ভোট ও তার আগের দিন ৪৮ ঘণ্টার হরতাল কর্মসূচি ঘোষণার ঘণ্টাখানেক পর নিজেকে গৃহবন্দি দাবি করে রোববারের ভোট বর্জনে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
Published : 03 Jan 2014, 07:07 PM
শুক্রবার রাতে তার প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বিরোধী দলীয় নেতা দেশবাসীর প্রতি এই আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, “আমি দেশবাসীকে নির্বাচনের নামে ৫ জানুয়ারির কলঙ্কময় প্রহসন পুরোপুরি বর্জনের আহ্বান জানাচ্ছি। এই প্রহসনকে দেশে-বিদেশে কোথাও কেউ নির্বাচন হিসেবে বৈধতা দেবে না। এর মাধ্যমে বৈধতার খোলস ছেড়ে অবৈধ মূর্তিতে আবির্ভূত হবে আওয়ামী লীগ সরকার।”
বিকালে ভোট এবং ভোটের আগের দিন ৪৮ ঘণ্টার হরতাল কর্মসূচি ঘোষণার পর এ বিবৃতি দিলেন বিএনপি প্রধান।
বিবৃতিতে নিজ বাসায় অবরুদ্ধ হয়ে থাকার দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, “আমি শান্তিপূর্ণ ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকে ভীত সরকার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দাদের দিয়ে আমার বাসভবন ঘিরে রেখেছে। আমাকে বাইরে যেতে দেয়া হচ্ছে না। কোনো ঘোষণা ছাড়াই সরকার কার্যত আমাকে গৃহবন্দি করে রেখেছে। কেবল তাই নয়, আমার অফিস এবং বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয় অবরুদ্ধ।”
নির্বাচন প্রতিহত করার ডাক দিয়ে গত ২৯ ডিসেম্বর ঢাকামুখী অভিযাত্রা কর্মসূচি ও নয়া পল্টনে সমাবেশ করার ঘোষণা দেন খালেদা জিয়া। অবশ্য নাশকতার আশঙ্কায় তাদের সমাবেশের অনুমতি দেয়নি পুলিশ, বিএনপি চেয়ারপারসনকেও তার বাসা থেকে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যেতে বাধা দেয়া হয়। এরপর থেকে গুলশানের বাসাতেই আছেন তিনি।
দুই পৃষ্ঠার বিবৃতিতে খালেদা জিয়া বলেন, “আমরা অনেক কষ্টে যে গণতন্ত্র অর্জন করেছিলাম সেই গণতন্ত্র আজ আওয়ামী লীগের হাতে আবারো নিহত হলো। ১৯৭৫ সালে ‘দ্বিতীয় বিপ্লব’ নাম দিয়ে একদলীয় বাকশাল পদ্ধতির মাধ্যমে তারা গণতন্ত্র হত্যা করেছিল।”
রোববারের প্রহসনের ভোটের পর বিরোধী দলকে উৎখাত করা হবে বলে ক্ষমতাসীনদের হুমকির বিষয়টি বিবৃতিতে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বিরোধী দলকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে ৫ জানুয়ারির পর সমূলে উৎখাতের হুমকি দিচ্ছে আওয়ামী শাসকেরা। অথচ তাদের নেতা-কর্মীরা যানবাহনে, বিচারপতির বাড়িতে ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের ঘরবাড়িতে বোমা হামলা ও অগ্নিসংযোগ করতে গিয়ে ধরা পড়েছে, বিচার হচ্ছে না।
“এসব হামলা ও হুমকির জবাবে আমি বলতে চাই, একব্যক্তির ক্ষমতার লালসা ও স্বেচ্ছাচারিতার কাছে জাতির সম্মিলিত ইচ্ছাশক্তি পরাজিত হবে না।ক্ষমতার দম্ভের শোচনীয় পরাজয় অত্যাসন্ন।”
আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনের সহযোগিতায় রাষ্ট্রীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীগুলোকে ভয়ংকরভাবে অপব্যবহার করে সরকার গণতন্ত্র নাশের এক কদর্য অধ্যায় রচনা করছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি প্রধান।
তিনি বলেন, “বিএনপি ও ১৮ দলসহ দেশের কোনো গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল এই প্রহসনে শরিক হয়নি। দেশের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিকদের মধ্যে এ নিয়ে সামান্যতম উৎসাহ নেই।”
এর আগে বিকালে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ওসমান ফারুক বিকালে নিজের বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করে বলেন, ‘একতরফা’ নির্বাচন বাতিলের দাবিতে লাগাতার অবরোধের পাশাপাশি বিরোধীদলীয় নেতাকে তার বাসায় ‘অবরুদ্ধ’ করে রাখার প্রতিবাদে শনিবার ভোর ৬টা থেকে সোমবার ভোর ৬টা পর্যন্ত সারা দেশে ৪৮ ঘণ্টার ‘শান্তিপূর্ণ’ হরতাল চলবে।
“দেশবাসীকে আহ্বান জানাব, আপনারা ৫ জানুয়ারির নির্বাচনী প্রহসনকে ‘না’ বলুন এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে ‘হ্যাঁ’ বলুন।”
সবাইকে ভোটদানে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে ওসমান ফারুক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “জনগণের আন্দোলন কখনো বৃথা যাবে না, তাদের বিজয় সুনিশ্চিত।”
একই সঙ্গে ‘প্রহসনের নির্বাচনী খেলা’ বন্ধ করে দেশে ‘গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার’ দাবি জানান তিনি।