লাশের ফ্রীজগুলো গুমগুম করছে।
ভেতরের ইঞ্জিনের কম্পনে আমার পায়ের নিচের মাটিগুলোও কাঁপছে।
ফ্রীজগুলো ড্রয়ারের মতো থরে থরে সাজানো।
ভেতর থেকে সুক্ষ্ণ আলোর ধারা বের হচ্ছে। আমি চেয়ে আছি। প্রত্যেকটা ড্রয়ারে একটা করে লাশ সাজানো। আমার প্রচন্ড ইচ্ছা করছে ড্রয়ারটা খুলে দেখি। তাদের গায়ে শীতে জামা পরানো আছে কি না!
সম্ভব নয়।
তারা এখন শীত-গ্রীষ্মের উর্ধে। তাদের শীত কাঁপাচ্ছে না, গ্রীষ্ম ঘামাচ্ছে না। শরীরের জীবনের সমস্ত ক্রিয়া বন্ধ হয়ে আছে।
দুপুরে একজন মহিলা গ্রীল ধরে দাঁড়িয়ে আছে। জিজ্ঞাসা করলাম,
'এখানে কি করছেন?'
মহিলাটা আমার দিকে তাকাল। চোখ অসম্ভব গভীর। অসহায়ত্ব আর বিহব্বলতার পর্বতসম ঢেউ।গভীরতার উৎস জানতে ভয় হচ্ছে।
আমি তবুও বোকার মত মহিলার চোখের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
মহিলার চোখে জল ঝরছে। মুখে হাঁসি। হাঁসতে হাঁসতে বলল,
'আব্বাজান কিছু করি না। স্বামীকে দেখি।'
আপনার স্বামী কোথায়?'
'ঐ যে লাল ড্রয়ারটাতে। গায়ে লেখা তিন।'
পাদটীকাঃ আমি চেষ্টা করেছিলাম বিষয়টাকে একটা গল্পের রুপ দিতে।
পারি নি।
লেখকরা শৈল্পিক ভাবে মিথ্যা বলে। আমি মহিলার চোখের জল দেখেছি। জলের স্রোতের উন্মত্ততা আমাকে আজ কাঁপিয়ে দিয়েছে। আমি তাকে নিয়ে কোন মিথ্যা শৈল্পিকতার জাল বুনতে পারব না।
রাত বারোটা এক সেকেন্ড থেকে মহাকালের নতুন পথের যাত্রা শুরু হবে।
রাত ১২ টা এক সেকেন্ডে পৃথিবী থমকে যাবে। সব কিছু স্থির হয়ে যাবে। এই সুযোগটাকে কাজে লাগাতে চাই।
আমি রংপুর মেডিকেল কলেজের হিমাগারের সামনে। ভেতরে ইঞ্জিনের গুমগুম আওয়াজ বাইরে আসছে। কম্পনে আমার পায়ের নিচের মাটি কাঁপছে।
আমি গ্রীলটা ধরে ভেতরে তাকানোর চেষ্টা করছি। লক্ষ্য লাল ড্রয়ার। ড্রয়ারের গায়ে লেখা থাকবে তিন।
দুপুর বেলা একজন নির্বাক মহিলা এখানে গ্রীল ধরে দাঁড়িয়ে ছিল। এই মুহুর্তে তার দৃষ্টি আর আমার দৃষ্টি মহাকালের নতুন যাত্রায় মিলে গেল।
আমি তাকিয়েই আছি।
জীবনের মহান সত্যটাকে অনুভব করছি। সবার এক ও অভিন্ন গন্তব্যের দিকে চেয়ে আছি।
যদি সবাই বুঝত!!!
আহারে!!
যদি সবাই বুঝত!!!
ফেসবুকে রাজীব হোসাইন সরকার(https://www.facebook.com/razibhossainsarkar)