somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

♣ছোটগল্প: অ-নি-লা♣

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


অনিলা। আমার গার্লফ্রেন্ড। ওদের বাসায় আমি কখনই তেমন একটা যাইনা। কোন রাগ-অভিমানের কারনে নয়। যাইনা যাইনা। কোন কারন নেই। গতকালও যেতাম না, যদি না ওর মা ফোন দিয়ে এতটা জোড়াজুড়ি করতো। আন্টিকে ছুতো দিয়েছিলাম,
“আমি আমার খালার বাসায় আসছি। বাসায় ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে। আজকে তো আসতে পারবো না আন্টি।”

আন্টি প্রতি উত্তরে বললেন,

“ঠিক আছে বাবা। তুমি বরং সন্ধায়ই আসো। গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।”

শীতের দিনে বাসা থেকে বের হইনা বললেই চলে। তার ওপর আবার অনিলাদের বাসা আমাদের বাসা থেকে মোটামুটি বেশ খানিকটা দূর। রিক্সায় প্রায় আধাঘন্টা সময় লাগে। গত কয়েকদিন যাবত সূর্য মামা ছুটিতে গেছে। আর এই কয়েকদিন আমার সারাদিনের অবস্থান ছিল কম্বলের নিচে। টানা চার-পাঁচদিন পর আজকে দুপুরে রোদের দেখা মিলেছে। তবে এত সুন্দর একটা মিষ্টি রোদ দেখেও আমি মনমরা হয়ে দুপুরটা কাটিয়ে দিলাম। কারন এই সুন্দর আবহাওয়াতেই অনিলার বাসায় যাওয়া যেত খুব ভালোভাবে। কিন্তু নিজের বোকামিতে সন্ধ্যা বেলার কনকনে শীতেই আমাকে কাঁপতে কাঁপতে যেতে হলো অনিলার বাসায়। আন্টি পাঁচ মিনিট কথা বলে চলে গেলেন। অথচ আমি তাঁর গুরুত্বপূর্ণ কথার মাথামুন্ডু কিছুই বুঝলাম না। অনিলা এতক্ষণ দারিয়ে ছিল। এখন আমারপাশে বসলো। আমি বললাম,

- অনিলা! শাড়িতে তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে। সত্যিই অনেক সুন্দর লাগছে!
- ছাই সুন্দর লাগছে। (অনিলার মুখে লজ্জিত হাসি)

- অনিলা জানো? তোমার এই টিপটিপে হাসিটা দেখার জন্যই মূলত আজকে এসেছি।

অনিলা খুব চেষ্টা করছে হাসিটা লুকিয়ে ফেলতে। কিন্তু পারছে না। আমার চোখের দিকে তাকিয়ে হাসি লুকানোর ব্যর্থ চেষ্টা করছে।

- অনিলা!

- হুম বলো!

- মানুষ সবচাইতে বেশি কী করে বলতো?

- উমম...... কী করে কী করে...!

- এই সামান্য কথাটাও জানো না? শোন তাহলে। মানুষ সবচাইতে বেশি কথা বলে।

- ও হ্যা। কথা বলে।

- ধুর! কথা বলেনা। কথার চাইতে মানুষ চিন্তা বেশি করে।

অনিলা চোখ টিপটিপ করে আমার দিকে তাকাচ্ছে।

আমি বললাম,

- হাসছো না কেন? না হাসলে কথা বলবো না।

অনিলা এবার খুব ভালোভাবেই হেসে ফেললো। ওর হাসিতে আমার বুকের বাম পাশটা চিনচিন করে উঠলো।

- অনিলা!

- হুম।

- আমি সবচাইতে বেশি কী করি বলতো?

- জানিনা। (মুখ টিপে হাসছে)

- কী করি বলবো?

- হুম বলো।

- তোমাকে ভালোবাসি।

অনিলা এবার ওর অভিমানী মুখ ঘুড়িয়ে বললো,

- ছাই বাসো। বাইরে দেখা তো করবেই না। হাতেপায়ে ধরে বাসায় আসতে বললেও আসো দুই মাসে একবার। তুমি আমাকে ছাই বাসো!

এবার আমি শব্দ করে হাসতে লাগলাম। আমি জানি, আমার হাসিটা খুবই বিদঘুটে। কিন্তু তারপরেও আমার এই বিদঘুটে হাসি দেখেই অনিলা আমার প্রেমে পরেছিল। ছেলেদের হাসি দেখে যে মেয়েরা প্রেমে পরতে পারে, এইটা আমি আগে জানতাম না।

আমি অনিলাকে বললাম,

- দুষ্টু মেয়ে অনিলা। আমি তোমাকে ভালোবাসি না? এস কাছে এস। আজকে তোমাকে ভালোবাসা দেব।
অনিলার মুখ এতক্ষণে লজ্জায় রক্তিম। আমি অনিলার হাত ধরে একটা টান মেরে কোলে বসিয়ে বললাম,

“কী? ভালোবাসবো?”

অনিলা মুখটা আরও লাল করে কাঁপা কাঁপা ঠোটে আস্তে করে বললো,

“জানিনা!”

এরপর আর কিছু না বলেই আমি ওদের বাসা থেকে বেড়িয়ে আসলাম। আমি মেইন গেটটা অতিক্রম করার সময় একবার পেছনে তাকিয়ে দেখলাম, অনিলা মুখটা ভোতা করে দরজার সাথে গাল লাগিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তারপর হাটতে হাটতে চিন্তা করতে লাগলাম, শেষবার ওর চোখের দিকে তাকিয়ে কী দেখেছিলাম।

অভিমান? ভালোবাসা? নাকি অন্যকিছু?
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪৮
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কাঁচা আম পাড়ার অভিযান

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২



গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×