somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

২০১৩ সালের নিজ জীবনের সালতামামী

০১ লা জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৪:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


২০১৩ সালশেষ, জীবন থেকে আরো একটি বছর কেটে গেলো, একটু হিসেব করতে ইচ্ছে হলো, জীবনে এইপ্রথম একটি বছর চলে যাওয়ার পর চিন্তা করছি, কখনই আমি এরকম করেনি, কেটে গেছে, নতুনবছর এসেছে, এভাবে কেটে যেতো বছররের পর বছর। কিন্তু সময় আমাকে বলছে হিসেব করো নয়তোপথ হারাবে। তাই দিকভ্রান্ত পথিক আমি হিসেব করে চলার পথ খুজছি।

২০১৩ সালকেজীবনের সব থেকে একটি কষ্টের বছর বলবো, নাকি জীবনের ভিত্তিপ্রস্তরের বছর বলবো একটুভাবতে হচ্ছে, একটু পিছনের দিকে তাকালে আমার জীবনের এরকম দু:খ নিয়ে কোন বছর কাটেনি,নিরানন্দ বোঝাপড়ার বছর, খুব বিচলিত ছিলাম বছরের বিশাল সময়, মনবেদনার এক দু:সহ বছর,অসহায় হয়ে বারাবর জীবনের পথ খুজেছি, আমারইশ্বর ছাড়া অণ্যের জন্য সব থেকে কেদেছি এবছর, সব থেকে কষ্ট পেয়েছি এ বছর, সবচেয়েবেশি ঘুমহীন রাত জেগেছি এ বছর, মানসিক জটিলতায় কেটেছে পুরো বছর। এ বছরে আমার অর্জনবলতে কিছু নেই, সবথেকে যা অর্জন করেছি তার তুলনা কিছুর সাথে নেই, সেটা হলোঅভিজ্ঞতা, ওহ আঘাতের উপর আঘাত সহ্য করে দিনের পর দিন পার করতে হয়েছে এইঅভিজ্ঞতাটুকু অর্জনে। এতো বেশি মানসিক কষ্ট আমার পুরো জীবনে ভোগ করেনি।যন্ত্রনাকাতর সময় কেটেছে, খুব সিদ্ধান্তহীনতায় কেটেছে অনেক সময়, ঝড়ঝাপটা মানসিকবিপর্যস্ত অবস্থায় মানুষ কিভাবে নিজেকে বাচিয়ে রাখে তারও বাস্তব অভিজ্ঞতা আমারহলো, খুব প্রয়োজন ছিলো, ভাবের রাজ্যে থেকে একেবারে বাস্তবে, এরজন্য নিজেকে খুবকষ্ট পেতে হযেছে, খুব শক্ত মানসিকতার না হলে জীবন নিয়ে বাচা যায় না।

বছরের একটাসময় আমি জীবন থেকে পালাতে চেয়েছিলাম, পরিচিতদের থেকে অনেকদুরে চলে যেতে চেয়েছি,কিন্তু পারিনি, কেনো পারিনি, আসলে আমি পরনির্ভরশীল মানুষ, আমারতো মনে হয় সব মানুষইপরনির্ভরশীল, অনেক মায়া ছিলো পরিচিত সমাজের উপর, আবার নিজেকে অনেক সময় কাপুরুষ মনেহয়েছে, তাই জীবন নিয়ে পালাইনি, থেকে যাই সবার মাঝে। এবছর আমার ইশ্বরের সাথে মানঅভিমানের চরম দ্বন্ধ ছিলো, দিন হলে আমি তাকে ঘৃনা করেছি, তার সাথে শক্তিরচ্যালেণ্জ করেছি। আবার ঘুম হীন রাতের একেবারে শেষ দিকে নিরুপায় হয়ে তার কাছে ফিরেযেতাম, করুনা চাইতাম, কিন্তু আমার স্বপ্নের কানাকড়িও বাস্তবায়ন হয়নি, তবুও বিশ্বাসকরে আছি হয়তো আমার জন্য ভালো তাই হয়নি, তবে মানতে খূব খারাপ লাগে।
এবছর নিজেরযৌন অনুভুতিতে বিগত বছর থেকে বেশি পরিমানে আঘাত করেছি। কোন কোন সময় আমার নিরুত্তাপজীবনের একটু সুখ বা একধরনের উত্তেজনা পেয়েছি এই আঘাত করে। কখনো পরনির্ভরশীলতাকেভেঙ্গে ফেলতে যৌন অনুভুতির নিস্তেজের পথ খুজেছি। সফল হয়নি।

