somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Alice Munroর DEEP-HOLES অবলম্বনে খাদ

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(আগের অংশের পর)
ডিসোলেশন আইল্যান্ডের প্রধান বাহাদুরি হচ্ছে সেখানকার শাক-সবজী। পুরাকালের একটি অনন্য নিদর্শন বাঁধাকপি। তারা এর সম্মানে প্রার্থনা, উৎসব সাজগোজ আর প্রদর্শনীও করে।

স্যালি বলল যে, তার ছেলের জন্মের আগে সে দেশের একটি অগ্ন্যুৎপাতের কারণে ত্রিস্তানের একটি বিমান তাদের লোকজন নিয়ে হিথ্রো এয়ারপোর্টে নামার ঘটনা দেখেছিল টেলিভিশনে। কী যে অদ্ভুত দৃষ্টি ছিল তাদের। মনে হচ্ছিল অন্য কোনো শতাব্দীর খুব বাধ্য আর গম্ভীর প্রাণী। ইংল্যান্ডেই কম বেশি তাদের থেকে যাওয়া দরকার ছিল। কিন্তু বছর দুয়েক বাদে অগ্ন্যুৎপাত বন্ধ হয়ে গেলে তাদের বেশির ভাগই দেশে ফিরে যেতে চাচ্ছিল।

পিটার যখন স্কুল থেকে ফিরে আসে, অবশ্যই সে তখন তার জামা-জুতো ছাড়বে। বয়সের তুলনায় যেন কিছুটা পাকা সে। শাবানার সঙ্গে বেশ সহজ। যে খানিকটা সাহসী আর জেদি হয়ে বেড়ে উঠছে। পিটার সারাক্ষণই যেন ফেটে পড়ছে, ঘরের ভেতর থাকলে যেন একটা চরম বিপদ হয়ে দেখা দেয়। তবে সে তার বাবার সঙ্গে বেশ মার্জিত আচরণ করে। শাবানার কাছ থেকে পত্রিকাটা উদ্ধার করে সাবধানে ভাঁজ করে এগিয়ে দেওয়া বা ডিনারের সময় চেয়ারটাকে খানিকটা টেনে দেওয়ার মতো কাজগুলো করে।

যিনি আমাকে বাঁচিয়েছেন তার প্রতি শ্রদ্ধা। সে জোরেশোরে বলে, ঘরই হচ্ছে আসল।

মোটামুটি নাটকীয় ভাবে বললেও, তা তেমন শ্লেষাত্মক বলেও মনে হয় না অ্যালেক্সের কাছে। কেন্ট তার মানসিকতা পেয়েছে যা খাদে পড়া নাটকের আগেই বোঝা গিয়েছিল।

বাদ দাও তো! ব্যক্তিগত ভাবে স্যালির কাছে অভিযোগের সুরে বলল অ্যালেক্স।

-সে বলছে তুমি তাকে ভালোবাসো। কারণ তাকে বাঁচিয়েছ তুমি।

-আমি তো যে কাউকেই বাঁচাতে পারতাম।

-তার সামনে ওভাবে বলো না প্লিজ!

সব কিছুর উন্নতি ঘটলে কেন্টকে তার বাবা হাইস্কুলে ভর্তি করে দিল। বিজ্ঞান ছিল তার পছন্দের এবং সহজ ভূ-বিজ্ঞান নয় সে বেছে নিলো কঠিন বিজ্ঞানকেই। এ উদ্দীপনা তার বাবা অ্যালেক্সের বিরুদ্ধাচার ছিল না। উত্তম সব কিছুই কঠিন। কিন্তু মাস ছয়েকের পর কলেজে আর উৎসাহ পাচ্ছিল না সে। যারা তাকে অল্প-স্বল্প জানতো তাদের কেউই বন্ধুত্বের দাবী নিয়ে এসে বলেনি যে, সে ওয়েস্ট কোস্ট-এ যেতে চাচ্ছে। একটি চিঠি এলে তার বাবা-মা পুলিশের কাছে যাবে বলে ঠিক করল। টরোন্টর উত্তরে সুবার্ব বলে একটা জায়গায় কানাডিয়ান টায়ার কোম্পানিতে কাজ করছিল। অ্যালেক্স সেখানে তার সঙ্গে দেখা করে কলেজে ভর্তি হতে বলল। কিন্তু কেন্ট সে কথায় কান না দিয়ে বলল যে, সে ভালোই আছে, খুব শীঘ্রই যখন তার প্রমোশন হবে বেতনও ভালো পাবে। এরপর অ্যালেক্সকে না জানিয়ে স্যালিও গেল তার সঙ্গে দেখা করতে। দশ পাউন্ডএর হেভিয়ার সহ তাকে খুশিই দেখা গেল।

কেন্ট তাকে জানিয়েছে যে, ওটা ছিল বিয়ার। এমন কি তার বন্ধুও আছে এখন।

স্যালি যখন ছেলের কাছে যাওয়ার ব্যাপারে বয়ান দিচ্ছিল অ্যালেক্সের কাছে তখন সে বলল, এটা তার জীবনের একটা পর্যায় বলতে পার। স্বাধীনতার স্বাদটা পেতে চাচ্ছে সে।

