঘটায়। রাজ দরবারে ‘তা’যীমী সিজদার’ প্রচলন করে। তাওহীদ ও রিসালতে বিশ্বাসী মানুষের অন্তরে বিদয়াত, শিরক ও কুফরীর বুনিয়াদ রচনা করে। হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার সুমহান তাজদীদের মাধ্যমে মানুষের সঠিক সমঝের উন্মেষ ঘটান এবং পবিত্র ঈমান উনার নবায়ন করেন।
হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি নিজ জীবনে পবিত্র সুন্নত উনার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন ঘটিয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করেন। মানুষের মাঝে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র সুন্নত মুবারক অনুসরণের স্পৃহা জাগিয়ে তুলে তিনি অবলুপ্ত প্রায় সকল সুন্নত জিন্দা করেন। এ জন্য উনাকে বলা হয় “মুহইস সুন্নাহ” মহান আল্লাহ পাক উনার যমীনে সুন্নত জিন্দাকারী হাজার বছরের মহান মুজাদ্দিদ হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি উনার বড় সাধ, উনার কর্মময় মুবারক জীবনাবসানের সর্বশেষ কাজটিও যেন পবিত্র সুন্নত মুবারক উনার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয়। তিনি আপনজন, খলীফা ও মুরীদগণ উনাদেরকে ডেকে বললেন, “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দুনিয়াবী তেষট্টি বছর বয়স মুবারক-এ নশ্বর পৃথিবী থেকে মহান আল্লাহ পাক উনার মুবারক দীদারে প্রত্যাবর্তন করেন।” অবশেষে সময় ঘনিয়ে এলো। আমল ও ক্ষমতা বহির্ভূত পবিত্র সুন্নত মুবারক অনুসরণের এ অন্তিম বাসনাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি পূর্ণতা দিয়েছেন উনাকে তেষট্টি বছর দুনিয়াবী বয়স মুবারক-এ পবিত্র বিছাল শরীফ হাদিয়া করেন। সুবহানাল্লাহ! হিজরী ১০৩৪ সনের (ঈসায়ী ১৬২৪ সাল) পবিত্র ২৮শে ছফর তিনি পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন)
মহান আল্লাহ পাক উনার খালিছ ওলী হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমুতল্লাহি আলাইহি উনার পবিত্র বিছাল শরীফ উনার মাস হচ্ছে পবিত্র ‘ছফর’ শরীফ মাস। যিনি ছিলেন হাজার বছরের মুজাদ্দিদ ও পবিত্র সুন্নত মুবারক জিন্দাকারী। পাশাপাশি দ্বীনে ইলাহীসহ সকল বাতিল মতবাদের মূলোৎপাটনকারী। তাই প্রত্যেকের দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে- মহান আল্লাহ পাক উনার খালিছ ওলী হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পবিত্র জীবনী মুবারক জেনে এবং উনাকে অনুসরণ করে ইহকালে মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী হওয়া এবং পরকালে জান্নাত লাভ করা। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের খাছ রেযামন্দি মুবারক হাছিল করা।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিশ্বকে অবজ্ঞা করে নেতানিয়হু রাফাতে ঠিকই হত্যাকান্ড চালাচ্ছে

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৭ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৭



বাইডেনের মানা, ইন্টান্যাশনাল কোর্ট অফ জাষ্টিস, ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিন্যাল কোর্ট ও পুরো ইউরোপের বিরোধীতা সত্বেও নেতানিয়েহু রাফাতে হত্যাকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। তবে, ইসরায়েলকে ও বিশ্বের বিবিধ দেশে বসবাসরত ইহুদীদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে দেখা - ২৭ মে

লিখেছেন জোবাইর, ২৭ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:০৪

২৭ মে, ২০১৩


ইন্টারপোলে পরোয়ানা
খালেদা জিয়ার বড় ছেলে, বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেফতার করে দেশে ফিরিয়ে আনতে পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন বেনজীর আহমেদ ও আমাদের পুলিশ প্রশাসন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৭ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৪২



বৃষ্টিস্নাত এই সন্ধ্যায় ব্লগে যদি একবার লগইন না করি তাহলে তা যেন এক অপরাধের পর্যায়েই পরবে, যেহেতু দীর্ঘদিন পর এই স্বস্তির বৃষ্টির কারণে আমার আজ সারাদিন মাটি হয়েছে তাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×