যাই হোক বছরেরজানুয়ারী ফেব্রুয়ারী আমি বই মেলার কাজে ব্যস্ত ছিলাম, এরপর ২১ ফেব্রুয়ারীতে ঘুরতেযাই সেন্ট মার্টিন, এই সময়টাই আমার বছরের সবথেকে আনন্দের ছিলো, এর পরের বাকি ১০মাস আমি কখনই মন থেকে আনন্দ পাইনি, এতো মানসিক জটিলতার মধ্যে পার করেছি অবিশ্বাস্যলাগে কিভাবে পার করে আসলাম, আমি অনেক কিছু চেয়েছি অনেকবার জোড় করেও পাইনি, চেষ্টাওকম করেছি তাও না, কিন্তু ব্যর্থ, পুরো একটা ব্যর্থতার বছর কেটে গেলো। ব্যর্থতা বলেনিজের আত্মবিশ্বাস কমাতে চাইনা, তার থেকে বলতে পারি আগামী দিনের পথচলার অভিজ্ঞতাটাপেলাম, অভিজ্ঞতাটা হলো নিজের কিছু প্রাপ্তি থাকতে হয়, তা না হলে জীবন নিয়ে চলা যায়না, কখনো কখনো নিজের নামের পিছে কিছু সমাজের লোভনীয় স্টাটাস থাকতে হয় তা না হলেকারো কাছে নিজের অস্তিত্বের সম্মান পাওয়া যায় না, তাই আমি ভেবেছি ২০১৪ সালটা হোককিছু মানুষের জন্য লোভনীয় স্টাটাস অর্জনের বছর।

আমার ভাবতেঅবাক লাগে এই পুরো বছরে আমার কোন নতুন বন্ধু বাড়েনি, কেউ আপন হয়ে উঠেনি, ফেসবুকগ্রুপ স্টাডি করতে গিয়ে কয়েকটি পরিচিত মুখ পেয়েছি এছাড়া পুরোবছর আমি নতুন কারোসাথে আপন হয়ে উঠিনি, কারো সাথে নতুন করে বন্ধুত্ব গড়ে উঠেনি। কেমন ঘরকুনো বছর কেটেগেলো, সারা বছরে আমার গ্রামের বাড়ি ছাড়া দুইবার ঢাকার বাইরে গিয়েছি, হায়রে জীবন।এবছরে দুবার অসুস্থ হয়ে ডাক্তার দেখিয়েছি, প্রথমবার জুন মাসে শেষবার সেপ্টম্বরমাসে, প্রথমবার যেকারনে অসুস্থ হয়েছি শেষবারও একই কারনে, বলা যেতে পারে পুরো বছরএকই সমস্যায় ভোগেছি, চরমতম বোরিং বছর কেটেছে। এই অসুস্থতায় যা হলো ঘুমের ওষধটাকে নিজেরআপন করে নিতে হলো।

ভেবেদেখলাম মাত্র দুটো নতুন বই কিনেছি, যা আমার স্বভাব বিরুদ্ধ, সারা বছরে আমি পাচটিওবই পড়েনি, ছি ছি ছি, কি অবাক লাগে এরকম কেমনে হলো, বই পড়ার আনন্দই ভুলে গেছি। সারাবছরের বৈষয়িক সম্পত্তি বলতে কি আছে ভেবে দেখতে পারি, সারাবছরে নতুন করে দুটোজিনসের প্যান্ট, একটি পাঞ্জাবী, আর এক জোড়া স্যান্ডেল, দুটো মোবাইল ও একটি বুকসেলফকিনেছি, বড় ভাই দুটো শার্ট, গার্লফ্রেন্ড একটি শার্ট ও দুটো টিশার্ট গিফট করেছে,ব্যংকে কোনো সেভিংস নেই, এই আমার সারা বছরের বৈষয়িক সম্পত্তির হিসেব।

এবছরপ্রচুর সিনেমা দেখেছি, বাংলা, হিন্দি, হলিউড, ইরানী, থাইল্যান্ড। ভালো লাগার দিকথেকে ওপার বাংলার রুদ্রনীল ঘোষ, পরমব্রত, রাইমা সেনের ফ্যান হয়ে গেলাম, সিনেমাদেখতে দেখতে মাঝে মনে হয়েছে নিজেই ছবি বানাই, ভবিষ্যতে সুযোগ পেলে এই কাজটা আমিকরবো। আমার থমকে যাওয়া জীবনের গতি পেতাম সিনেমা দেখার সময়টুকু।