-আমার উদ্বেগের কারণ হচ্ছে, এটা করেই সে পেট চালাবে।

কেন্ট কোথায় থাকে তা বলেনি। পরের বার স্যালি যখন তার কাছে গিয়েছিল, এটা বলতেই যে সে যেন কাজটা ছেড়ে দেয়। সে এটা ভেবে লজ্জা পাচ্ছিল, যে মুখে পরিতৃপ্তির হাসি ধরে রাখার ব্যাপারটা ধরা পড়ে যাবে। যে কর্মচারীটির সঙ্গে সে কথা বলছিল কেন্ট কোথায় গেছে সে ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করেনি।

তিন বছর পর সে চিঠি লিখেছি। তার চিঠি পোস্ট করা হয়েছিল ক্যালিফোর্নিয়ার নিডলস থেকে। কিন্তু সেখানে গিয়ে তাকে খোঁজাখুঁজি করতে মানা করে দিয়েছে। সে ব্লেঞ্চের মতো সরে গেছে কেবল।

অ্যালেক্স বলল, মরার ব্লেঞ্চটা আবার কে?

স্যালি জানালো, ও কিছু না, মজা করেছে।

কেন্ট কোথায় আছে আদৌ কাজ-কর্ম করছে কি না বা কোনো সম্পর্কে জড়িয়েছে কিনা তার কিছুই জানায়নি। আগাম কিছু না জানিয়ে দীর্ঘ সময়ের জন্য বাবা-মাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য ক্ষমা-টমা চায়নি, তারা কেমন আছে, তার ভাই-বোন কেমন আছে তাও কিছু জানতে চায়নি। তার বদলে লিখেছে নিজের জীবনের ব্যাপারে। তার জীবনের বাস্তব কোনো দিক নয়- কিন্তু কী সে বিশ্বাস করে, কী তার করা উচিত বা কী করছে এসব।

ব্যপারটা আমার কাছে হাস্যকর মনে হচ্ছে, অ্যালেক্স বলল, কেউ একজন আশা করছে তাদের নিজেদের কাপড়ের কোনো মোড়কে আটকে রাখবে। আমি বলতে চাচ্ছি যে, কাপড়ের মোড়ক বলতে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা ভূ-তাত্ত্বিক এবং ওসব পোশাকের ভেতর যাকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাবৎ পৃথিবীর ভেতর বাহির খুঁটিয়ে জানার সুযোগ যখন দেওয়া হয়েছে আমাদের এবং কোনো একটি পথে জীবন যাপনের জন্য তা দেহগত বা আধ্যাত্মিক এবং সৌন্দর্যের পুরো সীমানা জুড়ে মানব জীবনের দুরবস্থা- আনন্দ আর গণ্ডগোলের ভেতর দিয়েই। এভাবে আমাকে মেলে ধরাটা তোমার কাছে বোঝা মনে হতে পারে। কিন্তু একটা জিনিস শিখেছি আর তা হলো মেধার মূল্য দিতে।

সে নেশাগ্রস্ত। অ্যালেক্স বলল, তুমি এ নিয়ে লম্বা ফিরিস্তি দিতে পার। কিন্তু আমি বলব যে, নেশা তার মাথাটাকে বিগড়ে দিয়েছে। মধ্যরাতে সে আবার সেক্স সম্পর্কে বলল।

স্যালি পাশেই হাত পা ছড়িয়ে শুয়েছিল।

সেক্সের ব্যাপারে কী?

তা হলো সে যখন বলছিল কী মনে হলো তোমার- কিছু একটা হতে গেলে বা আরো কিছু যা থেকে একটা জীবন পেতে পার। কাজেই তোমার যৌনতা আর প্রতিপত্তির জন্য মূল্য দিতে পার। তা কোনো বিবেচনার বিষয় নয়।

আমার, কী রোমান্টিক! স্যালি বলল।

মৌলিক প্রাপ্তিটা খুব বেশি রোমান্টিক না। আমি বলতে চাচ্ছি সে মোটেও স্বাভাবিক না।

আবার চিঠিতে বা বকবকানিতে- কেন্ট বলেছে যে, সে অন্যদের চেয়েও ভাগ্যবান, প্রাপ্তির মধ্যে সে যাকে মরার কাছাকাছি অভিজ্ঞতা বলেছে, যা তাকে কিছুটা বাড়তি সতর্কতা দিয়েছে, যে জন্যে সে তার বাবার প্রতি চির কৃতজ্ঞ, যে তাকে ফিরিয়ে এনেছে পৃথিবীতে, মায়ের কাছে যে ভালোবাসা দিয়ে তাকে বুকে তুলে নিয়েছিল।

সে লিখেছে, সম্ভবত সে মুহূর্তগুলোতে আমার পুনর্জন্ম হয়। অ্যালেক্স গুঙিয়ে ওঠে। না, আমি তা বলছি না।

না, স্যালি বলল, তুমি তা বল নাই।

-কী যে করি! বুঝতে পারছি না।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১:১৫
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×