এবছরচিন্তাররাজ্যে বারবার পরিবর্তন এসেছে, এর আগে কখনও এরকম হয়নি, খুব নেতিবাচকচিন্তার সাথে যুদ্ধ করে যেতে হয়েছে, কিছু অনুভুতিতে আঘাত আসার কারনে আমি বিশ্রীরকমের প্রতিশোধপরায়ন ক্ষমাহীন মানসিকতায় পরিনত হয়েছি, কখনই এতো নেতিবাচক ছিলাম,সবসময় ভালোটাই ধরে নিয়েছি, আগে কোন ঘটনার সাথে উতসুক চিন্তা থাকতো এখন সেটা সন্দেহসহনেতিবাচক চিন্তায় পরিনত হয়েছে। উদ্বেগ, উতকন্ঠার মধ্যে দিয়ে পার করা সময়টা আমাকেঅনেকটা ভাবাবেগহীন করেছে, খুব সংবেদনশীল ছিলাম, কারো কোন কষ্ট আমাকে নাড়িয়ে দিতোএখন আর সেটা বেশি কাজ করে না, কারন আমার কষ্ট পাওয়াটা আমাকে শিখিয়েছে জীবন এরকম,তাই তুমি তোমার কষ্ট ওভারকাম করে জীবন পার করে দিবে সেখানে আমার সহযোগীতানিস্প্রোয়জন। মানুষের সাথে আমার সহজভাবে মিশে যাবার প্রবনতা ছিল তা আমি হারিয়েফেলেছি, একধরনের সামষ্টিক চিন্তা থেকে ব্যক্তিস্বার্থের উপর আমার চিন্তারস্থায়িত্ব এসেছে। অবিশ্বাস আর সন্দেহপ্রবন হয়েছি। এখন আর কাউকে সহজভাবে নিতেপারিনা, বিশ্বাস ভঙ্গের কারনে সবার উপর আমার অবিশ্বাস জন্মেছে। বলা যেতে পারে একধরনের নেতিবাচক চক্রে আটকে গেছি, ২০১৪ সাল হোক আমার ইতিবাচক ধারায় ফিরে আসার বছর।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কথাটা খুব দরকারী

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ৩১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:৩৪

কথাটা খুব দরকারী
কিনতে গিয়ে তরকারি
লোকটা ছিল সরকারি
বলল থাক দর ভারী।

টাকায় কিনে ডলার
ধরলে চেপে কলার
থাকে কিছু বলার?
স্বর থাকেনা গলার।

ধলা কালা দু'ভাই
ছিল তারা দুবাই
বলল চল ঘানা যাই
চাইলে মন, মানা নাই।

যে কথাটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

অতিরিক্ত বা অতি কম দুটোই সন্দেহের কারণ

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৩০

অনেক দিন গল্প করা হয়না। চলুন আজকে হালকা মেজাজের গল্প করি। সিরিয়াসলি নেয়ার কিছু নেই৷ জোসেফ স্টালিনের গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। তিনি দীর্ঘ ২৯ বছর সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধান নেতা ছিলেন। বলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সীমানা পিলার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৮



বৃটিশ কর্তৃক এদেশে ম্যাগনেটিক পিলার স্থাপনের রহস্য।
ম্যাগনেটিক পিলার নিয়ে অনেক গুজব ও জনশ্রুতি আছে, এই প্রাচীন ‘ম্যাগনেটিক পিলার' স্থাপন নিয়ে। কেউ কেউ এটিকে প্রাচীন মূল্যবান ‘ম্যাগনেটিক’ পিলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাথায় চাপা ভূত ভূত ভূতং এর দিনগুলি

লিখেছেন শায়মা, ৩১ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫


এই যে চারিদিকে এত শত কাজ কর্ম, ঝামেলা ঝক্কি, ক্লান্তি শ্রান্তি সব টপকে আমার মাথায় আজও চাপে নানান রকম ভূত। এক ভূত না নামতেই আরেক ভূত। ভূতেদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজের পাসওয়ার্ড অন্যকে দিবেন না ;)

লিখেছেন অপু তানভীর, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৭



কথায় আছে যে পাসওয়ার্ড এবং জাঙ্গিয়া অন্যকে দিতে নেই । মানুষ হিসাবে, বন্ধু হিসাবে প্রেমিক/প্রেমিকা হিসাবে অথবা আজ্ঞাবহ হওয়ার সুবাদে আমরা অন্যকে ব্যবহার করতে দিই বা দিতে বাধ্য হই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×